হঠাৎ তছনছ পুলিশ দম্পতির সুখের সংসার
শামীম আহমেদ: ‘আমি কিছুই চাই না। আমি আমার স্বামীকে চাই। আমি আমার সুখের সংসার চাই। কি হবে আমার আর আমার শিশুসন্তানের।’
অঝোরে কেঁদে কেঁদে ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কাভার্ড ভ্যান চাপায় নিহত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া মিকেলের স্ত্রী মৌসুমি মৌ।
হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় সত্যিই মৌয়ের সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিবরিয়ার মৃত্যু হয়। বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) সার্জেন্ট ছিলেন কিবরিয়া।
এদিকে গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুতে নিজ বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পাশাপাশি তার বন্ধু ও সহকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা শোকবার্তা দিয়েছেন।
বাপ্পী নামে কিবরিয়ার এক বন্ধু ফেসবুকে লিখেছেন, বন্ধু, তোমার অকালে চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছি না। আল্লাহ তোমাকে জান্নাতবাসী করুক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোলাম কিবরিয়া নামে পুলিশ মহলে পরিচিত থাকলেও মূলত বন্ধু-বান্ধবের কাছে মিকেল নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বাড়ি হলেও শহরে থাকতেন কিবরিয়া। পুলিশের দায়িত্ব পালন শেষে বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতেন। সবসময় শান্ত ও হাসিখুশি ছিলেন কিবরিয়া।
এর আগে সোমবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একটি কাভার্ডভ্যান কিবরিয়াকে চাপা দিয়ে চলে যায়। বরিশালের বাকেরগঞ্জগামী কাভার্ডভ্যানটিকে সিগন্যাল দিলে চালক তা অমান্য করে চালিয়ে যায়। এরপর সার্জেন্ট কিবরিয়া গাড়িটিকে ধাওয়া করে ধরার চেষ্টা করলে তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়।
পরে সেখানে থাকা ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মামুন বন্দর থানা পুলিশের সদস্য ও স্থানীয়দের সহায়তায় সার্জেন্ট কিবরিয়াকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢামেকে পাঠানো হয়।
নিহত সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ২০১৫ সালে যোগ দেন পুলিশে।
এদিকে কিবরিয়া পুলিশে যোগ দেয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বরিশালে কোনো বন্ধু-বান্ধব গেলে আপ্যায়ন না করে ছাড়তেন না। এসব কারণে বন্ধু ও শিক্ষক মহলে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া।