ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে যেভাবে জনপ্রিয় হন এরশাদ
অনলাইন নিউজ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময় আলোচিত ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে টানা নয় বছর দেশ পরিচালনা করেছেন। তারপর আমৃত্যু রাজনীতিতে টিকে ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ নয় বছরের শাসনামলে দেশের উন্নয়নে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। উপজেলা পদ্ধতির প্রচলনসহ বিভিন্ন কাজের কারণে পেয়েছিলেন পল্লীবন্ধু উপাধি।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় উপজেলা পদ্ধতির প্রচলন করেন। উপজেলা পরিষদসমূহের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালের মে মাসে।
১৯৮৬ সালে এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলিম, অধিকাংশ নাগরিকের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়টি বিবেচনা করে ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষনা করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার মাধ্যমে এরশাদ বাংলাদেশকে এক নতুন পরিচয় দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে নতুনভাবে পরিচয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেয়াটা এক কথায় খুব সহজ ছিলো না। স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সংবিধান রচনা করা হয় ১৯৭২ সালে । তখন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের কথা উল্লেখ ছিল না। ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। সেই সংশোধনীতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রথম উদ্যোগ এরশাদই নিয়েছিলেন। ওই সংশোধনীতে সংবিধানের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের পরেই ২(ক) নম্বর অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
বাংলাদেশে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন, যে কোনো সরকারের উচিত সব সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতি বজায় রেখে সবার ন্যায্য হিস্যা মোতাবেক সেবা প্রদান করা।
সে লক্ষ্যে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করলেও সঙ্গে সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থের বিষয়টিও জেনারেল এরশাদ সংবিধানে যোগ করেছিলেন।
১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রঘোষণা করেন। তার এ ঘোষণায় মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এছাড়াও সরকারিভাবে মসজিদের বিদ্যুতের বিল মওকুফ ও শুক্রবারকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার কারণে মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে ক্রমেই প্রিয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।
১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ওই বছরই এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে কয়েকজন নাগরিক রিট আবেদন করেন।
দীর্ঘদিন মামলাটি আদালতে বিভিন্ন উত্তাপ ছড়ালেও ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ মহামান্য আদালত রিটটি খারিজ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখেন।
ঐতিহাসিক এ রায়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগের প্রতি লক্ষ রাখা হয়েছে। তাই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহামান্য আদালতের এ রায়কে সশ্রদ্ধ স্বাগত জানিয়েছে।
ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার সিদ্ধান্ত দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাহিদার ভিত্তিতেই নিতে হয়েছিল।
২০১৬ সালে সংবিধান সংশোধনে বিশেষ সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সাংবাদিকদের জানিয়েছেলেন, তাঁর দল সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দিতে চায় না।
গণভবনে ওই সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে থাকবে, এবং তার দল আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বা বিসমিল্লাহির রহমানের রহিম বাদ দিতে চায় না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসারে এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।
ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেয়ার মতো ঐতিহাসিক পদক্ষেপের জন্য দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে জীবনভর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় থাকবেন এরশাদ।