ফেসবুক থেকে যে ভাবে আয় করবেন
ফেসবুক পেজ থেকে কীভাবে ইনকাম করতে হয়? আসুন, ফেসবুকের মাধ্যমে ইনকামগুলো দেখি: ইনকাম-১: ধরি, আপনার পেজ থেকে নারীদের জন্য ড্রেস বিক্রি করবেন। কী করবেন?: একটা পেজ তৈরি করবেন। তারপর সেই পেজে নিয়মিত সুন্দর সুন্দর ড্রেসের ছবি আপলোড করবেন। আপনি যেই ড্রেস বিক্রি করবেন, আমি শুধু সেই ড্রেসের কথা বলছি না।
যে কোনো সুন্দর সুন্দর ড্রেসের ছবি আপলোড করেন। আর সাজগুজ সম্পর্কিত পোস্ট পেজে আপ করতে থাকেন। এবার এ পেজে যে পোস্টগুলো রয়েছে সেটা সবাইকে জানানোর জন্য সেই পোস্টগুলোর লিংক অন্যগ্রুপে শেয়ার করতে পারেন। একদম বেসিক পযায়ে এটা বললাম। বাকি বিস্তারিত পরে আলোচনা করেছি।
তাহলে এত সুন্দর সুন্দর পোস্ট আপনার পেজটিতে আসে জেনে যারা আপনার পেজে নিজের ইচ্ছাতে লাইক দেবে, তারাই এখানে লিড। যারা লাইক দিল, বোঝা যাবে, এরা সুন্দর ড্রেস দেখতে পছন্দ করে। এবার কিছুদিন পর থেকে পেজে যদি আপনি নিজের ড্রেস বিক্রি করতে চান, সেটি পোস্ট দিলে এ পেজের মানুষজন ড্রেস কিনার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।
যা করবেন না: ক) কাউকে লাইক দিতে রিকোয়েস্ট পাঠানোর দরকার নেই। খ) পেজে সেলসম্যানের মতো প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য সারাক্ষণ বিক্রির পোস্ট দিবেন না। ইনকাম-২: ধরি, অ্যাফিলিয়েশন কিংবা সিপিএর মাধ্যমে ইনকাম করবেন। এবার ধরি, অ্যাফিলিয়েশন কিংবা সিপিএ মাধ্যমে ইনকামের জন্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনো পেজ খুললেন। ধরি, আপনি ওয়েট লস প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন।
কী করবেন: পেজে নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনামূলক পোস্ট করবেন। পোস্ট হতে পারে, ওজন কমানোর বিভিন্ন টিপস নিয়ে। কিংবা ওজন বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে। ইনফ্রোগ্রাফিক, ভিডিও পোস্টগুলো বেশি ইফেকটিভ হবে। সেই পোস্টগুলোর লিংক, কিংবা ইমেজটি কিংবা ভিডিওটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আমেরিকা কিংবা ইউরোপ ভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করুন।
সেখানে নিয়মিত পেজের এত ভালো ভালো পোস্টগুলো পেলে আপনার পেজে লাইক দিতে আগ্রহী হবে। যেহেতু আপনি স্বাস্থ্য কমানোর টিপস নিয়ে পোস্টগুলো শেয়ার করছেন, সে জন্য আপনার পেজে লাইক যারা দেবে, তারা অবশ্যই ওজন বেশি নিয়ে চিন্তিত। ওজন কমানোর ব্যাপারে আগ্রহী দেখেই আপনার পেজে গিয়ে লাইক দেবে।
এবার পেজে সিপিএ লিংক কিংবা অ্যাফিলিয়েশন লিংক দিয়ে সেখান থেকে সেল পাবেন এবং অবশ্যই ভালো ইনকাম করতে পারবেন। যা করবেন না: ক) ফেক লাইক বাড়াবেন না। তাতে প্রোডাক্ট সেল হবে না। খ) উদ্দেশ্যহীনভাবে কোনো পোস্ট পেজে করবেন না। এখানে ২টি উপায়ে ইনকাম নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি।
আগের অধ্যায়ে ৯টি উপায়ে ইনকামের কথা বলেছি। তাছাড়া ফেসবুক মার্কেটিংয়ের দক্ষতা থাকলে লোকাল বিভিন্ন কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরির সুযোগও রয়েছে। ফেসবুকের বিশাল জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে এখন মানুষ প্রচুর ইনকাম করছেন। যদিও কিছু খারাপ দিকও আছে। এ ইনকামের কথা জেনে, মানুষ ফেসবুকের বুকে মার্কেটিং করে পুরো পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। এভাবে মার্কেটিং করে ইনকাম সম্ভব হয় না।
ফেসবুকের মাধ্যমে ই-কমার্স (এফ কমার্স) ব্যবসা করার বিস্তারিত টিপস: ফেসবুকে সারা দিন বিনা কারণে আমরা প্রচুর সময় নষ্ট করি। কিন্তু ফেসবুকে ব্যয় করা এ সময়টুকু ব্যয় করে ঘরে বসেই অনেক বড় ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। ঘরে বসেই সম্ভব প্রচুর আয় করা।
ইতিমধ্যে আমার কয়েকজন নারী স্টডেন্ট সেই অনুযায়ী কাজ করে সফল হয়েছে। আপনাদের জন্য বিস্তারিত গাইডলাইন তৈরির চেষ্টা করছি, চেকলিস্টের মতো করে লেখার। এফ কমার্স: ফেসবুকের মাধ্যমে যে ব্যবসা তাকে, এফ কমার্স বলে। টাকা খরচ করে ওয়েবসাইট তৈরির প্রয়োজন নেই এক্ষেত্রে। শুধুমাত্র ফেসবুকে একটি পেজ খুলেই ব্যবসা শুরু করা যাবে। ইতিমধ্যে দেশে অনেকেই করছেন এ রকম কিছু।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি আমার চোখে পড়েছে, সেই অনুযায়ী বলতে পারি, এখন পর্যন্ত রাজশাহীর খাঁটি আম, সুন্দরবনের খাঁটি মধু, জামদানি শাড়ি, কক্সবাজার ই-শপ বিভিন্ন গিফট আইটেম, ড্রেস সম্পর্কিত প্রোডাক্ট নিয়ে অনেকে ব্যবসা শুরু করেছেন। এই এফ কমার্স ব্যবসা করার জন্য শুরুতে কম খরচেই শুরু করতে পারবেন।
প্রথম ধাপ (ব্যবসা সম্পর্কিত সঠিক নাম বাছাই করে ফেসবুক পেজ তৈরি): ফেসবুকে ব্যবসা সম্পর্কিত একটি পেজ তৈরি করতে হবে। পেজের নামটি হবে ব্যবসার নাম। লং টাইম ব্যবসা করার টার্গেট করেই নামটা ঠিক করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ (প্রফেশনাল লোগো তৈরি): ব্যবসা সম্পর্কিত একটি সুন্দর লোগো ডিজাইন করে নিতে হবে। প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে লোগোটা ডিজাইন করাবেন। কারণ লোগোটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। তৃতীয় ধাপ (পেজের জন্য ব্যবসা সম্পর্কিত কভার ছবি তৈরি): সুন্দর এবং অবশ্যই প্রফেশনাল একটি ফেসবুক কভার ডিজাইন করিয়ে নিন।
চতুর্থ ধাপ (পেজে About সেকশনে ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য যুক্ত করা): ফেসবুক পেজটির About পেজটিতে ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্যগুলো ভালোভাবে পূরণ করুন। উদাহরণ- https://www.facebook.com/JamdaniVille/ এ পেজের About পেজটি দেখতে পারেন। সেখান থেকে আইডিয়া নিয়ে ভালো কিছু লিখতে পারেন।
পঞ্চম ধাপ (পেজে প্রাথমিকভাবে মেম্বার যুক্ত করা): পেজটি প্রস্তুত। ওপরের ৪টি ধাপের প্রস্তুতির জন্য সময় ২ দিনের বেশি ব্যয় করা মোটেই উচিত হবে না। তাহলে শুরুতেই আপনার পদক্ষেপ ভুল হবে। পঞ্চম ধাপটিতে, পেজের মেম্বার বাড়ানো শুরু করতে হবে। সবার প্রথমে নিজের ফ্রেন্ড লিস্টের সবাইকে, নিজের কাছের কোনো বন্ধুকে অনুরোধ করে, তার ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইকে এ পেজে যুক্ত করে নেয়ার জন্য ইনভাইট করুন। এ পদ্ধতিতেই চেষ্টা করুন পেজে ১০০০টা লাইক যুক্ত করার।
ষষ্ঠ ধাপ (পেজে অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি): এ ধাপটিতে এসেই অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি শুরু করতে হবে। অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি শুরু করলে, পেজ মেম্বারও নিয়মিত বৃদ্ধি পাবে।
কেন অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি করতে হবে? মার্কেটপ্লেসের বাইরে গিয়ে অনলাইনে এসব ব্যবসার ক্ষেত্রে, যে ক্রেতা, তার কাছে আপনি (ব্যবসার মালিক) একদম অপরিচিত এবং অবিশ্বস্ত। সুতরাং, ক্রেতা কখনও প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগে আপনাকে পেমেন্ট করতে সাহস পাবে না। আবার আপনি নিজেও পেমেন্ট পাওয়ার আগে অপরিচিত একজনকে প্রোডাক্ট দিতে রিস্ক নিবেন না।
যদি ক্রেতা আপনার পরিচিত হতো, তাহলে ক্রেতা আপনাকে বিশ্বাস করত,সেক্ষেত্রে প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগেই পেমেন্ট দিতে তার আপত্তি থাকত না। তেমনি আপনি নিজেও পেমেন্ট বাকি রেখে তাকে প্রোডাক্ট দিতে হয়তো আপত্তি করবেন না।
তাহলে দেখা গেল, পরিচিত হওয়াটাই আসল। অনলাইনের মাধ্যমেই এখন মানুষের বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আর এ বন্ধুত্ব তৈরির জন্যই অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। আর অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি হলেই বিশ্বাস এবং আস্থা তৈরি হবে। তখনই ক্রেতা প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগেই পেমেন্ট দিতে আপত্তি করবে না।
লেখক: মো. ইকরাম, পরিচালক, নেক্সাস আইটি। তথ্যসূত্র: যুগান্তর।