বরগুনায় মিন্নির ‘স্বীকারোক্তি’ নিয়ে এসপি কখন ব্রিফিং করেছেন: হাইকোর্ট

অনলাইন নিউজ: বরগুনার আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার, আদালতে সোপর্দ, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও এসপির সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে জবানবন্দি দেয়ার আগেই আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির দোষ স্বীকারের বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) কখন সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তা জানতে চান হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার মিন্নির আইনজীবীকে এ সংক্রান্ত তথ্য সম্পূরক আবেদন আকারে দাখিল করতে বলা হয়েছে। সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়ে আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত জামিন শুনানি মুলতবি করেছেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী জেডআই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী।
৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে গেলে আইনজীবীরা আবেদন ফেরত নেন। ১৮ আগস্ট রোববার এই বেঞ্চে জামিন আবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
সোমবার শুনানিতে আইনজীবী জেডআই খান পান্না বলেন, রিফাত শরিফ হত্যায় মিন্নি এফআইআরভুক্ত কোনো আসামি নয়। সে এই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। ১৬ জুলাই তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং পরদিন কোর্টে সোপর্দ করে। পুলিশ মিন্নির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৫ দিন মঞ্জুর করেন আদালত।
তিনি বলেন, রিমান্ডের দু’দিন পর ১৯ জুলাই পুলিশ মিন্নিকে কোর্টে সোপর্দ করে এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দাখিল করে। আইনজীবী বলেন, বরগুনা বারে এমন একটা চাপ সৃষ্টি করা হল যে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবীকে কোর্টে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। যা দেশের সব মিডিয়ায় প্রচার করা হয়।
জেডআই খান পান্না বলেন, রিফাত হত্যার ভিডিও ক্লিপ আমরা সবাই দেখেছি। স্বামীকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে মিন্নি। পরে সেই ভিডিও আলাদা করে প্রচার করা হল এবং বলা হল মিন্নি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ পর্যায়ে আদালত জানতে চান আপনার মূল বক্তব্য কী?
জবাবে আইনজীবী বলেন, মিন্নি একজন ১৯ বছরের তরুণী। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। অথচ বলা হচ্ছে, সে ষড়যন্ত্র করে রিফাত শরীফকে হত্যা করেছে। মিন্নি জামিনে ছাড়া পেলে এ মামলার কোনো ক্ষতি হবে না। আরও বলেন, বরগুনার পুলিশ মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ লাইনে নেয়।
পরে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নি জড়িত থাকার কথা গণমাধ্যমকে জানান। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। আদালতে জবানবন্দি দেয়ার আগেই আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির দোষ স্বীকারের বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) কখন সংবাদ সম্মেলন করেছেন তা জানতে চান হাইকোর্ট।
ওই সংবাদ সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে সম্পূরক আবেদন দিতে বলেন আদালত। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে মিন্নির আইনজীবীদের এ আবেদন দাখিল করতে হবে। ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানান।
পরে তিনি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। মিন্নির বাবার অভিযোগ, নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মিন্নিকে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তিনি দাবি করেন।
বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
পরে ৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চে আংশিক শুনানির পর জামিন পাওয়ার আশা না দেখে মিন্নির আইনজীবী জেডআই খান পান্না আবেদন ফিরিয়ে নেন।