বরগুনার এসব ভয়ংকর উঠতি সন্ত্রাসীরা কোন পাপের ফসল?
নিউজ ফীডে #বরগুনার #নৃশংসতার বন্যা। এসব ভয়ংকর উঠতি সন্ত্রাসীরা কোন #পাপের ফসল? দেশ-বিদেশের ইলেকট্রনিক-প্রিন্ট-সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে বরগুনায় রিফাত নামের যুবককে প্রকাশ্যে ১ মিনিটেই কুপিয়ে খুন করা আরেক ভয়ংকর তরুণ রিফাত আর তার সহযোগীর খবরে তোলপাড় চলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে লাখ লাখ মন্তব্য প্রতিক্রিয়া, টিভি বিশ্লেশণ দেখছি গতকাল থেকেই। শান্ত মানবিক এ-ই শহরে আমার আড়াই বছরের কর্মকালে ত বটেই, বরগুনার ইতিহাসেও এমন নির্মম নৃশংসতার নজীর নেই। অনেকেই এটাকে ঢাকার বিশ্বজিত হত্যার সাথেই যথার্থ তুলনা করেছেন।
#পাপ নাকি বাপকেও ছাড়ে না। ভাবছিলাম এ-ই নির্মম সন্ত্রাস আর ফিল্মী সন্ত্রাসী কার #পাপের_ফসল? এডিএম হিসাবে আমি বরগুনার আদালতে প্রায় দুই শতাধিক মাদক মামলার আসামীর জামিন বিষয়ে শুনেছি। তখন বিজ্ঞ আইনজীবিদের চোখে মুখেও দেখেছি অসাহায়ত্ব আর ভীতির ছাপ। জেলখানায় দেখেছি আসামীদের প্রায় ৬৫% মাদক মামলার আসামী। মহিলা আর শিশুদেরও পেয়েছি এ-ই ভয়ংকর নেশার বাহন হতে। সামান্য অর্থ কিংবা অন্য কোন স্বার্থের লোভে এসব উঠতি গ্যাংস্টার তৈরী করছে এ-ই #নেতাগিরির_পাপ একদিন তাদের পরিবারকেও গ্রাস করতে পারে। এ-ই ঘটনার পেছনে অন্য কাহিনীও শুনছি। তাই বলে অমন বর্বর খুন কি জায়েজ হয়ে যায়?
মাদক অপরাধে আইন শৃংখলা বাহিনীর দুচারজন জড়িত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃপক্ষ তাকেও ছাড় দেয়নি। স্বরুপকাঠিতে আমার টেবিলে একদিন ষাটোর্ধ এক মুরব্বীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি গর্বের সাথে রিফাত টাইপের এক ছোকরার বাবা বলে গর্বভরে পরিচয় দিচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিলে বাইরে উনি বলে যান, ‘আমার ছেলেকে সবাই চেনে, ইউএনও সাহেব চিনে না?’ হা, এরকম বেয়াদব অসভ্য নৃশংস সন্ত্রাসীর বাবা বলে যারা পরিচিত হতে গর্ব বোধ করে, রিফাতরা তাদেরই #ফাদারী_পাপের ফসল। কাপ্তাই এ ইউএনও থাকাকালীন এক উঠতি মাদকাসক্ত ছাত্রকে আমার অফিসে মাদকসহ পুলিশ ধরে আনলে প্রতিবাদে তার বন্ধুরা আমার অফিস ঘেরাও করে অভিযোগ করে, স্যার পুলিশ ওর প্যান্টে গাঁজা ঢুকিয়ে ধরে এনেছে। এমন ‘,নিস্পাপ’ কিশোরের পকেটে দায়িত্বশীল পুলিশ কেন গাজা ঢুকাবে তা বুঝিনি। ছেলেটাকে অভয় দিলে স্বীকার করে স্যার আমার গাজাখোর চাচাই আমার ওস্তাদ! তাকে বণ্ডে ছেড়ে দিলেও মাঝে মাঝে কৃতজ্ঞতায় আমার অফিসে আসত, অনেক উপদেশ দিতাম ছেলেটাকে। পরে শুনেছি ছেলেটা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।
আপনার ছেলে যখন গজারী, ছুরি আর রামদা নিয়ে প্রতিপক্ষকে ক্ষতবিক্ষত করার কেচ্ছায় আপনার মুখ গর্বে চকচক করে, তখন এ-ই #ফিল্মী_পাপ একদিন আপনাকেই বা ছাড়বে কেন? আপনি নিজে নায়ক সাজতে হাজার হাজার তরুণকে ভিলেন বানালে সেই #নায়কগিরির_পাপের বোঝা কাউকেই ছাড়বে না। বনী ইসরাঈল জাতিকে ধংসের অন্যতম কারন ছিল অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা। বরগুনার রাস্তায় এ-ই ভয়াবহ খুন আমাদেরকে বোবা-বধির জাতির খেতাব দিয়েছে। এ-ই #প্রতিবাদহীনতার_পাপ একদিন গোটা জাতিকেই ধংস করে দিতে পারে। রাঙামাটির কাপ্তাই পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের এক মাদকসেবী ছাত্র নেতাকে জনতা ধরে বাজারে আমার সামনে আনলে পুলিশের ওপরই হামলা করে তার অনুসারীরা। গুলি বর্ষণে এক ছাত্র মারা গেলে সেটা সামলাতে আমাকেও বহুদিন বেগ পেতে হয়েছিল। যত বাধাই আসুক, এ-ই #গ্যাংস্টার_সন্ত্রাসী_পাপ রুখতে প্রশাসনিক কঠোরতার বিকল্প নেই। বরগুনা শহরে উঠতি বয়সীদের ‘নতুন হোন্ডার ত্রাস’ এখনও মনে পড়ে যায়। নিজ চোখে দেখেছি ‘এখানে ওখানে’ বসে #শালিশী_পাপে অর্থ আর আনুগত্যের কারণেও বেড়ে গেছে ও-ই সব বাড়ন্ত সন্ত্রাসীদের দাপট। সন্তানকে ধর্মীয় আর নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতেও আমাদের #হীনমন্যতার_পাপ এ-ই ব্যধির বিস্তারে সাহায্য করছে।
নববিবাহিতা স্ত্রীর আর্তনাদে একটা তরুণ ছাড়া কেউ সাড়া দিল না; এমন ঘটনার স্বীকার আমার আপনার সন্তানের ভাগ্যে জুটলে তখন কি আর ভয়ার্ত-বিবেকহীন দর্শককে #কাপুরুষতার_পাপের জন্য দোষ দেয়া যাবে? আমতলীর এক বখাটে নিয়মিত গাঁজা সেবন করে ক্লাশে আসত, ইভটিজিং এ-র ঘটনায় ধরা পড়ে মোবাইল কোর্টে জেল হলো। কলেজ পড়ুয়া এ-ই তরুণের ক্লাশ শিক্ষক আর ক্রন্দনরত বৃদ্ধা মাকে আদালতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আসামীকে কেন আগে সতর্ক করেন নি? উত্তর এসেছিল, “স্যার, ভয়ে”। সুনামগঞ্জের আদালতেও নেশাখোর সন্ত্রাসীর ভয়কাতুর বাবাকে কাঁদতে দেখেছি। ও-ই তরুণ কিন্তু এসএসি-এইস এসসি দুটতেই গোল্ডেন পেয়েছিল বলে মনে পড়ে।
মাত্রাতিরিক্ত ইনটারনেট আসক্তিতে বুঁদ হয়ে থাকা সন্তানকে আমরা আজকাল একটু ধমক দিতেও ভয় পাই, তাহলে এ-ই #দায়িত্বহীনতার_পাপ কেন শুধু সন্তান কে নিতে হবে? ছেল-সন্তান প্রাইভেট পড়ার নামে বাজে সংগে নস্ট হলেও আপনি উদাসীন থাকছেন। এ-ই #ফানাফিল্লাহ_পাপ আপনার জন্য কোন আজাবের কারণ হতে পারে। প্রশাসনিক কিংবা আইন প্রয়োগ জনিত কোন দুর্বলাতা থাকলে নাগরিকরা আমাদেরও ছেড়ে কথা বলবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু স্টাটাস, হা, সহমত জাতীয় অনুভুতি প্রকশ না করে আসুন, মুল্যবোধের এ-ই ভয়াবহ বিপর্যয় রোধে নিজের অবস্থান থেকে কিছু না কিছু করি। নিষ্ঠুর-,নির্মমতায় নিহত রিফাতের রক্তের বিনিময়ে সমাজটা জঞ্জালমুক্ত হোক।।
লেখক: মো: নুরুজ্জামান,এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চল ও ডিভিশনাল ভুসম্পত্তি অফিসার,রাজশাহী।