যদি স্বীকার করতে বন্ধু তুমি হতে জয়ী
বিনোদন নিউজ: গানে গানে বন্ধুত্বের প্রকাশ- আছে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি সব ভাষাতেই। আছে আধুনিক, ব্যান্ড আর সিনেমার গানে।
‘শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু, হে প্রিয়/ মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিয়ো’- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা পূজা পর্যায়ের এ গান বলে দেয়, জীবনে বন্ধুর পরশ কতখানি মূল্যবান। প্রকৃতি পর্যায়ের আরেকটি গানে তিনি লিখেছেন ‘বন্ধু, রহো রহো সাথে/ আজি এ সঘন শ্রাবণপ্রাতে’।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘কোথা চাঁদও আমার’ গানটিতে মূলত বন্ধুর বন্দনাই করা হয়েছে। গানের অন্তরাতে তিনি লিখেছেন, ‘ওগো বন্ধু আমার হতে কুসুম যদি/ রাখিতাম কেশে তুলে নিরবধি’।
প্রিয়তম অর্থে বন্ধু শব্দের ব্যবহার সঙ্গীতে ব্যবহার হয়েছে অনেক। যেমন নজরুলই লিখেছেন, ‘নাইতে এসে ভাটির স্রোতে কলসী গেল ভেসে/ সেই দেশে যাইও রে কলসী বন্ধু রয় যে দেশে।’
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে বন্ধু নিয়ে গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটি এখনও শ্রোতাহৃদয় ব্যাকুল করে তোলে। উনিশ শতকের শেষার্ধে অনুরাগ ছবিতে আবদুল জব্বারের গাওয়া ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি, তুমি আমার সাধনা’ গানটির কথাই বলছি। বন্ধু ছবিতে সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাব’ গানটিও ভীষণ আবেদনময়।
এ ছাড়া বিশেষ গায়নভঙ্গির কারণে রুনা লায়লার গাওয়া গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও আলাউদ্দীন আলী সুরারোপিত ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম দেখা পাইলাম না’ গানটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
এন্ড্র– কিশোরের গাওয়া প্রিন্স মাহমুদ সুরারোপিত আধুনিক গান ‘বন্ধু সে জন, যে তোমার দুঃখতে পাশে থাকে’ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জনপ্রিয়তার তালিকায় উঠে আসে। বন্ধু আমার চলচ্চিত্রে ‘একটাই কথা আছে বাংলাতে’ গানটি ভীষণ জনপ্রিয় হয় বিংশ শতাব্দীতে। বাপ্পি লাহিড়ী এবং মুন্না আজিজের গাওয়া এ গান এখনও আবেদন হারায়নি।
ব্যান্ড শিল্পীদের কণ্ঠেও রয়েছে বন্ধুত্বের জয়গান। জেমসের গাওয়া ‘যদি স্বীকার করতে বন্ধু’ গানটি তো সুপারডুপার হিট হয়। ফিলিংসের গান ‘তবে বন্ধু নৌকা ভেড়াও’, চিরকুটের ‘বন্ধু গো’, ওয়্যারফেজের ‘বন্ধু’, শূন্য ব্যান্ডের ‘বন্ধুর গান’ শিরোনামের গানগুলো তরুণদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে। একক শিল্পীরাও গেয়েছেন বেশ কিছু গান। সেগুলোও কম-বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।
যেমন পার্থ বড়ুয়ার গাওয়া ‘ও বন্ধু তোকে মিস করছি ভীষণ’। তপুর গাওয়া ‘বন্ধু’ নতুন করে চিনিয়েছে প্রিয় বন্ধুকে। এ ছাড়া জয় শাহরিয়ারের কথা ও সুরে মিনারের গাওয়া ‘বন্ধু’ গানটিও উল্লেখ করার মতো। বন্ধুত্বের ছোঁয়া আছে ভারতের বাংলা গানেও। যেমন ‘বন্ধু তোমায় এ গান শোনাব’ চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের হলেও দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় গানটি। আর কবির সুমন ও অঞ্জন দত্তের ‘দুটো বন্ধু’ শিরোনামের গানটি তো বন্ধুত্বের শেকলকে আরও দৃঢ় করে।
বলিউডে বন্ধুত্ববিষয়ক হিন্দি গানের অভাব নেই। সত্তরের দশকে শোলে সিনেমার ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে’ ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল গোটা ভারতেই। আধুনিক সময়ের গানগুলোর মধ্যে কৃষ্ণ কুমার কুন্নাথের (কেকে) গাওয়া গান ‘ইয়ারো’ মুখে মুখে ঘুরেছে সবার।
অভিজিৎ এবং উদিত নারায়ণের গাওয়া ‘দোস্তি কেয়া হ্যায়’ গানটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায় ২০০৮ সালে। এদিকে পুরানি জিন্স চলচ্চিত্রের গান ‘ইয়ারি ইয়ারি’-ও পেয়েছে শ্রোতাদের ভালোবাসা। রং দে বাসন্তি চলচ্চিত্রে এ আর রাহমানের সুরে ‘রুবারু’ গানটি ২০০৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর সুপারডুপার হিট হয়।
ইংরেজিতেও বন্ধু নিয়ে জনপ্রিয় গানের অভাব নেই। অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যান্ড কুইনের গান ‘ফ্রেন্ডস উইল বি ফ্রেন্ডস’ প্রকাশ পায় ১৯৮৬ সালে। জেমস টেইলরের একটি গান ‘ইউ হ্যাভ গট অ্যা ফ্রেন্ড’ প্রকাশ পায় ১৯৭১ সালে।
প্রকাশের পর থেকে বন্ধুত্ব নিয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশের গানের তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে গান দুটি। এ ছাড়া ফু-ফাইটারস ব্যান্ডের গান ‘ফ্রেন্ড অব আ ফ্রেন্ড’, মার্সমেলো অ্যান্ড এনা ম্যারির ‘ফ্রেন্ডস’, মাইলি সাইরাসের ‘ট্রু ফ্রেন্ড’, ব্রুনো মার্সের ‘কাউন্ট অন মি’ গানগুলো অন্যতম।