বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে তালগাছ রোপণ জরুরী
ডি এম কপোত নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে বজ্রপাতে নিহত ও আহত হবার ঘটণা।
গত কয়েক বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনায় মাঠের কৃষকরা এক প্রকার আকঙ্কগ্রস্ত হয়েই মাঠে কাজ করছে। একটু মেঘ উঠলেই এখন তারা ভয়ে নিরাপদ দুরত্বে চলে যায়। মে মাসে বজ্রপাতে মাহিমা খাতুন, মোশাররফ, ও রেজাউল ইসলাম নামে ৩ জন মারা গেছে।
মাঠে কাজ করা এবং বাগানে আম কুড়াতে গিয়ে এরা বজ্রপাতের কবলে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ও নাচোলে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে প্রাকৃতিক ভাবে লম্বা গাছ যেমন, তাল গাছ, সুপারি গাছ, নারকেল গাছ, বট গাছ কমে যাবার কারণেও বজ্রপাত এখন যেখানে সেখানে আঘাত হানছে।
রবি ঠাঁকুরের অন্যতম কাব্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ এখন অনেকটাই অদৃশ্য। পাশাপাশি রয়েছে মোবাইল টাওয়ার। যা এখন প্রকৃতির অভিশাপ। শহর এবং বরেন্দ্র এলাকাতে পাকা দ্বিতল ভবনের ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক মোবাইল টাওয়ার।
টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশনের মাত্রা এখন রূপান্তরিত হয়েছে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। মরে যাচ্ছে বড় বড় উঁচু ডাব গাছ ও সুপারি গাছ। মরে যাচ্ছে বাবু ও চড়ুই পাখিসহ সব ধরনের ছোট পাখি। এদেরও প্রজননেও হচ্ছে বাঁধাগ্রস্ত।
এই ধরনের পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো এলাকা। আবার আকাশে মেঘ ডাকলেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। আগে বড় বড় বটগাছ, তালগাছ ও সুপারি গাছ মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত বলে বজ্রপাত হতো এসব গাছের ওপর।
এখন বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকাতে তাল গাছ শূণ্য হয়ে পড়ায় বজ্রপাতের লক্ষবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মোবাইল টাওয়ার ও ফাঁকা স্থান। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মোবাইল টাওয়ার স্থাপন ও ব্যবহারের নীতিমালা তৈরি করেছে বিটিআরসি।
এই নীতিমালা ঠিকমত বাস্তবায়ন হলে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার হয়তবা কমে আসবে। পাশাপাশি রক্ষা হবে পরিবেশগত ভারসাম্য। বজ্রপাতের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ পুরো উত্তরাঞ্চলে বজ্র্রপাতে মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে প্রতি বছর।
চলতি বছরে বজ্রপাতের তীব্রতা অনেক বেশি। এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ আর আগের মতে চোখে পড়ে না। এক সময়ে সারি সারি বহু উঁচু উঁচু তাল গাছ চোখে পড়ত। পরিবেশবিদদের ভাষ্যে একদিকে বরেন্দ্রসহ পুরো জেলায় উঁচু তালগাছ না খাকায় বজ্রপাতে অধিক মানুষ মারা যাচ্ছে।
পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচাতে তাই নতুন করে বেশি বেশি তালগাছ লাগাতে হবে। সরকারো এ বিষয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন, বরেন্দ্র অঞ্চল এবং সড়কের পাশে তাল গাছ রোপণের জোর গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশব্যাপি বিভিন্ন মাঠে ও সড়কের পাশে, জমির আইলের ধারে রোপণও করা হচ্ছে তালগাছ।
কিন্তু পর্যাপ্ত তালগাছের চারা উৎপাদন না হবার কারণে পিছিয়ে পড়ছে এ কার্যক্রম। আমনুরা, রহনপুর, শিবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের পাশে কিছু কিছু স্থানে রোপণ করা হয়েছে তাল গাছের চারা। কিন্তু অযত্ন আর অবহেলাতেই সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
গুরুত্বের সাথে রোপণ করা তাল গাছের চারাগুলো মনিটরিং করলে এর রোধ করা সম্ভব হবে। প্রাকৃতিক নিয়মে বজ্রপাত ঠেকাতে তাই লম্বা তাল গাছ রোপণের কোন বিকল্প নেই।