সংগ্রামী এক জীবনের নাম বেনাপোলের শিউলি রানী

ফারুক হাসান,বেনাপোল: জীবন সংগ্রামে বিজয়ী এক নারী শিউলি রানী দে।জীবনের সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল নেশাগ্রস্ত স্বামীর নিষ্ঠুরতায়। স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে চলে যায় তার স্বামী।বাঁচার অবলম্বন হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়া নারী হেরে যায়নি, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন জীবনসংগ্রামে।
শিশু বাচ্ছাকে নিয়ে যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে জীবন যাপন করছিলেন ঠিক সে সময় তার পাশে এসে দাঁড়ায় বেনাপোল পৌরসভা। শিউলী রানী দে বেনাপোল পৌরসভার পাঠবাড়ীর বাসিন্দা।
তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি-৩) সহায়তায় বেনাপোল পৌরসভা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্থনৈতিক যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলেন নিজেকে। তিনি এখন আত্মপ্রত্যয়ী একজন সফল উদ্যোক্তা।
তাঁকে সম্প্রতি ঢাকায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট, শাড়ি, ওড়নাসহ নগদ অর্থ প্রদান করেন। আন্তনিভর্রশীল নারী হিসেবে তাঁকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
শিউলি রানী জানান, মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। দুই বছরের মাথায় কোলজুড়ে আসে একটি শিশুপুত্র। কিন্তু নেশাগ্রস্ত স্বামী দিলীপ কুমার দীর্ঘদিন অত্যাচার করে একদিন আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
সংসার চালানোর জন্য শিউলি সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। কিন্তু দক্ষতার অভাবে এ কাজে সফল হননি। তবে দমে যাননি শিউলি রানী দে। এমনই এক সময় ইউজিআইআইপি-৩ আয়োজিত উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জানতে পারেন বেনাপোল পৌরসভা দুস্থ, অসহায়, অবহেলিত নারীদের বিনা মূল্যে বিভিন্ন
প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে থাকে।
তিনি আশার আলো দেখতে পান। শিউলি রানী এই প্রকল্পভুক্ত বেনাপোল পৌরসভার জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান
বাস্তবায়নের আওতায় তিন মাসের একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেন। প্রশিক্ষণে দক্ষতার পরিচয় দেওয়ায় বেনাপোল পৌরসভা তাঁকে সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
একই সময়ে তিনি পৌরসভা থেকে হস্তশিল্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতে কাজ শুরু করেন। চলতে থাকে সেলাই ও হস্তশিল্পের ব্যবসা। তিনি নকশিকাঁথাসহ বিভিন্ন শোপিস পণ্য তৈরি করে বিক্রি করেন। এ থেকে মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
এভাবেই সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন একসময়ের সব হারানো শিউলি রানী। এ ব্যাপারে বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, ‘বেনাপোল পৌরসভায় একটি আইটি কর্নার ও বেকার অসহায় নারীদের জন্য একটি সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলি।
এখান থেকে তারা বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেদের পাঁয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি বেনাপোল পৌরসভা
সমাজের বেকার ও অসহায় মানুষের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছে।
সেখান থেকে বহু বেকার যুবক ও অসহায় নারী নিজেদের কর্মসংস্থানের পথ বেছে নিয়েছে।