ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতুর বয়স ৯০ বছর
অনলাইন নিউজ: ভারী বর্ষণে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর দুই পাশে অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলনের ফলে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে প্রাচীনতম কালুরঘাট সেতু।
তারপরও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহনে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ সেতু পারপার হচ্ছে। চলাচল করছে দোহাজারীগামী দুই জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেলবাহী একটি ওয়াগন।
সেতুটির বর্তমান অবস্থা দেখে যে কারো মনে হতে পারে-সেতুটি যেন আর ভার বইতে পারছেনা। একটানা ভারী বর্ষণে কালুরঘাট রেল সেতু এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দুই পাশের ড্রেজার দিয়ে প্রচুর পরিমাণে বালি উত্তোলনের ফলে জরাজীর্ণ সেতুটির অবকাঠামোকে আরো বেশি নড়বড়ে করে তুলেছে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এডিশনাল চীফ ইঞ্জিনিয়ার (ব্রিজ) আতাউল হক ভূঁইয়া।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর পিচ, পিস প্লেট ও রেলবিট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি পড়লেই কংক্রিট ও পিচ ওঠে বড় বড় গর্তে মরণফাঁদের সৃষ্টি হয়েছে।
তারমধ্যেও প্রতিদিনই সেতু পর হয়ে শহরে আসা সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, গত বছর থেকে সেতুটির অবস্থা একেবারেই শোচনীয় হয়ে উঠে।
এবারের একটানা ভারী বর্ষণে সেতুর মাঝখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা লাইন আর গর্তে ধাক্কা খেয়ে প্রতিদিনই ট্যাক্সি-টেম্পোর চাকা লেগে দুর্ঘটনা ঘটছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তিনি জানান, সেতুর নাজুক অবস্থার মধ্যেও ১০ টনের অধিক ওজনের ভারী যানবাহন চলাচল করছে। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ ১০ টনের অধিক যানবাহন চলাচল কাগজে কলমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও বাস্তবে তার কোন উদ্যোগ নেই।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এডিশনাল চীফ ইঞ্জিনিয়ার (ব্রিজ) আতাউল হক ভূঁইয়া আজাদীকে জানান, এটা স্টিল স্ট্র্যাকচারে ব্রিজ। ১৯৩০ সালে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি সেতু বিল্ডার্স হাওড়া নামক বিখ্যাত সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। এটি রেল সেতু। ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত এই ব্রিজটির বয়স এখন ৯০ বছর পার হয়েছে।
স্টিল স্ট্রাকচারের ব্রিজ হওয়াতে এখানে মেরামত করার মতো তেমন কিছু নেই। এটা ভৈরব ব্রিজেরও আগে নির্মিত হয়েছিল। ৯ম পৃষ্ঠার ৪র্থ কলাম
এখনো ব্রিজটি যে অবস্থায় আছে তেমন খারাপ নেই উল্লেখ করে তিনি দেশি-বিদেশি এঙপার্ট দিয়ে চেক করা দরকার বলে মনে করেন।
এডিশনাল চীফ ইঞ্জিনিয়ার আতাউল হক ভূঁইয়া বলেন, সেতুর দুই পাশে অপরিকল্পিতভাবে প্রচুর বালু উত্তোলনের ফলে সেতুটির অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও গিয়ে সেতুটি দেখে এসেছি। উভয় পাশে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের জন্য যারা লিজ প্রদান করেছেন তাদেরকে আমি বলেছি তা বন্ধ রাখার জন্য। শুধুমাত্র রেল চলাচলের জন্য নির্মিত হলেও পরবর্তীতে এই সেতু দিয়ে রেলের পাশাপাশি ভারী যানবাহনও চলাচল করছে।
১৯৬১ সালে ১০টন ওজনের গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও তা মানা হচ্ছেনা। সেতুটি ১৯৮৯ সালে, ২০০৪ সালে এবং ২০১২ সালেও মেরামত করা হয়েছিল।
প্রকৌশলী আতাউল হক ভূইয়া জানান, কালুরঘাটে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) অর্থের জোগান দেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
প্রথমে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের কথা থাকলেও পরবর্তীতে তারা শুধুমাত্র রেল সেতু নির্মাণেই আগ্রহী হয়। এখন রেল সেতুই নির্মিত হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দল গত রমজানে এসেছিলেন। আবার আসবেন তারা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৮০ দশকে সেতুর মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। এরপর থেকে জোড়াতালি দিয়ে সেতুটি টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ২০০১ সালে সেতুটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এরপর নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় সাধারণ মানুষকে।
সুত্র: আজাদী