‘হুজুগে এশিয়ান’! রেণু’র গণপিটুনির নেতৃত্বে হৃদয় নামের ‘হৃদয়হীন’ বখাটে!
মো: নুরুজ্জামান: শুধু বাঙালী কিংবা বাংলাদেশী নয়, বিশ্বব্যাপী হুজুগে চ্যাম্পিয়ন পুরো এশিয়ানরাই। এইসব ‘ছেলেধরা’ গুজবের পেছনে ভারত নেপাল, বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলংকার আইন শৃংখলা বাহিনী কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি। যদিও শিশু অপহরণের পেছনে কোথাও কোথাও পাচার কিংবা কিডনী বিক্রীর মত অপরাধের কিছুটা সত্যতা রয়েছে। শিশু অপহরণের ঘটনায় গত দুবছরে এশিয়ার দেশ ভারত বাংলাদেশ শ্রীলংকা পাকিস্তান ও নেপালে দায়েরকৃত এ সংক্রান্ত অভিযোগের শীর্ষে রয়েছে ইন্ডিয়া। এ-ই হুজুগে ক্রেজে শুধু বাংলাদেশের তুবার দুর্ভাগা জননী ই নয়, আসামের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আজম ও এ বছর ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এসব পাশবিক আক্রমনের অগ্রভাগে হুজুগে তরুণদের সংখ্যাই বেশী মর্মে গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।
গত দুই বছরে ভারতে এ-ই গুজব গণপিটুনির ৭৮ টি ঘটনায় মোট ৩৭ জন নিরীহ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। পুলিশী তদন্তে এদের কেউ ই কথিত ‘ছেলেধরা’ বলে প্রমাণিত হয়নি। এ-ই গুজবের পেছনে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়া WhatsApp এ আপলোডকৃত একটা ভিডিওকেই দায়ী করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘পাগলী’ টাইপের কিংবা সন্দেহভাজন অবস্থায় ঘোরাফেরা করা সরল মনা লোকজনই গণপিটুনির মত অমানবিক ঘটনার শিকার হয়েছেন।
আমার স্কুল জীবনে এ-ই ছেলেধরা আতংকে বহুবার লেখাপড়া বন্ধ করতে হয়েছে। এমনকি স্কুলে রেজুলেশন করেই ছুটি দেয়া হয়েছিল বেশ ক’দিন। তবে আজকাল ‘ভিডিও ভাইরাল’ এ-র যুগে এসব নিষ্ঠুর আক্রমণের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। বাড্ডার রেণু বেগমের হুজুগে খুনের নেতৃত্ব দেয়া বখাটের নাম হৃদয়! অথচ এ-র হৃদয়হীন কান্ড দাঁড়িয়ে দেখেছে কিংবা খায়েশের বশে ভিডিও করেছে শতাধিক মানুষ। সুতরাং সন্দেহ হলেই কাউকে ধরবেন, মারবেন, পিটিয়ে হত্যা করবেন কিংবা ভিডিও করবেন, আর আপনি দন্ডবিধির ৩০২ কিংবা ৩০৭ ধারার আসামী হবেন না, সেটা কিন্তু ভাববেনন না।
ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভার এ-র মত জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায় এধরনের কাল্পনিক কিংবা দুএকটা অর্ধপ্রমাণিত ঘটনার ছবি বা কিসসা বারবার রটিয়ে পুরো দেশেই অস্থিরতা তৈরী করা হয়। এতে সন্তানের অভিভাবকদের মধ্যে আতংক তৈরীর সাথে সাথে প্রতিদিন বে আইনী পাশবিক ও দলবদ্ধ আক্রমনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কাউকে এমন সন্দেহ হলে তাকে প্রয়োজনে পুলিশে তুলে দিন। কলসেন্টার ৯৯৯ এ ফোন করেও গণপিটুনির মত দুর্ঘটনা রোধে আপনিও সহায়ক হতে পারেন। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: মো: নুরুজ্জামান, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চল ও ডিভিশনাল ভুসম্পত্তি অফিসার,রাজশাহী।