এসিডের ক্ষত নিয়ে নারীনেত্রী রেহানা যেভাবে তিনবার সফল ভাইস চেয়ারম্যান
সোহেল আহমেদ,দৈনিক বরিশাল ২৪.কম: একজন শিক্ষানুরাগী ও দক্ষ নারী সংগঠক রেহানা বেগম। বর্তমানে তিনি বরিশাল সদর উপজেলার তিন বারের সফল মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। একই সাথে বরিশাল সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ এর সুদক্ষ ও অত্যন্ত পরিশ্রমী সাংগঠনিক নারী নেত্রী হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন।
শিক্ষা জীবন থেকেই মানবকল্যাণে নিজেকে আত্বনিয়োগ করতে মুখিয়ে ছিলেন রেহানা বেগম। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি একটি এনজিওতে কাজ করতেন,জড়িয়ে পরেন ছাত্রলীগের রাজনিতীতেও। পেশাগত দ্বায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার ছিলো প্রবল ইচ্ছাশক্তি।
আর তাই সমাজের কুসংস্কার নারী ও পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনতে সেচ্ছায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করতেন। শুধু শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, এর সাথে প্রয়োজন সমাজকল্যাণ। রেহানা বেগম এই সমাজ কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসী কতৃক এসিড সন্ত্রাসের কবলে পড়েন।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে তিনি বি এ পাশ করে খুলনা বিএল কলেজে ভর্ত হন। এসব ২০০১ সালের কথা। খুলনা বিএল কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে পদার্পণ্। সেখান থেকেই যুব মহিলা লীগের সাথে তিনি সম্পৃক্ত হয়ে যান। তারপরের ইতিহাস শুধুই সফলতার।
খুলনা থেকে এম এ পাশ করে রেহানা বেগম চলে আসেন নিজ গ্রামে। রেহানা বেগম বরিশাল সদর উপজেলার চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের বর্তমানে কাউনিয়া থানার কাগাশুরা গ্রামের মুন্সিবাড়ির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা আবদুল গনি মিয়া সাবেক সরকারি অফিসার ছিলেন।
খুলনা থেকে এমএ পাশ করা রেহানা বেগম নিজ গ্রামেই প্রতিষ্টিত ঐতিহ্যবাহি কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। গ্রামের দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি উদ্যোগ নেন। টাকার অভাবে যেসব শিশুরা পড়তে পারেনি তাদেরকে তিনি বিনা মূল্যে স্কুলে পড়ার সব ব্যবস্থাই করে দিতেন। এভাবেই নিজ এলাকায় মানবকল্যাণে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে রেহানা বেগমের।
একদিন শুনলেন এলাকায় কোন এক প্রগ্রামে বরিশালের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক এ্য.শওকত হোসেন হিরণ আসবেন। খবর পেয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে রেহানা বেগম শত শত নারীদের নিয়ে হিরণ সাহেবের সামনে উপস্থিত হলেন। তখন অবশ্য বরিশালের রাজনিতীতে আওয়ামী লীগ এর বেশ খড়া চলছিলো।
রেহানা বেগমের সাংগঠনিক তৎপরতা দেখে মেয়র হিরণ সন্তষ্ট হলেন। রেহানা বেগমকে অনুপ্রেরনা দিলেন দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে । সেই থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে বরিশালে শিক্ষীকা রেহানা বেগমের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। বেড়ে যায় দলের জন্য কর্মী সংগ্রহের গুরু দ্বায়িত্ব।
নিজ দলের প্রতি অনুগত এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে রেহানা বেগম এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে , নিজ ইউনিয়ন থেকে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চষে বেড়িয়েছেন। মানুষও তার কথায় অনুপ্রানিত হয়ে দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। দলীয় ছোট বড় সব ধরনের সভা সেমিনারে যোগদান করেছেন সকাল বিকাল রাত অবধি।
তার এসব দৃশ্যমান কাজের দক্ষতা দেখে বরিশাল আওয়ামী লীগ এর হাই কমান্ড খুশি হয়। রেহানা বেগমই বরিশালের অন্যতম নারী নেত্রী এমন পরিচিতি প্রদান করেন নেতারা। খুলে যায় রেহানার ভাগ্যরে চাকা।
এসিড সন্ত্রাসের কালো ক্ষত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত নারী নেত্রী রেহানা বেগম ২০০৯ সালে সদর উপজেলা নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের টিকিট পেয়ে যান। সেই নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে তিনি বরিশালের প্রথম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মজার ব্যপার হল সেসময় দলীয়ভাবে আর কেউই জয়লাভ করতে পারেননি।
এবার জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের প্রতি তার সেবায় গতি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি উপজেলার প্রতিটি অসহায় পরিবারের চাওয়া পাওয়া বেড়ে যায়। সাধ্যের মধ্যে থেকে যাকে পেরেছেন সহযোগীতা করেছেন। নারী নেত্রী রেহানা বেগম জনসেবায় কাজ করলেও সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধিতে তার পিছুপা হতে হয়নি।
দক্ষিন বাংলার রাজনৈতিক অভিভাবক সাবেক সফল হুইফ বর্তমান মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র পত্নী শাহানারা আবদুল্লাহর অনুপ্রেরনায় রেহানা বেগম দলের জন্য কাজ চলমান রাখেন। যে কারণে সাবেক মেয়র হিরণের মৃত্যুর পরেও এ অঞ্চলের দলের সাংগঠনিক শক্তির শুন্যতা সৃষ্টি হয়নি। শাহানারা আবদুল্লাহর দিক নির্শনায় রেহানা বেগম দলের যে কোন সভা সেমিনার সহ নারী বিষয়ক সব ধরনের কার্যক্রম অথ্যন্ত দক্ষতার সাথেচালিয়ে যাচ্ছেন ।
রাজনৈতিক প্রতিভা আর সঠিক পথ প্রদর্শক পেলে যে একটি দূর্বল সংগঠন জেগে ওঠে তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই রেহানা বেগম। রেহানা বেগম বর্তমান পর্যন্ত তিন বারের নির্বাচিত সফল জনপ্রতিনিধি। একই সাথে বরিশাল সদর উপলো মহিলা লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। বরিশাল মহিলা ক্লাবের সদস্য হিসেবে যুক্ত আছেন।
তার নিজস্ব প্রচেষ্টায় রেহানা বেগম শিশুকল্যাণ নামেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারী উন্নয়নের অধিকার নামে রয়েছে তার একটি বেসরকারি সংস্থা। এছাড়াও দির্ঘ্য রাজনৈতিক জীবনে নানা ধরনের সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে তিনি তার কর্মদক্ষতা মানবকল্যাণে তুলে ধরেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে “দৈনিক বরিশাল ২৪.কম-এর প্রতিবেদকে বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমার লক্ষ্যই ছিলো সমাজসেবায় কাজ করা। মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে কোন না কোন মুরুব্বির পরামর্শ প্রয়োজন হয়।
তিনবারের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পেছনে সাবেক মেয়র হিরণের কথা স্মরন করে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শাহানারা আবদুল্লাহর যৌথ অনুপ্রেরনার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন রেহানা বেগম। অপর দিকে বরিশাল সিটি মেয়র সেরননিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ-কে শতভাগ সফল মেয়র বলে উল্লেখ করে রেহানা বেগম বলেন,তিনি (মেয়র) পারবেন আধুনিক বরিশালের জনগণের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা পূরণ করতে।