জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী নেতা ইকবাল হোসেন তাপস

সোহেল আহমেদঃ জাতীয় পার্টির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদ বিরোধী নেতা ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। ১২ মার্চ বুধবার পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে ইকবাল হোসেন তাপস চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগর জাপার সদস্য সচিব হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
জাপার নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের তথ্যমতে জানা যায়, বিগতো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সাংগঠনিকভাবে দলটি কোনঠাসা হয়ে পড়ে। দলের বৃহৎ একটি অংশের নেতারা যখন সরকারের বিশেষ সুবিধা নিয়ে দলকে নাজুক অবস্থায় নিয়ে গেছে, ঠিক তখনই ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হয়ে ব্যপক আলোচনায় আসেন বরিশালের একসময়ের ছাত্রনেতা ইকবাল হোসেন তাপস।
তৎকালীন জাপা চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের নিকট থেকে নমিনেশন প্রাপ্ত হয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হন তাপস। আওয়ামী লীগ সভাপতি ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার আপন ফুপাতো ভাই এর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহর বিপক্ষে নির্বাচনে মাঠে নেমে ইকবাল হোসেন তাপস অনেকটা বিপাকে পড়ে যান। জাপার সে সময়কার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার সহ হেভিওয়েট কোনো কেন্দ্রীয় নেতাই তাপসের পক্ষে বরিশালে প্রচার অভিযানে আসেননি। অপরদিকে বরিশালের একটি অংশ সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে কাজ করে। এ-তো বাঁধা বিপত্তি থাকার পরেও ইকবাল হোসেন তাপস ভোটারদের সাথে দৃড় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নির্বাচনী মাঠে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবেন বলে সাফ জানিয়ে দিলেও কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার এর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
পার্টির বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়ে একাই নির্বাচনী মাঠ গরম রাখেন বরিশালের তরুণ এই নেতা। যদিও সেসময় ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ মাথায় নিয়ে মেয়র হন ফ্যাসিষ্ট হাসিনার আপন ফুপাতো ভাই এর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ। ওই নিবার্চনে প্রতিটি কেন্দ্রের ভোট জালিয়াতি গণমাধ্যমে সরাসরি তুলে ধরেন ইকবাল হোসেন তাপস। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখে বরিশাল সহ গোটা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সাহসী নেতা হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মানুষের যে, সকালে এক কথা আর বিকেলে আর এক কথার যে অপবাদ ছিলো, ইকবাল হোসেন তাপস মেয়র নির্বাচনে মাঠে নেমে ভোটারদের সেই ধারণা বদলে দিয়েছেন। কতিপয় দালালদের জন্য পার্টির যে বদনাম সৃষ্টি হয় দলের চেয়ারম্যানকে তা হাতে কলমে বোঝাতে সক্ষম হন তাপস।
সূত্র জানায়, গেলো নির্বাচনে ২য় বার বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হন তাপস। এবার লড়াইয়ে নামেন ফ্যাসিষ্ট হাসিনা’র আপন ফুপাতো ভাই আবুল খায়ের খোকন আবদুল্বিলাহর বিপক্ষে। হাসিনা সরকারের নানা অনিয়ম দূর্নীতি তুলে ধরে সমালোচনা করে বিপুল জনসমর্থন সৃষ্টি করেন। তাপসের নির্বাচনী প্রচারণায় এসে চকমকে যান জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ( জিএম কাদের)। এক তাপস কিভাবে একটা ভঙ্গুর পার্টিকে সবল করে হাজার হাজার নেতাকর্মী সৃষ্টি করলেন সেই আলোচনা শুরু হয় জাপার ভেতরে বাইরে। বিশাল শোডাউন দেখে জাপার দালাল চক্রের নেতারা ক্রমেই নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন হন। আর মেয়র নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে ভোট জলিয়াতি, দখলবাজী, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা সহ আওয়ামী লীগ সরকারের পাতানো নির্বাচনের অনিয়ম গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। নির্বাচন পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে করে হাসিনা সরকারের আমলে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিবেন না বলে জানিয়ে দেন। যেই কথা সেই কাজ। গতো বছরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তিনি আর অংশ নেননি। ফলে বরিশাল তথা দক্ষিণ অঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইকবাল হোসেন তাপস হয়ে ওঠেন গণমানুষের নেতা।
গতো ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিষ্ট বিরোধী নেতা ইকবাল হোসেন তাপস মানুষের কাছে বাস্তবতাবাদী রাজনীতিক হিসেবে উপস্থিত হন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই একনিষ্ঠ ভাবে সমর্থণ দিয়ে তার প্রতিষ্ঠিত বরিশাল ফর এভার লিভিং সোসাইটির মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনে সহযোগিতা করে প্রসংশা অর্জন করেন।