রাস্তায় পঁচে যাচ্ছে মানবতা পোকায় খাচ্ছে বিবেক, চিকিৎসা নিয়ে ছুঠছে পুলিশ
সোহেল আহমেদ, চট্টগ্রাম থেকে: না খেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে জীবন মৃত্যুর সন্ধীক্ষণে অভিজাত এলাকার রাস্তায় পরে থাকা এক নারী অসুখের যন্ত্রণায় ছঠফট করে কাতরাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে থাকা এক পায়ের পঁচা ক্ষত নিয়ে কি কষ্টটাই না পাচ্ছেন বেওয়ারিশ বৃদ্ধা নারী! চারদিকের বৃত্তবান বা সাধারণের পদচারনা দেখে হয়ত কিছুই বলতে পারছেনা।
নিষ্ঠুর পৃথিবীতে জন্মই ছিলো বিষাধময়! পঁচা শরীরের গন্ধে নাকে রুমাল পেচিয়ে যাচ্ছে মানুষ। কেউ হয়ত একটু দাড়িয়ে থেকে মৃত্যু পথযাত্রী বৃদ্ধা নারীর করুণ আকতি ও আল্লাহ ও আল্লাহ শব্দটি শুনে মিচকি হাসি দিয়ে চলে যাচ্ছে নিজের আখের গোছোতে। কিন্তু কেন?
মানুষের প্রতি মানুষের এতোটুকু সহানুভূতি হচ্ছেনা কেন? ৬০ বয়সের কোন এক পিতা শেষ বয়সে টাকার অভাবে ট্রিটমেন্ট করতে পারছেনা। ফলে তার এক পা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পঁচা পা থেকে বের হচ্ছে পোকা মাকর।
মানুষ দাড়িয়ে দেখছে। উপভোগ করছে বৃদ্ধ মানুষটির অসয়ত্ব নিয়ে পরে থাকার চিত্র। কেউ এগিয়ে আসছে না। দুই টাকা দশটাকা দান করে কেউ হয়ত কিছুটা হলেও সহানুভূতি দেখাচ্ছে। কিন্তু এটাতো যথেষ্ঠ নয়? কে করবে ওই পায়ের অপারেশন?
তিনদিনের জ্বর নিয়ে পলিথিনের একটি ছাপড়ি মেরে কোন ভাবে বাসকরছে রাস্তার এক পাশে। ক্ষুদার যন্ত্রনায় শুধু আল্লাহকে ডাকছে। পরপারে যাবার জন্য অধির আগ্রহে শুধু আল্লাহ আল্লাহ বলে পৃথিবীর মানুষের প্রতি হয়ত ঘৃণাটুকু প্রকাশ করতে চাইছে ৭০ বছরের মৃত্যু পথযাত্রী নারী। কি এক সমাজ আমাদের মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে পারছেনা। এভাবে আর কতদিন ?
সাগরপারের নামকরা চিকিতসাসেবা কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ডাক্তারি পড়ার সময় বইয়ের পাতায় সে লেখা যেন জ্বলে ভিজে হাঁড়িয়ে গেছে` আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব,গরীব দু:খী অসহায় মানুসের সেবা করব‘।
এই মেডিকেল কলেজের সামনেই পরে আছে অসহায় নারী। একটি পায়ের পঁচা ক্ষত সেই সব ডাক্তারদের জানিয়ে দিচ্ছে “হে ডাক্তার তোমাদের মানবতায় আমার মতই পঁচন ধরেছে! হে মানুষ তোমাদের বিবেককে আমার মতই ঠুকরে ঠুকরে খচ্ছে পোকায়‘‘।
আহারে জীবন! আহারে মানবতা! তাহলেকি ডিজিটাল দেশে মরে যাচ্ছে মানবতা? না…………! হেরে যেতে পারেনা মানবতা। যতদিন আছে শওকত হোসেন এর মত এক মানবিক পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এর মানবিক ইউনিটের টিমলীডার শওকত হোসেন অসহায় মানুষের সেই পঁচা পায়ের চিকিতসা করছেন।
মানবতার টানে পঁচা শরীরের সেই দূর্গন্ধ শওকত হোসেন এর শরীরে সয়ে গেছে। একজন পুলিশ এর দ্বায়িত্বের বাহিরে গিয়ে নিয়মিত এসব মানুষকে অব্যহত সেবাদান ইতিমধ্যে সিএমপির পুলিশ বিভাগকে করেছে আলোকিত। সিএমপির এ প্রশংসনীয় কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটকে করেছে মানুষের প্রতি আস্থাশীল।
কিন্তু……….! কিন্তু শওকত হেসেন এর অবিরাম মানবিক সেবাদানে সমাজের অসহায় দুস্তরা হয়ত ক্ষনিকের জন্য উপকৃত হতে পারছে। প্রশ্ন হলো এসব মানুষের তো মাথা গোজার কোন ঠাই নেই। যখন যেখানে অবস্থান সেখানেই রাত ,সেখানেই জীবন যাপন। অথছ রাতের আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভেজা অসহায় এরকম শত শত বেওয়ারিশ মানুষের শুয়ে থাকার পাশেই হয়ত উচু ভবনে আয়েশি জীবনযাপণ করছেন বৃত্তবানরা।
আমি মনেকরি অনেক বৃত্তবানদের ইচ্ছে আছে সময় নেই। অনেকের আছে সময় অর্থ নেই। আবার অনেক বৃত্তবানদের অঢেল পরিমান অব্যবহ্র জায়গা রয়েছে। শুধু একটা উদ্যোগ প্রয়োজন। দেশের দ্বিতীয় রাজধানী চট্টগ্রামে অসহায় মানুষদের আর্তনাদের একটু সাড়া দেয়া প্রয়োজন।
সুতরাং আর দেরি নয় চাই একটা উদ্যোগ গ্রহণ। বেওয়ারিশ মানুষের জন্য অন্তত একটু মাথা গোজার ঠাই মেলে। তাহলে বিফলে যাবেনা মানবিক পুলিশ শওকত হোসেনদের মত মানবিক মানুষের নিরলস প্ররিশ্রম। ওই পঁচন ধরা নারী পুরুষ ব্যাথার যন্ত্রণায় আর করবেনা চিতকার। দিবেনা আমাদের অভিশাপ। ওরা সুস্থ্য থাকলে আপনি আমিও সুস্থ্ থাকব। ভাল থাকবে বাংলাদেশ। জয় হবে মানবতার………………!
সম্পাদনায়: মনিরুজ্জামান (সোহেল আহমেদ)।