অভিজ্ঞতা ও সামাজসেবায় তাপস এগিয়ে, নতুন খোকন সেরনিয়াবাত
সোহেল আহমেদঃ আগামী ১২ই জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থীসহ ছয় জনের প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগর ছাপিয়ে দুই মেয়র প্রার্থীর আলোচনা দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে। এ আলোচনার কারণও রয়েছে।
জানাজায়, এবারের সিটি নির্বাচনে সরকার দলীয় মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ( খোকন সেরনিয়াবাত) মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে বরিশালের স্থানীয় রাজনীতির নানা সমীকরণ শুরু হয়। সর্বমহলে আলোচনার স্থান পায় আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি। তারপরে আবার বর্তমান মেয়রের অনুপস্থিতিতে খোকন সেরনিয়াবাতের বিরাট শোডাউন করে বরিশালে আগমন এবং নাগরিক সংবর্ধনা। যদিও নমিনেশন পাওয়ার তিনচার মাস আগেও এই প্রার্থী ছিলেন নগরীর মানুষের অচেনা। অপরদিকে গতো সিটি নির্বাচনে প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তুমুল লড়াইয়ে অবর্তীণ হলেও শেষমেশ সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হন। ইকবাল হোসেন তাপস ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করে আসছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লী বন্ধু হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের আদর্শ ধারণ করে তাপস নানা প্রতিকুলতায় জাপার রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। বরিশাল জেলা ও মহানগরের পাড়া-মহল্লায় ইকবাল হোসেন তাপসের পদচারণা ছিলো বছরের পর বছর। সূত্র জানায়, ইকবাল হোসেন তাপস, তাঁর রাজনৈতিক জীবনে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসছিলেন। তাঁর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরি করে দেয়া। তিনি চট্টগ্রাম ইপিজেড ও ঢাকার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বরিশাল মহানগর ও জেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে চাকরি দিয়েছেন। অনেক অসচ্ছল পরিবারের আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছেন। কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বরিশালে সাউথ এ্যপোলো মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ইকবাল হোসেন তাপসের নাম সবার আগে। শুধু কর্মস্থানই নয় সাধারণ মানুষ কম খরচে উন্নতমানের সেবা পাচ্ছে এই চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে। এছড়াও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে ইকবাল হোসেন তাপস নগরবাসীকে উপকৃত করে আসছিলেন। বরিশাল মহানগরের মানুষের জীবন মানউন্নয়নে বরিশাল ফরএভার লিভিং সোসাইটি নামক একটি সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন তাপস। নগরের অসহায় নারীদের টেইলারিং প্রশিক্ষণ, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের কম্পিউটার ট্রেনিং, অসচ্ছল পরিবারের রিকশা, ভ্যান প্রদান, আর্থিক সহযোগিতা সহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বহুমুখী সেবা পৌছে দিচ্ছেন মানুষের কাছে। এরফলে ইকবাল হোসেন তাপসের একদিকে বিরাট সমর্থক তৈরি হয়েছে অপরদিকে এসব সামাজিক কাজ স্থানীয়ভাবে সবার কাছে প্রশংসনীয় হওয়াতে তাপসের ব্যক্তিগতো জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে।
এবার নির্বাচনের একবছর আগে থেকেই দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন তাপস। এরপরই মানুষের দ্বারেদ্বারে ছুটে গিয়ে মেয়রপ্রার্থীতার কথা আবারও জানান দিতে থাকেন। বছরজুড়ে সভাসেমিনার করে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করেন। সাধারণ মানুষের কাছেও আস্থাভাজন হতে চেষ্টা করেন।
চলতিমাসে ইকবাল হোসেন তাপস এর বাবা মা এর দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিতে একদিনের সফরে বরিশালে আসেন দলের চেয়ারম্যান সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। তাঁর আগমনে নগড়ের বিমানবন্দর সংলগ্ন স্থানে বিশাল পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন করেন মেয়রপ্রার্থী তাপস।
এসব দিক বিবেচনা করলে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বরিশাল নগরে একেবারে নতুন মুখ। মনোনয়ন পাওয়ার তিনচারমাস আগেও কেউ তাকে চিনতেন না বলে আলোচনা আছে। কেননা তাঁর ভাতিজা বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি শক্তিশালী অবস্থানে ছিলো। সাংগঠনিক দিক থেকে সাদিক আবদুল্লাহ গড়ে তুলেছেন বিশাল কর্মীবাহিনী। যদিও তাঁর চাচা খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাওয়ার পর কিছুটা চাপে পড়েছেন মেয়র সাদিক। বিপরীতে খোকন সেরনিয়াবাত সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের অনুসারীদের সাথে প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে খোকন সেরনিয়াবাতের চেয়ে ইকবাল হোসেন তাপস রাজনৈতিক মাঠে অনেকটা ইতিবাচক পজিশনে রয়েছেন বলে মনেকরেন সচেতন মানুষ। তবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ উৎসবমুখর পরিবেশে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রত্যাশা করছেন জনসাধারণ।