ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম করেছিলেন এরশাদ
দেশের রাজনীতিতে আলোচিত নাম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেনাপ্রধান থেকে ক্ষমতা দখল। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে নয় বছরের শাসন। অতপর রাজনীতিতে টিকে থাকা। ১৯৮২ সাল থেকে টানা ৩৭ বছরের ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে তার ভালো-মন্দের নানা দিক। কোনো কোনো কাজের তীব্র সমালোচনা থাকলেও উন্নয়নসহ বেশ কিছু কাজের কথা এখনও দেশের মানুষ মনে রেখেছে।
গত ২২ জুন থেকে ৯০ বছর বয়সী দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। তিনি হিমোগ্লোবিন-স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক, খাবার হজম হচ্ছে না। লিভার পুরোপুরি কাজ করছে না। দলের পক্ষ থেকে তার ভাই জিএম কাদের তার জন্য দেশেবাসির কাছে দোয়া চেয়েছেন।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে জনগণের পছন্দনীয় যে কাজগুলো রয়েছে তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো-
১। ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম করেছিলেন।
২। শুক্রবারকে ছুটির দিন ঘোষণা করেছিলেন।
৩। মসজিদ মাদ্রাসার বিল মওকুফ করেছিলেন।
৪। টিভিতে আজান প্রচারের নিয়ম করেছিলেন।
৫। উপজেলা পদ্ধতি চালু করেছিলেন।
৬। গুচ্ছগ্রামের প্রবর্তন করেছিলেন।
৭। বলেছিলেন ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাচবে
৮। শাসনামলে দুর্নীতি, ধর্ষণ, খুন, রাহজানি, প্রকাশ্যে কোপাকুপি, এগুলো দুরূহ ছিল।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ প্রত্যুষে বাংলাদেশে সামরিক আইন জারি করে জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে দেশের কর্তৃত্ব নেন।
সামরিক ফরমান জারি করার পর জাতীয় সংসদ ও প্রেসিডেন্টসহ মন্ত্রিপরিষদ বাতিল করে সংবিধানের কার্যকরিতা স্থগিত ঘোষণা করেন জেনারেল এরশাদ। এর পর বাংলাদেশের ইতিহাসে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের।
১৯৯০ সালের এই দিনে, ৬ই ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। দিনটিকে আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’, বিএনপি ‘গণতন্ত্র দিবস’ এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলগুলো এই দিনকে ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ হিসেবেও পালন করে থাকে।
‘দেশের জন্য যা করেছি এবং আগামীতে যা করতে চাই’ জাতীয় পার্টির প্রচার ও প্রকাশনা সেল থেকে প্রকাশিত গ্রন্থে এরশাদ বলেন, এক বিপর্যস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছিল। তারপর অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে নয়টি বছর কেটে গেছে। এই সময়ের মধ্যে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার। সেখানে কতটুকু সফল হয়েছি বা বিফল হয়েছি- তার মূল্যায়ন করতে হলে পরবর্তী সময়ের সঙ্গে আমার আমলের যোগবিয়োগ করার প্রয়োজন হবে। আমার মনে হয়, দেশের মানুষ সে অঙ্কটি নির্ভুলভাবে করতে পেরেছে।
এরশাদ বলেন, ‘…আমি যেহেতু একজন সর্বক্ষণিক রাজনীতিবীদ সেহেতু আমার চিন্তা-চেতনা-ভাবনায় রাজনৈতিক প্রসঙ্গ প্রাধান্য পেয়ে থাকে। …আমি ’৯০-এর ডিসেম্বরে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং একজন প্রধান বিচারপতিকে বিশ্বাস করে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়েছিলাম। তারপর উভয়পক্ষের রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতার ফলশ্রুতিতে আমাকে জেলে যেতে হয়েছে। অতপর জনতার আদালতে আমি সুবিচার পেলেও ক্ষমতার আদালত আমাকে মুক্তি দেয়নি। একনাগাড়ে ছয় বছর জেলে দুর্বিসহ দিন কাটিয়ে বাইরে এসে দেখলাম, আমার এই একান্ত প্রচেষ্টায় গড়া এক সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ আবার তামাটে হয়ে গেছে। গত দেড় দেশকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে।
১৯৩০ সালের দুই জানুয়ারি রংপুর জেলার দিনহাটায় জন্ম নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাকে কারাগারে যেতে হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনের মধ্য দিয়ে তার কারামুক্তি হয়। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচন করে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ২০০০ সালে তার দল জাতীয় পার্টি ভেঙে তিন টুকরো হয়। এরশাদ বিরোধী আন্দো ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ডা. শামসুল আলম মিলনকে হত্যা করে পুলিশ। প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ পেশাজীবী সংগঠন দিবসটি পালন করে। এই ঘটনার মধ্য দিয়েই এরশাদের পতনের যাত্রা শুরু হয়। তথ্যসূত্র: বিবিসি, জনকণ্ঠ
সুত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি