রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়, সৃষ্টিকর্তাই সমাধান করে রেখেছেন

তাহমিনা আকতার, বিশেষ প্রতিনিধিঃ মানুষ যখন অভাব অনটনে থাকে কিংবা একটি স্বচ্ছল পরিবারে আচমকা যখন অর্থের টানাপোড়েন শুরু হয়, ঠিক তখনই বন্ধু বা স্বজনদের অনেকেই শান্তনার বানী দিয়ে থাকেন। বলেন রিজিক নিয়ে চিন্তা করিও না, এর ব্যবস্থা সৃষ্টিকর্তা ঠিক করে রেখেছেন। কঠিন হতাশাগ্রস্থ মানুষটিও তখন সৃষ্টিকর্তার উপর তাকিয়ে থাকে।
এবার আসি মূল আলোচনায়। ২০১৯ সালের নভেম্বররে দিকের ঘটনা। বরিশালের একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল পরিচালনার জন্য দায়িত্ব পেয়েছিলেন মনিরুজ্জামান। পদ-পদবী নিয়ে খুশি অখুশির ব্যাপারে কখনোই তার তেমন কোনো আগ্রহ ছিলো না। কারণ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পদের মুল্যায়ন সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন তিনি। বেকার না থেকে কাজে সময় ব্যয় করবেন বলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরিটা নিয়েছিলেন তিনি। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে অনার্স পাশ করা মনিরুজ্জামানের সম্মানি ভাতা ধরা হলো মাত্র ৩ হাজার ৩ শত টাকা। এই সম্মানি ভাতা ওই স্কুলের অনেক সিনিয়র সহকারি শিক্ষকের চেয়েও অনেক কম বলে জানিয়েছেন তিনি। দৈনিক বরিশাল২৪.কম-কে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে বেকার জীবনের নানা হতাশা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
মনিরুজ্জামান বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে চাকরি করে এতো কম সম্মানী এটা নিয়ে তার বেশ কিছুদিন মানুষিকভাবে টর্চারিং পোহাতে হয়েছে। কি করছেন, কি করবেন এমন টেনশন সারাক্ষণ। নিজের অশান্তির কথা কারও কাছে প্রকাশ না করলেও তার চেহারা দেখে সহকর্মীরা বুঝতে পারলেন। মেনে নিতে পরামর্শ দিলেন। সাংসারিক খরচের কথা বিবেচনা করে চাকরিটা না ছেড়েেএর পাশা-পাশি শুরু করলেন টিউশুনি। তারপর প্রতিমাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করলেন। এই টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন।
২০২০ সালের মার্চ মাসের স্কুলের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। এসময় খবর এলো দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ধরা পরেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করেছে! ১৩ মার্চ কোনো ভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলটিও বন্ধ ঘোষণা করেছে কতৃপক্ষ।
স্কুল পরিচালকের বহু টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে এমন ঘোষণায় মনিরুজ্জামানের সম্মানী ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে স্কুল কতৃপক্ষ।
করোনায় সরকারি নির্দেশনা মেনে তখন সবাই একপ্রকার গৃহবন্দি। প্রাইভেট, টিউশুনি, চাকরি সবইতো বন্ধ। অন্য সকলের মতো তার কোথাও সঞ্চিত জমা টাকাও নেই। তাহলে কি খাবেন, কি করবেন, শহরের বাড়িতে বাসা ভাড়াই বা দেবেন কি কিভাবে? কদিন আগেও যে অসহায় বৃদ্ধ মহিলাকে ৫ শতো টাকার জিনিস পত্র কিনে দিয়ে নিজে সমাজসেবক সাজতে চেয়েছিলেন কয়েক দিনের ব্যবধানে আজ তিনি অপরের দান-খয়রাতের দিকে তাকিয়ে!
হঠাৎ একদিন নিজের কষ্টের কথাগুলো জানিয়ে ফেসবুক লাইভ করেন মনিরুজ্জামান। এই লাইভ দেখে বরিশালের বিশিষ্ট রাজনীতিক ও শিক্ষানুরাগী ইকবাল হোসেন তাপস, চট্টগ্রামের মানবিক শওকত হোসেন, পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী মেহেবুব, মেহেদী হাসান টিটু, ব্যংকার মেহেদী হাসান সজীব, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.আবদুল্লাহ শুভ, সমাজ সেবক গোপাল চন্দ্র শীল, মহিউদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট মোজাম্মেল হক অপু , বাউল শিল্পী ফজলুল সরকার সহ অসংখ্য গুণীমানুষ আর্থিক সহয়তা দিতে আগ্রহী হন বলে জানান মনিরুজ্জামান।তিনি বলেন, ফেসবুক লাইভের পর এমন হয়েছিল যে, মোবাইলে কেউ একজন কল দিলেই মনে হতো একদিনের বাজারের টাকা চলে এসেছে। এভাবে মানবিক মানুষের মানবিক সহযোগিতা পেয়ে ভিষণ উপকৃত হলেন মনিরুজ্জামান।দুঃস্বময়ে মানুষের এমন সহযোগিতা দেখে তার মা নামাজের পাটিতে বসে দোয়া করছেন সবার জন্য। সন্তানের উপর চলমান অভাব অনটন ঘোঁচানোর জন্য।
চড়ম দূর্দিনের সময় এমন মানবিক বন্ধুদের জন্য মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কৃতজ্ঞ প্রকাশ করে মনিরুজ্জামান বলেন, রিজিক নিয়ে আসলেই আমরা অহেতুক দুশ্চিন্তা করি, আমরা কেনো জানি সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখতে পারছিনা! অথছ জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত, কোন দুশ্চিন্তা নয়, সৃষ্টিকর্তাই সকল সমস্যার সমাধান রেখেছেন বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন বরিশালের এই কৃতিসন্তান।
লেখকঃ তাহমিনা আকতার, বিশেষ প্রতিনিধি ও প্রধান উপদেষ্ঠা, দৈনিক বরিশাল২৪.কম।