ব্রাজিলকে শিরোপা জেতাতেই দুর্নীতি : লিওনেল মেসি
স্পোর্টস নিউজ: কোপা আমেরিকার শিরোপা নিজেদের করতে পারলে দেশের হয়ে শিরোপা জয়ের আক্ষেপটা ঘোচাতে পারতেন লিওনেল মেসি। সেটা তো হলোই না বরং দেশের জার্সি গায়ে এই কোপাতেই নিজেরে ক্যারিয়ারে একটা কালো দাগ ফেলে দিলেন।
সেটা হলো, কোপা আমেরিকার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে চিলির বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন লিওনেল মেসি। দেশের হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেসির লাল কার্ড দেখা এটা। এর আগে ২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছিলেন পাঁচবারের বর্ষসেরা এ ফুটবলার।
চিলির বিপক্ষে ম্যাচের তখন ৩৭ মিনিট। চিলির বিপদ সীমার মধ্যে বল দখলের লড়াইয়ে গ্যারি মেডেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি।
সেটি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত তখন পরিষ্কার বোঝা যায়নি। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় চিলি অধিনায়ক যা করলেন তা অবিশ্বাস্য, চোখ রগড়ে বারবার দেখতে হয়। পেছনে ঘুরেই তিনি শরীর দিয়ে গুঁতোতে শুরু করেন মেসিকে। হঠাৎ এ আক্রমণের পাল্টা জবাব দেননি মেসি।
দু হাত তুলে চিলি অধিনায়কের প্রতিটি গুঁতোয় পিছিয়েছেন দু-এক পা করে। এর মধ্যে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন রেফারি মারিও ডিয়াজ দে ভিভার। ছুটে এসে সরাসরি লাল কার্ড দেখালেন দুজনকেই!
তবে মেসির দেওয়া লাল কার্ড নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। রেফারি চাইলে দু’জনকেই হলুদ কার্ড দিতে পারতেন। কিংবা কোপার এমন রঙ ছড়ানো ম্যাচে জল ঢালার আগে ভিএআরের স্মারণাপন্ন হতে পারতেন। কিন্তু তিনি বির্তকিত সিদ্ধান্ত নেন।
বিতর্কিত এ লাল কার্ডে যথারীতি ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মেসি নিজেও চুপ করে থাকেননি। বরং এভাবে বলা যায়, লাল কার্ড দেখার মতো অপরাধ না করেও লাল কার্ড দেখার পর মেসি যেন অন্য মানুষ!
এর আগে বহুবার রেগেছেন, ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন কিন্তু সেই রাগ দিয়ে কথার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন খুব কমই। কিন্তু কাল আর আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের সহ্য হয়নি। চিলিকে ২-১ গোলে হারিয়ে আর্জেন্টিনা তৃতীয় স্থান নিশ্চিতের পর পদক নিতে মঞ্চে যাননি মেসি। সোজাসাপ্টা বলেছেন, ‘পদক নিতে যাইনি। কারণ আমাদের অসম্মান ও দুর্নীতির অংশ হওয়া উচিত নয়।’
এখানেই শেষ নয়। কোপা আমেরিকার আয়োজক দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল ফেডারেশনকে (কনমেবল) ধুয়ে দিয়েছেন মেসি। এর আগে মাঠের রেফারির সঙ্গে তাঁর বচসা হয়েছিল সেমিফাইনালে।
মেসি মনে করেন, ওই ঘটনার জের ধরেই কালকের (বাংলাদেশ সময়) লাল কার্ড। আর কনমেবল এবার কোপা আমেরিকার শিরোপা ব্রাজিলের হাতে তুলে দিতে যে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করছে সে কথাও বলেছেন মেসি।
সংবাদমাধ্যম তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিল, সেমিতে সমালোচনার জন্যই লাল কার্ড পেয়েছেন বলে মনে করেন কি? মেসির জবাব, ‘হ্যাঁ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাই। আপনি সৎ হতে পারবেন না। কীভাবে সব করা উচিত সেটাও বলতে পারবেন না। কিন্তু আমি সব সময় সত্য বলা ও সৎ হওয়ার জন্য শান্ত থাকতে পারি।’
লাল কার্ড দেখায় এমনিতেই নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবেন মেসি। সেটি মার্চে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে। তবে কনমবেলের বিপক্ষে এভাবে ফেটে পড়ার জন্য অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া নিয়ে কোনো ভাবনা নেই মেসির, ‘তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু সত্য বলতেই হবে। আমি শান্তভাবে মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছি।’
শান্তশিষ্ট ও ভদ্র ফুটবলার হিসেবেই পরিচিত বার্সেলোনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি। কিন্তু এবারের কোপা আমেরিকায় ফুটবল মাঠের বাইরে প্রথম তিনি আলোচনায় আসেন ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে খেলা রেকর্ড বিবেচনা করলে ৬৭০ ম্যাচ পরে মেসি ক্যারিয়ারের ২য় লাল কার্ড পেলেন।
ম্যাচ শেষে ক্ষুব্ধ মেসি মিক্স জোনে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল সংস্থা ও রেফারিংয়ের মান নিয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি যা বলেছিলাম তাই হয়েছে। আমি মঞ্চে যাইনি কারণ সেখানে গিয়ে নিজেদের অসম্মান ও দুর্নীতির অংশ বানাতে চাইনি। আমরা অবশ্যই ফাইনালে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাদের যেতে দিলনা। দুর্নীতি এবং বাজে রেফারিংয়ের কারণে ফুটবল ভক্তরা বঞ্চিত হল সুন্দর খেলা উপভোগ করা থেকে। এরই সঙ্গে ফুটবলকেও তারা ধ্বংস করার চেষ্টাই করছে।’
কোপা আমেরিকার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন কে হবে প্রসঙ্গে মেসি বলেন, ‘অবশ্যই ব্রাজিল। কোনো সন্দেহ নেই এতে। কারণ এটা ব্রাজিলের জন্যেই গোছানো। আশা করি রেফারি এবং ভিএআর প্রযুক্তি এমন কিছুই করতে পারবে না যাতে পেরু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। শক্তিশালী দল হওয়া সত্ত্বেও পেরুকে এসব কিছুর বিপক্ষেই লড়তে হবে। তবে পেরুর জেতাটা কঠিন হবে।’
উল্লেখ্য, সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনার দুটি পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। রিপ্লেতে দেখা যায় পেনাল্টি পেতে পারত আর্জেন্টিনা।
প্রথমটাতে টেলিভিশন রিপ্লেতে ব্রাজিল অধিনায়ক দানি আলভেসের ট্যাকলে আর্জেন্টিনার আগুয়েরোকে ডি-বক্সে পড়ে যেতে দেখা যায় যেখান থেকে পাল্টা আক্রমণে ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলের সূচনা হয়।
দ্বিতীয় ঘটনাটিতেও ডি-বক্সের মধ্যে ব্রাজিলের মিডফিল্ডার আর্থার কাঁধ দিয়ে আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্দির গলায় আঘাত করেন। এই দুটি ঘটনার কোনটাই দেখেননি সামব্রানো এবং আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের অভিযোগের পরে কোন ঘটনা ঘটেছিল কিনা সেটাও ভিএআর টিমকে দেখতে বলেননি ইকুয়েডরের এই রেফারি। ম্যাচ শেষে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক আরও তুঙ্গে উঠে যখন ভিএআর প্রযুক্তির দায়িত্বে থাকা উরুগুয়ের লিওডান গনজালেজ জানান যে তিনি মাঠে থাকা রেফারি সাম্ব্রানোকে প্রযুক্তির ব্যবহার করার অনুরোধ জানালেও দুইবারই তা এড়িয়ে যান মাঠে থাকা রেফারি।
সেই ম্যাচ শেষেও রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন মেসি। মেসি সেই ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ ব্রাজিল আমাদের চাইতে খুব বেশি ভালো দল তা বলবো না। তারা ম্যাচে আগে গোল পেয়েছে। কিন্তু আমরা ম্যাচে ফিরতে পারিনি বাজে রেফারিংয়ের কারণে। নিকোলাস অটামেন্ডি ও আগুয়েরো বিরুদ্ধে করা দুইটা ফাউলেই পেনাল্টি আমরা পেতে পারতাম কিন্তু সেগুলো দেওয়া হয়নি। তারা আরও কিছু জঘন্য ফাউল দেখেছে কিন্তু এড়িয়ে গেছে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়েই।’