বাবা'র মরনেই দুঃসহ জীবনের শুরু...! - দৈনিক বরিশাল ২৪ দৈনিক বরিশাল ২৪বাবা'র মরনেই দুঃসহ জীবনের শুরু...! - দৈনিক বরিশাল ২৪

প্রকাশিতঃ এপ্রিল ১৮, ২০২২ ২:৫০ পূর্বাহ্ণ
A- A A+ Print

বাবা’র মরনেই দুঃসহ জীবনের শুরু…!

সোহেল আহমেদঃ- বাড়ির উঠন ভড়া অপেক্ষমাণ মানুষ। হোগল পাতার ছাউনির কুঁড়ে ঘরে স্বজনদের কান্নার হাহাকার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবা আর বেঁচে নেই! চার বছরের ছোট্ট শিশু রাজন’র আর্তচিৎকারে চারিদিকের বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। জমিজমা থাকলেও দুই সন্তান নিয়ে চরম আর্থিক সংকটে পরে যান রাজনের মা।

দু-বেলা দুমুঠো খাওয়ার জন্য চেয়ে থাকতে হয় প্রতিবেশীর চুলার দিকে। মা রাজনকে নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলেন। রাজনকে পাঠিয়ে দিলেন মামা বাড়িতে। মামাদের আর্থিক অবস্থারও টানাপোড়েন চলছে। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারের মধ্যে রাজন একটা বাড়তি বোঝা। রাজনের সাংসারিক অভাব অনটন দেখে তাঁর ছোট খালু নিজের সন্তানের সাথে রাজনকে ঢাকার একটি এতিমখানায় ভর্তি করিয়ে দিলেন।

আরবী লাইনের পড়াশোনা। দারুণ এক রুটিন। ফজরের আজান থেকে শুরু করে এশার নামাজ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত সুশৃঙ্খল নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সেখানে বেশি দিন টিকতে পারলো না রাজন। অসুখ বিসুখ লেগে থাকলো। উপায়ন্ত না পেয়ে রাজনকে আবারও মামা বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হলো। রাজন এইবার ভাবলো মামা বাড়ি থেকে সাজছন্দে বেড়ে উঠবে।

বিধিবাম  কয়েকদিন পরে শুনলো তাঁকে আবারো এতিমখানায় ভর্তি করিয়ে দিবে। তাই হলো, এবার বরিশাল সাগরদী সংলগ্ন একটি এতিমখানায় নিয়ে গেলো রাজনকে। প্রথমে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসলেও লোহার শিকলের রুমের মধ্যে বন্দী বাচ্চাদের দেখে রাজন’র বুজতে বাকি রইলো না।

মামাকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো, আর বলল মামা, মামাগো আমার ভাত লাগবে না, আমি না খাইয়া থাকমু, মামা এইখানে রাইখা যাইওনা,,,!

সে কি কান্না! রাজনের চেহারা দেখার পরে এতিমখানা কতৃপক্ষ আর রাখতে চাইলো না। ক্ষিপ্ত হয়ে মামা মারতে মারতে বাড়িতে নিয়ে আসলেন। বাড়িতে তখন ধান মাইরাই এর কাজ চলছিলো। উঠানে জমিয়ে রাখা ধানের আটির ওপর তারা আছাড় মারতে লাগলেন। আর মা তো সেই এতিম খানায় দেয়ার সময়ে কান্না শুরু করেছেন অনবরত কেঁদেই চলেছেন। মায়ের নিরুপায় আকুতি কেউ শুনলেও অভাবের কাছে অসহায়।

সেসময়টাতে এমনও দিন কেটে গেছে একবাড়ি ভাত রান্না করলে প্রতিবেশী অনেকে সে ভাতের মা’র খেতে আসতো।
এভাবে বেঁচে থাকাটা যেখানে কষ্টের সেখানে অন্য কিছু চিন্তা করা যায়?

সবাই স্কুলে যাচ্ছে, রাজনেরও পড়তে ইচ্ছে করে। কিন্তু  ভর্তি করাবে কে? একদিন বাবু পলাশদের দেখাদেখি রাজনও স্কুলে গেলো। মমতাজ নামের এক ম্যাডাম ক্লাসে এলেন। রাজনকে দেখে জিজ্ঞেস করার পরে পড়ার কথা বললো। মমতাজ আপা অত্যন্ত ভালোমনের মানুষ। সম্ভবত ১৫ টাকা দিয়ে রাজনকে নিজ উদ্যোগে ভর্তি করে দিলেন। খালি পা দেখে একজোড়া পঞ্চ স্যান্ডেলও কিনে দিলেন। মমতাজ আপার এরকম সহযোগিতা পেয়ে রাজন তাঁর পিছু ছাড়লো না।

বাবু রাজনের চেয়ে দুই ক্লাস সিনিয়র। প্রতিদিন সন্ধ্যায় একসাথে গল্পগুজব করে পড়তে বসতো। নিজের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে রাজনকেও শিখিয়ে দিচ্ছে। মামা’র ঘরে অনেক অভাব থাকায় তাঁরা রাজনকে বাড়তি ঝামেলা মনেকরে করতেন। আবার আদর স্নেহ দিয়ে অভাবের কথা বোঝাতেন।

বাবা নামক বটগাছের মরনের পরে দুঃসহ জীবন এর করুণ বাস্তবতা চোখেমুখে প্রত্যক্ষ করছে রাজন। নিরবতা ছাড়া কিচ্ছু করার নেই। মামার দুই মেয়ে দুই ছেলে রয়েছে। তাঁদের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। তারপর রাজনতো আর এক বিরক্তির নাম! খায় এ ঘরে কাজ করে ও ঘরের! অনেক দুষ্ট প্রকৃতির রাজনকে নিয়ে বিপাকে প্রায় সবাই।

বাবা নামক বটগাছের মরনের পরে দুঃসহ জীবনে হেঁটে চলা রাজন সামাজিক হেনস্থার শিকার প্রতিনিয়ত। সমাজের কতিপয় মানুষের নানা কুটচালে পড়াশোনায় বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছিলো রাজন। রাজনের পাশে সবসময় এগিয়ে আসতো বাবু। আর সব দুঃখ বেদনার কথা মন খুলে বাবুর কাছেই প্রকাশ করতো রাজন।

বাবুর এ উপকারে রাজন পড়াশোনাতে কেবলই মনোযোগী হচ্ছে। সমস্ত নিন্দুকের কুট কথাগুলো এখন আর কিছু মনেহয় না। মনের ভেতর শুধু স্বপ্ন কখন সে বড় হবে? নিন্দুকদের কখন বলবে যে, আমিও তোমাদের মতো মানুষ! আমারও জন্মদাতা বাবা ছিলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ আমার এবাড়ি ওবাড়ি ছুটে চলতে হচ্ছে। তোমাদের হাসি তামাশার পাত্র হতে হচ্ছে। আমিও কিন্তু তোমাদের মতো মানুষ!

( চলবে………)

লেখকঃ সোহেল আহমেদ, সাংবাদিক, দৈনিক বরিশাল২৪.কম।

দৈনিক বরিশাল ২৪

বাবা’র মরনেই দুঃসহ জীবনের শুরু…!

সোমবার, এপ্রিল ১৮, ২০২২ ২:৫০ পূর্বাহ্ণ | আপডেটঃ এপ্রিল ০৩, ২০২৩ ৮:০৮ অপরাহ্ণ

সোহেল আহমেদঃ- বাড়ির উঠন ভড়া অপেক্ষমাণ মানুষ। হোগল পাতার ছাউনির কুঁড়ে ঘরে স্বজনদের কান্নার হাহাকার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবা আর বেঁচে নেই! চার বছরের ছোট্ট শিশু রাজন’র আর্তচিৎকারে চারিদিকের বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। জমিজমা থাকলেও দুই সন্তান নিয়ে চরম আর্থিক সংকটে পরে যান রাজনের মা।

দু-বেলা দুমুঠো খাওয়ার জন্য চেয়ে থাকতে হয় প্রতিবেশীর চুলার দিকে। মা রাজনকে নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলেন। রাজনকে পাঠিয়ে দিলেন মামা বাড়িতে। মামাদের আর্থিক অবস্থারও টানাপোড়েন চলছে। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারের মধ্যে রাজন একটা বাড়তি বোঝা। রাজনের সাংসারিক অভাব অনটন দেখে তাঁর ছোট খালু নিজের সন্তানের সাথে রাজনকে ঢাকার একটি এতিমখানায় ভর্তি করিয়ে দিলেন।

আরবী লাইনের পড়াশোনা। দারুণ এক রুটিন। ফজরের আজান থেকে শুরু করে এশার নামাজ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত সুশৃঙ্খল নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সেখানে বেশি দিন টিকতে পারলো না রাজন। অসুখ বিসুখ লেগে থাকলো। উপায়ন্ত না পেয়ে রাজনকে আবারও মামা বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হলো। রাজন এইবার ভাবলো মামা বাড়ি থেকে সাজছন্দে বেড়ে উঠবে।

বিধিবাম  কয়েকদিন পরে শুনলো তাঁকে আবারো এতিমখানায় ভর্তি করিয়ে দিবে। তাই হলো, এবার বরিশাল সাগরদী সংলগ্ন একটি এতিমখানায় নিয়ে গেলো রাজনকে। প্রথমে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসলেও লোহার শিকলের রুমের মধ্যে বন্দী বাচ্চাদের দেখে রাজন’র বুজতে বাকি রইলো না।

মামাকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো, আর বলল মামা, মামাগো আমার ভাত লাগবে না, আমি না খাইয়া থাকমু, মামা এইখানে রাইখা যাইওনা,,,!

সে কি কান্না! রাজনের চেহারা দেখার পরে এতিমখানা কতৃপক্ষ আর রাখতে চাইলো না। ক্ষিপ্ত হয়ে মামা মারতে মারতে বাড়িতে নিয়ে আসলেন। বাড়িতে তখন ধান মাইরাই এর কাজ চলছিলো। উঠানে জমিয়ে রাখা ধানের আটির ওপর তারা আছাড় মারতে লাগলেন। আর মা তো সেই এতিম খানায় দেয়ার সময়ে কান্না শুরু করেছেন অনবরত কেঁদেই চলেছেন। মায়ের নিরুপায় আকুতি কেউ শুনলেও অভাবের কাছে অসহায়।

সেসময়টাতে এমনও দিন কেটে গেছে একবাড়ি ভাত রান্না করলে প্রতিবেশী অনেকে সে ভাতের মা’র খেতে আসতো।
এভাবে বেঁচে থাকাটা যেখানে কষ্টের সেখানে অন্য কিছু চিন্তা করা যায়?

সবাই স্কুলে যাচ্ছে, রাজনেরও পড়তে ইচ্ছে করে। কিন্তু  ভর্তি করাবে কে? একদিন বাবু পলাশদের দেখাদেখি রাজনও স্কুলে গেলো। মমতাজ নামের এক ম্যাডাম ক্লাসে এলেন। রাজনকে দেখে জিজ্ঞেস করার পরে পড়ার কথা বললো। মমতাজ আপা অত্যন্ত ভালোমনের মানুষ। সম্ভবত ১৫ টাকা দিয়ে রাজনকে নিজ উদ্যোগে ভর্তি করে দিলেন। খালি পা দেখে একজোড়া পঞ্চ স্যান্ডেলও কিনে দিলেন। মমতাজ আপার এরকম সহযোগিতা পেয়ে রাজন তাঁর পিছু ছাড়লো না।

বাবু রাজনের চেয়ে দুই ক্লাস সিনিয়র। প্রতিদিন সন্ধ্যায় একসাথে গল্পগুজব করে পড়তে বসতো। নিজের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে রাজনকেও শিখিয়ে দিচ্ছে। মামা’র ঘরে অনেক অভাব থাকায় তাঁরা রাজনকে বাড়তি ঝামেলা মনেকরে করতেন। আবার আদর স্নেহ দিয়ে অভাবের কথা বোঝাতেন।

বাবা নামক বটগাছের মরনের পরে দুঃসহ জীবন এর করুণ বাস্তবতা চোখেমুখে প্রত্যক্ষ করছে রাজন। নিরবতা ছাড়া কিচ্ছু করার নেই। মামার দুই মেয়ে দুই ছেলে রয়েছে। তাঁদের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। তারপর রাজনতো আর এক বিরক্তির নাম! খায় এ ঘরে কাজ করে ও ঘরের! অনেক দুষ্ট প্রকৃতির রাজনকে নিয়ে বিপাকে প্রায় সবাই।

বাবা নামক বটগাছের মরনের পরে দুঃসহ জীবনে হেঁটে চলা রাজন সামাজিক হেনস্থার শিকার প্রতিনিয়ত। সমাজের কতিপয় মানুষের নানা কুটচালে পড়াশোনায় বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছিলো রাজন। রাজনের পাশে সবসময় এগিয়ে আসতো বাবু। আর সব দুঃখ বেদনার কথা মন খুলে বাবুর কাছেই প্রকাশ করতো রাজন।

বাবুর এ উপকারে রাজন পড়াশোনাতে কেবলই মনোযোগী হচ্ছে। সমস্ত নিন্দুকের কুট কথাগুলো এখন আর কিছু মনেহয় না। মনের ভেতর শুধু স্বপ্ন কখন সে বড় হবে? নিন্দুকদের কখন বলবে যে, আমিও তোমাদের মতো মানুষ! আমারও জন্মদাতা বাবা ছিলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ আমার এবাড়ি ওবাড়ি ছুটে চলতে হচ্ছে। তোমাদের হাসি তামাশার পাত্র হতে হচ্ছে। আমিও কিন্তু তোমাদের মতো মানুষ!

( চলবে………)

লেখকঃ সোহেল আহমেদ, সাংবাদিক, দৈনিক বরিশাল২৪.কম।

প্রকাশক: মোসাম্মাৎ মনোয়ারা বেগম। সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: ইঞ্জিনিয়ার জিহাদ রানা। সম্পাদক : শামিম আহমেদ যুগ্ন-সম্পাদক : মো:মনিরুজ্জামান। প্রধান উপদেষ্টা: মোসাম্মৎ তাহমিনা খান বার্তা সম্পাদক : মো: শহিদুল ইসলাম ।
প্রধান কার্যালয় : রশিদ প্লাজা,৪র্থ তলা,সদর রোড,বরিশাল।
সম্পাদক: 01711970223 বার্তা বিভাগ: 01764- 631157
ইমেল: sohelahamed2447@gmail.com
  “সাংবাদিকদের সক্রিয় রাজনীতিতে না আসাই ভাল”–মজিবর রহমান সরোয়ার   পদোন্নতি পেয়ে সচিব হলেন বরিশালের কৃতিসন্তান এ এইচ এম সফিকুজ্জামান   বানভাসীদের সহযোগিতায় এক দিনের বেতন দেয়ার ঘোষণা দিল ইয়কোহামা লেভেলস এন্ড প্রিন্টিং (বিডি) লিমিটেড   বরিশালে শ্রমীক লীগ নেতার ইসলামী আন্দোলনে যোগদান   বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এরো চট্টগ্রামের ধানসিঁড়ি আদর্শ কেজি স্কুল   বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এলো ধানসিঁড়ি আদর্শ কেজি স্কুল   বন্যাদূর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে এলেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত   খাগড়াছড়িতে বন্যা কবলিত অসহায় মানুষের পাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী   বোট নিয়ে চট্টগ্রামের নিউমুরিং থেকে উদ্ধার টিম নোয়াখালীতে পৌছাল   বরিশালে দুর্গোৎসবের টাকা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বন্যার্তদের জন্য দান   বিভিন্ন জেলায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন   চাঁদপাশা হাইস্কুল ও কলেজে আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাস উদ্বোধন   বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দলনে নিহত শান্ত ও রাকিবের কবর জিয়ারত করলেন বরিশাল জাপার নেতৃবৃন্দ   রাস্ট্র সংস্কারে প্রশাসনকে সহায়তা করতে হবেঃ ইকবাল হোসেন তাপস   রাস্তায় লাঠি হাতে ছাত্রলীগকে মানুষ পছন্দ করেনি, অন্য কাউকেও দেখতে চায় নাঃ তাপস   বাবা মুুক্তিযোদ্ধা না হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন ডিবি হারুন   সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ পদক্ষেপ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা   জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিয়ে সুখবর   অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানালো আওয়ামী লীগ   দেশের ক্লান্তিকালে মানুষের পাশে তাপসের ‘‘বরিশাল ফরএভার লিভিং সোসাইটি’’