কারিগরি শিক্ষায় নিবেদিত তরুণ ময়মনসিংহের তৌহিদুজ্জামান

মায়ের সম্মতিতে ভর্তির আগেই পরিদর্শন করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ময়মনসিংহ। মনের চাওয়াগুলো যেন সেখানেই পেয়ে যায় তৌহিদ। টিটিসি ময়মনসিংহে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে জিপিএ-৫.০০ পেয়ে এস.এস.সি. উত্তীর্ণ হয়।
পরবর্তীতে ডিপ্লোমা কোর্সে ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াশোনার সুযোগ হয়। নতুন পরিবেশে নিজেকে খুঁজে নিয়ে নতুন মাত্রায় যখন পথচলা তখন পারিপার্শ্বিক বেশ কিছু অবস্থার কারণে পরিবারের অনুরোধে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে স্থানান্তর হন। কোর্স সম্পন্ন করার পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এস.সি. ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যায়ন শুরু করেন তৌহিদ। পাশাপাশি জাতীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক কাঠামো’র চারটি লেভেল সম্পন্ন করে অর্জন করেছেন জাতীয় দক্ষতা সনদ।
শিক্ষকতা যেন তৌহিদের নিত্য নেশা। ডিপ্লোমা কোর্স চলাকালীন সময় থেকেই বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে পাঠদানের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। মোমেনশাহী টেকনিক্যাল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে দীর্ঘদিন শিক্ষাকতার পর বর্তমান অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ) এর ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বাকাশিবো)’র একজন অ্যাসেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
যেসব ছেলে সারাদিন ঘুরে বেড়াতে অব্যস্ত ছিল সেসব ছেলেদের পড়াশোনায় আকৃষ্ট করে কারিগরি শিক্ষার ছায়াতলে এনে দক্ষ নাগরিক বানানোর চেষ্টার কমতি নেই তৌহিদের। নিজের অর্থ খরচে ভর্তি করেছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। ছোটবেলায় পড়াশোনার হুসেব চুকিয়ে বাড়ি ছেড়ে কর্মজীবী হয়ে উঠা ব্যক্তিকেও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ভর্তি করিয়েছিলেন একজনকে।
সেখানে সফলতার হাসি উদয়ও হয়েছে। সে ব্যক্তিটি আজ স্টিল ও ফার্নিচার বিষয়ক একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের একজন সফল মালিক। মাধ্যমিকের আগেই পড়াশোনা থেকে ঝড়া পড়া আরেক কিশোরকে ভোকেশনাল বিভাগে ভর্তি করে সুযোগ মতো নিজে পড়িয়ে ফিরিয়ে এনেছেন আবারও শিক্ষার আলোয়। এ ছেলেটি এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে।
এসবের পাশাপাশি বর্তমানে যখন ফেসবুক যোগাযগের বৃহৎ প্লাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে সহজেই অবগত করা যায়। সোস্যাল সাইটসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন তৌহিদ। তার উদ্দ্যেশ্য কারিগরি শিক্ষা নিয়ে যেন সকলের মাঝে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয় এবং এ শিক্ষায় শিক্ষিত কেউ যেন কর্মহারা না থাকে। সেজন্য প্রতিনিয়ত চাকুরী বিজ্ঞপ্তি কিংবা বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি সংগ্রহ করে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেন। এ বিষয়টি থেকে অনেকেই উপকৃত হওয়ার কথাও জানায় ফেসবুক টাইমলাইনে।
এরকম সহযোগীতামূলক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথেও জড়িত আছে তৌহিদুজ্জামান তৌহিদ। তৌহিদ একজন রক্তদাতাও বটে। তৌহিদের ভাষ্যে, “আমি তো সব গ্রুপের মানুষকে রক্ত দিতে পারব না, আর এক রক্তদানের পর আরেকবার দেওয়ার মাঝে একটা দীর্ঘ সময় যায়। তবে, কারও রক্ত প্রয়োজন হলে আমি চেষ্টা করি ঐ গ্রুপের দাতা খোঁজতে। রক্তদানের আনন্দই আলাদা!” ছুটিতে যখন বাড়িতে থাকেন তখন নিজ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িত থাকে। ছোট ছোত ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটাতেই বেশি ভালোবাসে তৌহিদ। কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক লেখালেখির পাশাপাশি তার কলম থেকে এসেছে বেশ কয়েকটি ছড়া-কবিতা ও চমৎকার একাধিক ছোট গল্প।
ভিন্ন প্রতিভাধর তৌহিদুজ্জামান তৌহিদ স্বপ্ন দেখে এক সুন্দর আগামীর, কারিগরি শিক্ষায় স্বাবলম্বী একটি জাতির। তৌহিদ তার স্বপ্ন নিয়ে বলে- “আমি আমার এলাকায় একটি বেকার যুবকদের জন্য টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার চালু করতে চাই। যেখানে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। তাদেরকে বেকারত্বের অভিশাপ দূর করে দক্ষ নাগরিক হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চাই। যেহেতু আমি এখনও যথেষ্ঠ স্বাবলম্বী হই নি, সেহেতু এ বিষয়ে সমাজের বিত্তশালী ও সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”