‘৫ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফিরবে না’
অনলাইন নিউজ: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুই বছরে একজনও ফেরত পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। উখিয়া-টেকনাফের পরিবেশ, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সব বিষয়ে বিপর্যয়সহ নিরাপত্তা হুমকীর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা গণ হত্যা দিবস পালন করেছে রোহিঙ্গারা। তবে টেকনাফে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যায় ওই এলাকায় এখনো থমথমে অব্স্থা বিরাজ করছে। ফলে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসের সকল প্রস্তুতি নিলেও ক্যাম্প ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে জানা গেছে। ফলে ওই ক্যাম্পগুলোতে কোন কর্মসূচী ছিলনা। এমনকি এনজিও সংস্থা গুলো আপাতত কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নির্বিচারে সাধারন রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন, ধর্ষন ও হত্যা করে। এ দিবসটিকে গনহত্যা (জেনোসাইড) দিবস হিসেবে উল্লেখ করে দ্বিতীয় বারের মতো পালন করছে রোহিঙ্গারা।
দিবসটি উপলক্ষে টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। খন্ড খন্ড মিছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সড়কে ‘আঁরা বার্মাত ন যাইয়ুম’ ‘আরাঁ রোহিঙ্গা হত্যার বিচার চাই’ শ্লোগানে মুখরিত করে তুলে। এসময় রোহিঙ্গা নেতা, শিশু ও কিশোরেরা উত্থাপিত দাবী আদায় না হলে স্বদেশে ফিরে যাবেনা বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছে। দাবী গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরাসরি নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, আকিয়াব জেলায় আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়ীতে ফেরত, কারাগারে বন্ধি রোহিঙ্গাদের মুক্তি, হত্যা, ধর্ষনের বিচার, অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা প্রদান।
রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে উখিয়ার ক্যাম্প (নং-৪) এ দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত মহাসমাবেশে ৫ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফিরবে না। কারণ, মিয়ানমার সরকারের উপর আস্থা রাখা বোকামি। এসব কথা বলেন রোহিঙ্গা নেতারা। এ সময় উপস্থিত লাখো রোহিঙ্গা তাদের অধিকার ফিরে পেলে মিয়ানমার ফিরবেন বলে মত দেন।
আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটির নেতা মাস্টার মুহিব উল্লাহ বলেন, মিয়ানমার সেনা ও মগদের নির্যাতনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে মহাসমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে শুধু অধিকার ফিরে পেতে। আমরা নিজেদের দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া কখনো ফিরবো না।
এদিকে ঊনছিপ্রাং রইক্ষ্যং পুটিবনিয়া ক্যাম্প হতে রোহিঙ্গা মাঝি, শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিশাল মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এক পসভায় রোহিঙ্গা নেতা আমান উল্লাহ মাঝি, মোঃ রফিক, শাব্বির, ইউসুফ, আবদুল আমিন, জামিল, আলীসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। এতে বক্তারা তাদের উত্থাপিত দাবী আদায় নাহলে স্বদেশে ফিরে যাবেনা বলে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চচারন করেন।
এছাড়া মধুছড়া ক্যাম্প ও ১৪ নং ক্যাম্পসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে সমাবেশ করছে রোহিঙ্গারা।
এসময় রোহিঙ্গাদের হাতে ফেস্টুন, প্লেকার্ড ও ব্যানারে চেয়ে যায় এবং সবার গায়ে সাদা টি-শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত ছিল ।
এব্যাপারে রইক্ষ্যং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (নং- ২২) ইনচার্জ মোঃ নাজমুল বলেন, অত্যন্ত সু-শৃঙ্খলভাবে রোহিঙ্গারা সভা সমাবেশ করেছে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এজন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর টহল জোরদার রাখা হয়েছে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলার জাদিমুরায় গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কর্তৃক ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যায় ওই এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসের সকল প্রস্তুতি নিলেও ক্যাম্প ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে জানা গেছে। ফলে ওই ক্যাম্পগুলোতে কোন কর্মসূচী ছিলনা।
রোহিঙ্গা আগমনের দূ’বছর পূর্ণ হলেও এরই মাঝে দুই দফা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিয়েছিল সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি না হওয়ায় ভেস্তে যায় সব প্রস্তুতি। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে উখিয়া-টেকনাফের জনগন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা আসার পরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য নিজেদের ইচ্ছা মতো সব কিছু করে যাচ্ছে। ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর বনাঞ্চলের পাশাপাশি দখলে নিয়েছে হাট-বাজার। মানবিকতার দোহায় দিয়ে প্রায় ২০০ এনজিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করায় বেড়ে গেছে গাড়ির চলাচল। ফলে ২ ঘন্টার রাস্তা যেতে সময় লাগছে ৫/৬ ঘন্টা। এখানেই শেষ নয়, রোহিঙ্গাদের কারণে জায়গা মিলছে না গণ পরিবহনে। জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে চেকপোস্টে। সবকিছু মিলিয়ে স্থানীয়রা চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। হুমকীর মুখে পড়েছে পরিবেশ ও নিরাপত্তা।
টেকনাফ সহ-ব্যবস্থানা কমিটির নির্বাহী সদস্য আব্দুর রহমান হাশেমী জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে বনজ সম্পদ ও বন্য প্রাণী অভয়ারন্যের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। উজাড় হওয়া বনভূমির মধ্যে বিশেষ করে হাতি ও মায়া হরিনের আবাস্থল এবং চারণ ভূমি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বন ধ্বংসের কারণে উখিয়া-টেকনাফে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক দিক খুবই প্রকট আকার ধারন করছে। যা ষড়ঋতুর বাংলাদেশে টেকনাফ-উখিয়ায় কেবল দুই-তিন ঋতু পরিলক্ষিত হচ্ছে। দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বনভূমিতে সবুজায়ন করা প্রয়োজন।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক,সাংবাদিক কাইছার পারভেজ চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা কোণঠাসা। যত্রতত্র রোহিঙ্গাদের বিচরনের ফলে যাতায়াত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা চরম ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া বন উজাড় করে বসবাস করায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা জরুরী।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, রোহিঙ্গা গনহত্যা দিবসে রোহিঙ্গারা যাতে আইনশৃংখলা অবনতি করতে না পারে সেজন্য টেকনাফের সকল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
মাদক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বর্তমানে যেসব চালান ধরা পড়ছে সবই আনছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার বর্ডার কাছাকাছি হওয়ায় কিছুতেই তাদের থামানো যাচ্ছেনা। পাশাপাশি অন্য অপরাধও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি।