প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদী
অনলাইন নিউজ: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র খননে প্রথম পর্যায়ে ৯০ কিলোমিটার নদের পরীক্ষামূলক ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে এ কাজ শুরু হয়। এতে এক সময়ের খরস্রোতা নদটি আবারো প্রাণ ফিরে পাবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, ১০০ মিটার প্রশস্ত করে ও শুকনো মৌসুমে ১০ ফুট গভীরতা হিসেবে ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটার খননে মোট ৮.৮ কোটি ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হবে।
ময়মনসিংহ শহরতলীর চর নিলক্ষীয়া এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওটিবিএল’র একটি ড্রেজার দিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হয়। আগামী মাসের শুরুতে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সদস্যরা আনুষ্ঠানিভাবে উদ্বোধনের পরই পুরোদমে চলবে ড্রেজিং কাজ। এদিকে খনন করা মাটি কোথায় রাখা হবে তার সুনির্দিষ্ট জায়গা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এর আগে নদটিতে নৌচলাচল স্বাভাবিক করতে ও নাব্যতা ফেরাতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের পোল্লাকান্দি থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার খননের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়।
জামালপুর ইপিজেডের অধিকাংশ মালামাল ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে পরিবহন করা হবে। এ নৌপথ দিয়ে আসাম থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ-ময়মনসিংহ-টোক-ভৈরব-চাঁদপুর-বরিশাল-মংলা-আংটিহারা হয়ে ভারতের কলকাতার হলদিয়া বন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার টন ওজনের পণ্যবাহী কার্গো চলাচল করবে। সেই সঙ্গে পর্যটনবাহী ছোট জাহাজও চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে খুব সহজে এবং কম খরচে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা হবে।
বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যাবে, মিঠা পানিতে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়বে, নদের আশপাশে সারা বছর সেচ সুবিধা পাবে, নদপাড়ের মানুষ বন্যার হাত থেকে রক্ষাসহ নানা সুফল পাবে জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, কুড়িগ্রাম ও কিশোরগঞ্জের দুই কোটি মানুষ।
প্রকল্প পরিচালক রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ নামের প্রকল্পের মধ্যে ২ হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলেমিটার ড্রেজিং কাজের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিআইডব্লিউটিএ। প্রথম পর্যায়ে টোক থেকে ৯০ কিলোমিটার ৮টি প্যাকেজে ড্রেজিং করা হচ্ছে। বাকিগুলো দু-এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহবান করা হবে। ব্রহ্মপুত্রকে আবারো প্রাণ ফেরাতেই এই পরিকল্পনা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ওই প্রকল্পের কাজ শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের পল্লীকান্দি থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পর্যন্ত ২২৭ কিলোমিটার এবং ১০০ মিটার প্রশস্ততায় নৌপথটি খননের ব্যবস্থা এ প্রকল্পে ধরা হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পে ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগকারী শাখা ঝিনাই নদীর জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা থেকে দাদভাঙ্গা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার খনন কাজও এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত আছে।
খননের ফলে শুধুমাত্র ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা বাড়বে না বরং শুষ্ক মৌসুমে ঝিনাই, বংশী, বানার, শীতলক্ষ্যা নদীতেও পানি প্রবাহ বাড়বে। এছাড়া নদীগুলোর নৌপথ দিয়ে সারা বছর দ্রুত এবং কম খরচে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত হবে। নৌপথে কার্গো চলাচলের মাধ্যমে পরিবহন অনেকাংশে কমানো যাবে। বন্যার সময় নদী তীরবর্তী ফসলি জমি ও স্থাপনা ভাঙন কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। ফলে মৎস্য সম্পদ ও সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এতে নারীসহ সবার কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। ফলশ্রুতিতে নারী ও শিশুদের জন্যও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।