মানুষের মধ্যে পুলিশভীতি দূর করাই মূল উদ্দেশ্য: ওসি মহসিন

সোহেল আহমেদ,চট্টগ্রাম থেকে:
মো: দিদারুল আলম চট্টগ্রাম নগরের চিহ্নিত একজন মাদক ব্যবসায়ি। পুলিশের ভয়ে এ ধরনের ব্যবসায়িরা সাধারনত পালিয়ে বা গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। সেই দিদারুল আলম কিনা সাতটি মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে চলে আসলেন পলিশ কর্তার কাছে। গল্প নয় সত্যি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন নিজে উদ্ভাবন করেছেনে ‘হ্যালো ওসি’ নামে ব্যতিক্রম পন্থা।
তার এই উদ্যোগে সাধারন মানুষ দারুন সুফল পেতে শুরু করেছে। যেখানে মানুষ তার নানা প্রয়োজনে থানা পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা ছিলো, ওসি মহসিনের নয়া উদ্যোগ ‘হ্যালো ওসি” নামের বুথ নিয়ে পুলিশ এখন মানুষের দোড়গোড়ায় পৌছে যাচ্ছেন।
ওসি মহসিনের এই অশাধারন উদ্যোগ শুধুই অপরাধ নিয়ন্ত্রণের নয়া কৌশল। এটি পুলিশের অবকাশ যাপনের কোন রুটিন ওয়ার্কও নয়। যারা সুপথে ফিরতে চায় তাদের জন্য সহযোগিতা করার জন্যই এ উদ্যোগ বলে ওসি মোহাম্মাদ মহসিন ফেজবুক পেজে অবগত করেছেন। তিনি জানান, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে আমরাও তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।
জানা গেছে,কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মহসিন এর এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে নগরে ইতিবাচক সারা ফেলেছে। মানুষের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়াতে সহায়ক ভুমিকা পালন করছে হ্যালো ওসি। সাধারন মানুষ ছাড়াও নিজ বাহিনীতেও এর সুনাম ছড়িয়ে পরেছে। আর তাই সিএমপি কমিশনার ইতিমধ্যে ঘোষনা করেছেন প্রত্যেকটি থানায় এরকম উদ্যোগ চালু করার।
প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অনলাইন নিউজ পত্রিকা “দৈনিক বরিশাল ২৪.কম” – কে ওসি মোহাম্মাদ মহসিন মুঠোফোনে জানান,আমরা মানুষের সেবায় সার্বক্ষনিক কাজ করছি। মানুষের মধ্যে যেনো কোন ধরনের পুলিশ ভীতী কাজ না করে সে জন্যই “হ্যালো ওসি” নামক নতুন কার্যক্রম। আমরা নিজেরা গিয়েই মানুষ এর সমস্যা শুনব এবং আইনের মাধ্যমে তার সমাধান করার চেষ্টা করছি।
এদিকে ওসি মহসিন এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এ পুলিশ কর্মকর্তা ব্যতিক্রমী কিছু সেবা দিয়ে অনন্য হয়েছেন তার বাহিনীতে। জনগণের কথা শুনতে পাড়ায়-মহল্লায় হাজির হচ্ছেন মোহাম্মদ মহসিন। ‘হ্যালো ওসি’ নামে বুথ খুলে শুনছেন মানুষের নানা অভিযোগ। আর বুথে বসেই চেষ্টা করছেন তাদের সমস্যা সামাধানের। এলাকাবাসীর সাড়াও পাচ্ছেন তিনি। অনেকে তাৎক্ষণিক পুলিশি সেবা পেয়ে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন পুলিশের এ কর্মকর্তাকে।
সুত্রমতে, শুধু এই উদ্যোগই নয়, আরও ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন মোহাম্মদ মহসিন। আর সেসবের মূল্যায়ন করেছে পুলিশ প্রশাসন। প্রথমবারের মতো পুলিশের কোনও পুরুষ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সম্প্রতি লাভ করেছেন ‘বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ পুরস্কার।
গত ২৭ জুন কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশসেরা ১০ নারী কর্মকর্তার সঙ্গে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এসময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীও উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য,প্রতি সপ্তাহে তার থানার আওতাধীন কোনও না কোনও এলাকায় গিয়ে মানুষের কথা শুনছেন জানিয়ে মহসিন বলেন, ‘আমি ঠিক করেছি, প্রতি সপ্তাহে আমার থানার আওতাধীন একটি করে এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলব। বিট পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে সেখানকার লোকজনকে আগে থেকে বলে রাখছি তারা যেন কথা বলতে আসেন।’
মোহাম্মদ মহসিন এর আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বাকলিয়া থানার ওসি ছিলেন। ওই থানার সময়েও তিনি বেশ কিছু উদ্যোগ নেন। মাদক নির্মূল,নারী নির্যাতন রোধ, ইভটিজিং নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিসহ জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভূমিকা রেখে পুলিশ কর্মকর্তা মহসিন নিজ বাহিনীতেও নিজেকে ব্যতিক্রমী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।
সোহেল আহমেদ/ দৈনিক বরিশাল ২৪.কম
সংবাদটি শেয়ার করুন