জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট

অনলাইন নিউজ: আসন্ন ঈদ উল আজহা উপলক্ষ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে বগুড়া অঞ্চলের হাটগুলো। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন হাটে চলে কোরবানির গরু কেনাবেচা। বগুড়ার মহাস্থান হাটে দেশী গরুর পাশাপাশি বিদেশী বিভিন্ন জাতের গরুর সমাগম ঘটে। ৩০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দামের গরু কেনাবেচা হয়।
শুক্রবার শহরের নিকটবর্তী সুলতানগঞ্জ হাট, পল্লীমঙ্গল, জয়বাংলা হাটে দেশী জাতের গরুসহ ছাগল বেচাকেনা হয়েছে। হাট ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় খামারীরা গরু বিক্রি করছে।
বগুড়া শহরের সাবগ্রাম বাজার এলাকায় প্রায় ৩০ শতক জায়গার উপর স্থাপন করেছেন গরুর খামার। প্রতি বছর ঈদ উল আযহাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি গরু পালন করেন খোরশেদ আলম চঞ্চল (৩৭)। ফেসবুকে তার নিজের আইডি ও পেজে গরুগুলোর ছবি পোস্ট দেন।
পোস্টে গরুর বিবরণ হিসেবে গরুর বয়স, কয় দাঁত, ওজন কত, গরুর জাত উলেখ করেন। এতেই ক্রেতারা আকৃষ্ট হন। বিগত বছরের ন্যায় এবারও চঞ্চল তার গরুগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে সাড়া পেয়েছেন। তার পেজের নাম জাহাঙ্গীর এগ্রো। এখানে সকল গরুর বিবরণ তথ্য সহ উপস্থাপন করা থাকে।
চঞ্চলের খামারে রয়েছে পাকিস্তানি শাহীওয়াল, ফিজির ফ্রিজিয়ান, বাংলা কলকাতা ক্রস, ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের লম্বা শিংওয়ালা হরিয়ানা, ভারতের মরুভুমির সাদা লাল রাজস্থানী, আমেরিকার ব্রাহামা ক্রস, আমেরিকান ব্রাহামা বাংলা ক্রস, ভারতের উলবাড়া অঙ্গলা সহ নানা প্রজাতীর মাংসল গরু।
এসব গরুর পিছনে প্রতিদিন তার খরচ হয় প্রায় ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। চঞ্চলের খামারে এবারে গরুর দাম সাড়ে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকার মধ্যে।
এরমধ্যে ভারতের উলবাড়া অঙ্গলার ওজন ৭০০ কেজি তার বিক্রি হয়েছে হয়েছে ৫ লাখ টাকায়, ভারতের উলবাড়া অঙ্গলা বিক্রি হয়েছে ৭৫০ কেজি ওজনের বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ টাকায়, পাকিস্তানি শাহীওয়াল বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকায়, ফ্রিজিয়ান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৭০০ কেজি ওজনের বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায়, ভারতের লম্বা শিংওয়ালা হরিয়ানা বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ টাকায় ।
এলাকায় আরও বেশ কিছু গরুর ফার্ম হয়েছে জানা যায়। এবং তাদের গরুর ফার্ম করার উৎসাহ যুগিয়েছেন চঞ্চল। চঞ্চল আগামীতে বছরে ১০০টি গরু পালনের জন্য চেষ্ঠা করছেন।
কোরবানিকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছে গরুর খামারীরা। জেলার ২৬ হাজার খামারি এখন কোরবানির হাটকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নিজেদের খামারের গরু, ছাগল, ভেড়া সহ কোরবানির প্রাণী হাটে তোলা শুরু করেছে। অনেকে বাড়ী থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করছে বলে জানা গেছে। বগুড়ায় কোরবানির জন্য পশু চাহিদা ৩ লাখ ৪৭০টি আর পালন হয়েছে প্রায় পৌনে ৪ লাখ।
এদিকে বগুড়ার হাটগুলোকে কেন্দ্রে করে মৌসুমী গরুর ব্যাপারীদের আনাগোনা বেড়েছে। গরুর ব্যবসায়ীরা গরু এক জেলা থেকে অন্য জেলার হাটে বিক্রি করে থাকে।। গত বছর বগুড়ার হাটগুলোতে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরের ব্যবসায়ীদের গরু ক্রয় করতে দেখা গেছে। জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ হাট বগুড়ার মহাস্থানগড় গরুর হাট।
এই হাটের সাথে, ঘোড়াধাপ, সুলতানগঞ্জ হাট, শেরপুর হাট, সাবগ্রাম হাট, জয়বাংলা হাট, কালীতলা, পেরী হাট, নামুজাসহ প্রায় শতাধিক স্থানে হাট বসে। এই সব হাটে স্থানীয়ভাবে যেমন কোরবানির পশু কেনাবেচা হয় ঠিক তেমনি অন্য জেলার জন্যও পশু কেনাবেচা হয়।
বগুড়ার খামারীরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে কোরবানি উপযোগী পশু লালন পালন করে লাভের আশা করছেন। খামারীরা দেশী জাতের প্রচুর গরুর লালন পালন করেছে। বগুড়া জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, জেলায় এবারও কোরবানির হাট কিছু দিনের মধ্যে জমে উঠবে। খামারে এবার প্রচুর পরিমানে দেশীয়জাতের গরু পালন করা হয়েছে।
খামারে লালন পালন করা গরুর সংখ্যা বেশি হবে। এবছর গরু ২ লাখ ৯৩ হাজার ৬২টি, মহিষ ২ হাজার ৪৮টি, ছাগল দেড় লক্ষাধিক, ভেড়া সাড়ে ২৬ হাজার নিয়ে মোট গবাদিপশু রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৮টি। মোট খামারী রয়েছে ২৬ হাজার ৯৩০ জন।
বগুড়া জেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার। গত বছর কোরবানী দেয়ার সংখ্যা ছিল সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪০৫টি। তিনি জানান, জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু লালন পালন হয়। বাড়তি পশুগুলো বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। সবচেয়ে বেশি যায় ঢাকায়। এছাড়া চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেটে যায় কোরবানীর পশু। বগুড়াবাসী দেশীয় পশু দিয়েই তাদের কোরবানির কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলে এই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।