ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে নতুন সংযোজন এমভি ‘কুয়াকাটা-২’
অনলাইন নিউজ: ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে এবার নতুন সংযোজন বিলাসবহুল এমভি ‘কুয়াকাটা-২’ নৌ-রুটখ্যাত ডলার ট্রেডিং করপোরেশনের । সব ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন ঈদ মৌসুমে যাত্রী টানবে লঞ্চটি।
আগামী ৩১ জুলাই (বুধবার) অথবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহের যেকোনো দিন ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রীসেবায় যুক্ত হবে লঞ্চটি।
বিলাসবহুল লঞ্চটিতে প্রথমবারের মতো সর্বাধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। যার মধ্যে স্যাটেলাইট অ্যান্টেনার মাধ্যমে টেলিভিশনে সরাসরি দেড়শ চ্যানেল দেখতে পারবেন যাত্রীরা।
পাশাপাশি প্রযুক্তি নির্ভর লঞ্চটিতে যাত্রীদের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা, বাচ্চাদের স্পোর্টস জোন, রেস্টুরেন্ট, ইন্টারকমে যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
চারতলাবিশিষ্ট এ লঞ্চের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কেবিনের যাত্রীদের জন্য রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা, সেখানে যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক চেয়ার।
আর লঞ্চটির ভিন্নতা ও আকর্ষণীয় দিকের মধ্যে রয়েছে লঞ্চের ভেতরে একতলা থেকে আরেকতলায় যাওয়ার সিঁড়িগুলোতে যুক্ত করা এলইডি টিভি ও বাতি।
লঞ্চটির আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া আধুনিক ঝাড়বাতিসহ বিভিন্ন ধরনের বাতি।
তবে এখানে সমসাময়িক লঞ্চে ব্যবহৃত বাতি না লাগিয়ে ফিতা বাতি, শেড লাইট, ফোকাস ও হ্যালোজেন লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।
আলোকসজ্জার পাশাপাশি পুরো লঞ্চ, বিশেষ করে কেবিন ও করিডোরে চোখ ধাঁধানো কাঠের কারুকাজ দেখে যে কারও মনকে বিমোহিত করবে।
আর আলোসজ্জার কারণে রাতে লঞ্চটিকে ভাসমান বিলাসবহুল তারকা হোটেল বললে ভুল হবে না।
পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ২৭০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যে আর ৪৪ ফুট প্রস্থের এ লঞ্চটির নির্মাণে কাঁচামাল ইস্পাতের তৈরি নতুন পাত বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।
দু’স্তরবিশিষ্ট স্টিলের মজবুত তলদেশ থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে লঞ্চডুবির আশঙ্কা নেই। আবার ডেকের তলদেশে পৃথক কম্পার্টমেন্ট বা হাউজ সিস্টেম করা হয়েছে।
যাতে দুর্ঘটনায় তলদেশের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপর অংশে পানি প্রবেশ না করতে পারে এবং লঞ্চটি নিরাপদে চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।
জাপানের তৈরি ১ হাজার ৯২০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিনের কারণে লঞ্চটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ নটিক্যাল মাইল বেগে ছুটতে সক্ষম হবে।
এছাড়া লঞ্চের সামনে ও পেছনে দুটি ইকোসাউন্ডার বসানো হয়েছে। যাতে পুরো লঞ্চের তলদেশে পানির পরিমাণ সঠিকভাবে জানা যায়।
লঞ্চটিতে রাডারসহ লঞ্চ চালনায় আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি দেড় হাজারের বেশি যাত্রী বহন করতে পারবে এবং পর্যাপ্ত পণ্যও পরিবহন করতে পারবে।
যাত্রীদের নিরাপত্তায় লঞ্চে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, লাইফ জ্যাকেট-বয়াসহ পানিতে ভেসে থাকার আধুনিক সরঞ্জাম থাকছে।
লঞ্চে এসি/নন এসি মিলিয়ে ৫৮টি ডাবল, ৮৬টি সিঙ্গেল কেবিনের পাশাপাশি চারটি ভিআইপি, তিনটি সেমি-ভিআইপি এবং তিনটি ফ্যামিলি কেবিন রয়েছে।
প্রতিটি কেবিন দৃষ্টিনন্দন বিলাসবহুল আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। ভিআইপি কেবিনগুলোকে সাজানো হয়েছে চার তারকা হোটেলের আদলে।
এছাড়া ডেকের যাত্রী থেকে শুরু করে লঞ্চের সব শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা। ডেকের যাত্রীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা, রয়েছে বিনোদনের জন্য এলইডি টেলিভিশনের ব্যবস্থা।
ডলার ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক আবুল কালাম খান বাংলানিউজকে বলেন, কুয়াকাটা-২ লঞ্চটি তৈরির সময় যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
যেটিতে আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিতের পাশাপাশি নিরাপদে সঠিক সময়ে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। তিনি বলেন, এরইমধ্যে লঞ্চের ট্রায়াল বা নদীতে চালিয়ে পরীক্ষা করার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) বেলা ১২টায় ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চে দোয়া-মিলাদ হবে। আশা করি আগামী ৩১ জুলাই সদরঘাট থেকে লঞ্চটি বরিশালের উদ্দেশ্যে প্রথম যাত্রা করবে। বিলাসবহুল হলেও সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া এ রুটের অন্যসব নৌযানের মতোই থাকবে।