‘হ্যালো ওসি’ উদ্যোগের প্রশংসায় মার্কিন পুলিশ
অনলাইন নিউজ: নগরীর কোতোয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজারের এয়াকুব নগরীর লইট্যাঘাটায় বিট পুলিশের আয়োজনে ‘হ্যালো ওসি’ বুথে যখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলছিলেন,তখন সেখানে এসে উপস্থিত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্টের জাস্টিস বিভাগের অধীনে বাংলাদেশে কর্মরত তিন কর্মকর্তা।
রোববার (২১ জুলাই) বিকেলে জনগণের সাথে দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের শুরু করা ‘হ্যালো ওসি’ উদ্যোগের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল।তারা হলেন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক স্টিভ লেটিক, যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন পুলিশের ব্রায়ান মুনোজ ও জয় পেনথেনি। তারাও মনোযোগ দিয়ে শুনলেন ওসি মহসীনের সঙ্গে সেবাপ্রার্থী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথোপকথন।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস, ইপিট্যাপের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট তানিক মুনীর বলেন, ‘আমি ১৩ বছর ধরে মার্কিন পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশে কাজ করছি। তবে গত দুই বছর ধরে সিএমপির সঙ্গে কাজ করছি।আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, আপনাদের থানার ওসি মহসীন ভাইয়ের চালু করা কনসেপ্ট যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস, ইপিট্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের ১৩টি দেশের পুলিশ গ্রহণ করেছে।
তারাও এই ‘হ্যালো ওসি’ কনসেপ্টটি কার্যকর করছে।’ এসময়, চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজার এয়াকুব নগরীর লইট্যাঘাটায় পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন ৫০ বছরের বৃদ্ধা জাহানারা বেগম বলেন তার সমস্যার কথা। স্বামী-সংসার নিয়ে দিনে এনে দিনে খেলেও পরিবারে ছিল না কোনও অশান্তি না থাকলেও কয়েক মাস ধরে তার ছেলে পাড়ার মাদকসেবীদের সঙ্গে মিশে নিজেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।
এ নিয়ে তাদের পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকে। কিন্তু ছেলেকে কোনওভাবে দমানো যায় না। মা-বাবা নিজেরাই অসহায়। থানা-পুলিশ করবে সেরকম কোনও যোগাযোগ নেই। কিন্তু নিজ এলাকায় স্বয়ং থানার ওসি গেছেন শুনে সেখানে হাজির পিঠা বিক্রেতা জাহানারা। ওসিকে কাছে পেয়েই খুলে বললেন নিজের সমস্যার কথা। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারকে নির্দেশ দিলেন জাহানারার ছেলেকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিষয়টি সমাধানের।
শুধু জাহানারা নন এরকম আরো ছয়জন ভুক্তভোগী ‘হ্যালো ওসি’ বুথে এসে নিজেদের সমস্যার কথা মন খুলে ওসিকে বলেছেন, ওসিও দিয়েছেন যথাসাধ্য সমাধান। আর এসব কথা সশরীরে হাজির থেকে শুনলেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন পুলিশ কর্মকর্তাও। ‘হ্যালো ওসি’র বুথের কার্যক্রম দেখতে আসা বিদেশী পুলিশ কর্মকর্তাদের সমানে ওসি মহসীন জানতে চান কে কে মাদক পেশা ছেড়ে ভালো হতে চায়?
তখন শাহ আলম মিন্টু, তার স্ত্রী পুতুল এবং নুর নাহার নামে তিন মাদক বিক্রেতা সবার সামনে প্রতিজ্ঞা করলেন, আর কখনো মাদক ব্যবসা করবেন না। জানালেন কেন তারা এই মরণনেশা মাদকের ব্যবসায় জড়ালেন সেটাও। তখন ওসি জানতে চান মাদকসক্ত হওয়ার কারণ কী? এক নারী জানালেন টেনশনের কারণে মাদকাসক্ত হচ্ছে অনেকে।
আরেক যুবক বললেন, হতাশা থেকে। আবার আরেকজন বললেন, সঙ্গদোষে পড়ে মাদকে জড়াচ্ছেন অনেকে। তখন ওসি মহসীন বলেন, ‘এসব সমস্যার কারণে যদি আপনারা মাদকে জড়ান, তাহলে আমি একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ওসি হিসেবে কী টেনশন, হতাশা আর সঙ্গ দোষকে অ্যারেস্ট করতে পারব? এই ক্ষমতা কি পুলিশের আছে? এসব কিভাবে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করবে?’
তখন উপস্থিত সবাই জানান, এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজের ইচ্ছাশক্তিই প্রধান।
তখন ওসি বলেন, ‘তাহলে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজের ইচ্ছাশক্তিই যখন প্রধান তাহলে আপনারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন, ছেলেমেয়েকে নিয়ন্ত্রণ করুন। তাহলে মাদক অনেকাংশে নির্মূল হবে।’
এ সময় ওসি মোহাম্মদ মহসীন জঙ্গিবাদের কুফল, জঙ্গিবাদ নিয়ে কোরআন হাদিসের ব্যাখা দিয়ে উপস্থিত জনগণকে বোঝান জঙ্গিবাদ নিয়ে। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকার তথা আইনশৃংখলা বাহিনীর কঠোর মনোভাবের কথাও স্মরণ করে দেন তিনি। সকল ভালো কাজে পুলিশের সহযোগিতার আশ্বাস যেমন দেন, ওসি মহসীন তেমনি ইভটিজিং বখাটেপনা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন সিএমপির আলোচিত এ পুলিশ কর্মকর্তা। ‘হ্যালো ওসি’র এসব কার্যক্রম দেখে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্টের জাস্টিস বিভাগের ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তা।
তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের পুলিশিং ব্যবস্থা আর যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশিং ব্যবস্থা ভিন্ন। তাই আমরা দুই দেশের পুলিশ পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ভিত্তিতে সেবা প্রদানের পদ্ধতিগুলো শেয়ারিং করি। তবে জনবহুল এলাকায় কিভাবে জনগণের মাঝে পুলিশি সেবা দেওয়া হয়, এখানে এসে সেটা নতুন করে দেখলাম। এসব ব্যতিক্রমী কার্যক্রম দেখে আমরা মুগ্ধ। এই ধরনের ব্যতিক্রমী পুলিশি কার্যক্রম আমরা চাই বাংলাদেশের সব থানায় ছড়িয়ে যাক।’
এর আগে পুলিশ সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে এ বছরের শুরুতে কোতোয়ালী থানা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন স্টলের ভিড়ে ‘হ্যালো ওসি’ নামে একটি ব্যতিক্রমী বুথ স্থাপন করেন ওসি মহসীন।
ব্যতিক্রমী এই বুথে বসে ওসি মহসীন নিজেই সরাসরি সেবাপ্রার্থী জনগণের সঙ্গে কথা বলেছেন, দিয়েছেন তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান। সেই সময় ব্যতিক্রমী এই বুথের কার্যক্রম ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল পুলিশ ও জনগণের মাঝে। এরপর সম্প্রতি ১০ জুলাই কোতোয়ালী থানার বিআরটিসির চৌদ্দ জামতলা এলাকায় ‘হ্যালো ওসি’ বুথ নিয়ে হাজির হন ওসি মোহাম্মদ মহসীন।
‘হ্যালো ওসি’ কার্যক্রমটি নগরবাসীর পাশাপাশি নজর কেড়েছে সিএমপির অভিভাবক মাহবুবর রহমানেরও।
গত বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে সিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনায় মাহবুবর রহমান নগরীর ১৬ থানার ওসিদের এ কার্যক্রম চালু করার নির্দেশ দেন।