নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন প্রিয়া সাহা
অনলাইন নিউজ : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়া সাহা। আমেরিকায় এক সাংবাদিককে দেয়া প্রিয়া সাহার ৩৫ মিনিটের সাক্ষাৎকারটি রোববার ইউটিউবে প্রকাশ করেছে ঢাকায় তারই এনজিও ‘সারি’। সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
সাংবাদিক : তিন কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু ‘নিখোঁজ’ হওয়ার এ পরিসংখ্যান কোথায় পেয়েছেন?
প্রিয়া সাহা : সরকারি পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য পেয়েছি। ২০০১ সালের পরিসংখ্যানে সংখ্যালঘুদের ওপর একটি চ্যাপ্টার রয়েছে। সেনসাস (আদম শুমারি) অনুসারে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ২৯.৭ শতাংশ। এখন তা কমে ৯.৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত ২০১১ সালে গবেষণা করে দেখিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ জন সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের লোক হারিয়ে যাচ্ছে। ওই গবেষণা কাজের সঙ্গে আমিও জড়িত ছিলাম। সুতরাং আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত।
সাংবাদিক : নিখোঁজ হওয়া বলতে কী বুঝিয়েছেন?
প্রিয়া সাহা : সংখ্যালঘুদের শতকরা ভাগ যদি এখনও একই রকম থাকতো তাহলে বর্তমানে তাদের সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখের বেশি হতো। সেটাই আমি বলতে চেয়েছি।
সাংবাদিক : এ মানুষগুলো কোথায় গেছে?
প্রিয়া সাহা : আপনি একজন সিনিয়র সাংবাদিক, সচেতন মানুষ, সব সচেতন মানুষ জানেন কোথায় গেছে, কী হয়েছে। আমার গ্রামে ২০০৪ সালে ৪০টি হিন্দু পরিবার ছিল, যা কমতে কমতে ১৩টিতে দাঁড়িয়েছে। আপনাদেরই তা দেখার কথা, রাষ্ট্রের দেখার কথা। ২০০৪ সালে আমার বাড়িও পুড়িয়ে দেয়া হয়, আমার পরিবারের বহু জমিজমা স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হাতিয়ে নেন।
সাংবাদিক : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কী বলেছিলেন?
প্রিয়া সাহা : বাংলাদেশ থেকে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নিখোঁজ হয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। আমি জমি হারিয়েছি, আমার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
সাংবাদিক : কীভাবে ওয়াশিংটনে গেলেন?
প্রিয়া সাহা : মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আমন্ত্রণে খুব অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে আমি সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমেরিকায় যাই। ওই অনুষ্ঠানের মাঝে হঠাৎ করেই আয়োজকদের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার কথা বলা হয়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাইনি এবং সংগঠনের নেতারাও আমার সফরের কথা জানেন না।
সাংবাদিক : দেশে ফিরবেন?
প্রিয়া সাহা : গ্রিন কার্ড পেতে কি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করার প্রয়োজন হয়? আমি বহুবার আমেরিকায় এসেছি। আমি কেন দেশ ছাড়বো? আমি তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বলেছি যে আমি দেশে থাকতে চাই। ওটাই আমার প্রথম কথা এবং শেষ কথা।
সাংবাদিক : দেশে ফিরবেন আর?
প্রিয়া সাহা : অবশ্যই।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) হোয়াইট হাউসে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।
প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’
এরপর তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’
ভিডিওতে দেখা গেছে, একপর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীল হয়ে এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। প্রিয়া সাহা আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার কথোপকথন প্রকাশ পেলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
সূত্র : বিবিসি বাংলা