আমি আবারও শিক্ষকের হাতে বেত্রাঘাত খেতে চাই - দৈনিক বরিশাল ২৪ দৈনিক বরিশাল ২৪আমি আবারও শিক্ষকের হাতে বেত্রাঘাত খেতে চাই - দৈনিক বরিশাল ২৪

প্রকাশিতঃ জুলাই ০২, ২০২২ ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ
A- A A+ Print

আমি আবারও শিক্ষকের হাতে বেত্রাঘাত খেতে চাই

মনিরুজ্জামানঃ

আমি আবারও শিক্ষকের হাতের বেতের বাড়ি খেতে চাই! চাই আবার সেই স্কুল জীবনে ফিরতে! সত্যি বলছি, যদি
সুযোগ থাকে তবে তাই করবো।

কেহ আমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবেন? ছাত্র -শিক্ষকের বন্ধুত্বের বিপরীতে সম্প্রতি গাজীপুরের অপ্রত্যাশিত ঘটনা আমাকে চরম মর্মাহত করেছে। প্রিয় ছাত্রের হাতে মার খেয়ে জীবন দিবেন শিক্ষক। এটা কি মানা যায়? এসব কল্পনা করার সাহসও পেয়েছি? আজ কেনো এমনটা দেখতে হচ্ছে? শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’র এ কেমন অবনতি! যার হাত ধরে অ, আ, ক, খ,,, শিখেছি সেই শিক্ষক কিনা প্রতিপক্ষের কাঠগড়ায়,,,,,,?

এবার মূল আলোচনায় আসি।
আমি তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে পানি পানের অযুহাত দিয়ে বার বার বাহিরে যেতাম। আর দরজায় দাড়িয়ে থাকা সাবিনা’র ( ছদ্মনাম) সাথে ঝগড়াঝাটিতে মেতে উঠতাম। রেজাল্ট শ্রেণি শিক্ষকের হাতে নিয়মিত বেতের বাড়ি। অথছ আমার বিরুদ্ধে সাবিনার দেয়া বেশির ভাগ নালিশই ছিলো উদ্দেশ্য মুলক।

একদিন বশির স্যার ক্লাসে এসেই আমাকে আর সাবিনা কে দাড় করালেন। সাবিনা আমার বিরুদ্ধে লাইব্রেরীতে হেড স্যারের নিকট নালিশ দিয়েছে। বশির স্যারের আক্ষেপ শ্রেণি শিক্ষক হয়েও তাঁর অজান্তে হেড স্যারের কাছে নালিশ মানে আমার বড় কোন অপরাধ। স্যার, দুজন কে জিজ্ঞেস করছেন আর শুধু আমাকেই পেটাচ্ছেন। আমার কোন কথা শুনছেন না। আমি যখন পেটুনি খাচ্ছি সাবিনা তখন মুচকি হাসছে। এরপর বশির স্যার রোল কল করছিলেন। বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম একজোড়া বেত নিয়ে মতিন স্যার (হেড স্যার) আমাদের ক্লাসের দিকে আসছেন। মতিন স্যারের হাঁটা ভঙ্গি আর বশির স্যারের আগের পেটুনি দেওয়ার বার্তা যা বোঝার বুঝে গেলাম। মতিন স্যার ক্লাসে প্রবেশ করতেই বশির স্যার সহ আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম।

মতিন স্যার (প্রধান শিক্ষক) , হাতে জোড়া বেত নিয়ে মার দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর রাগান্বিত চেহারা দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে বুক। ক্লাসে সাবিনা কেনো শুধু আমার বিরুদ্ধে নালিশ দেয়, মতিন স্যারের এমন প্রশ্ন? উত্তর দিতে গিয়ে মুখ থেকে টু টা শব্দ বের করতে পারছিলাম না। অতঃপর ভাগ্যে যা ছিলো। আমার দুই হাতে এক নিশ্বাসে যতোক্ষণ পেরেছেন শো শো করে পেটালেন। ব্যাথার যন্ত্রণায় সে-দিন মা বাবা করে চিৎকার করে কেঁদেও রক্ষা পাইনি। আমার কান্নার শব্দে পাশের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে এসে মতিন স্যারের মার দেয়ার দৃশ্য দেখে তারাও আতঙ্ক হয়ে পরেছিলো। ফের নালিশ শুনলে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দিবেন বলে শাসিয়ে গেলেন।

ক্লাসে চাউর হয়ে গেলো সাবিনা আমার সাথে প্রেম করতে চাইছে। আমি সারা দেইনা বলেই তাঁর মিথ্যা নালিশ এর শিকার আমি। বন্ধু সজিব আমাকে সেদিন ওর বাড়িতে নিয়ে গেলো। দুপুরের ওদের বাড়িতে খাবার খেলাম। খালাম্মা কে ( সজিবের মা) এসে আমাকে সাবিনা পছন্দ করে বলে হাসি ঠাট্টা করলেন। আসলেই কি তাই!

একদিন সাবিনাকে ডেকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলাম। আমার কথা শুনতেই সাবিনা হাশি দিয়ে বাড়ি চলে গেলো। পরদিন দেখি লম্বা একটা রচনা লিখে এনেছে। তাঁরপর আমাদের সম্পর্ক চলতে থাকলো। কদিন পর দেখি সাবিনা অন্য এক সিনিয়র ছাত্রের সাথে এখানে সেখানে বসে কথা বলছে। আমাকে আর তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। আর আমি তো সাবিনা’র চরিত্র বোঝার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম।

রোমান্টিক একাধিক চিঠি আমিও সাবিনা কে দিয়েছি। এখানেই আটকে গেলাম। সাবিনা একাধিক ছেলের সাথে প্রেম করছে। আমি বাঁধা দিয়ে আটকাতে পারিনি। সাবিনার সুন্দর চেহারার কাছে আমি কিছুই না। ছেলেরা অনেক টাকা ভাঙছে সাবিনা’র পেছনে।

সাবিনা এবার আমাকে সরাতে আবারও নালিশ এর আশ্রয় নিলো। এবার নাছিমা ম্যাডাম আমাকে বকা দিতে দিতেই ক্লাসে ঢুকলেন। নাছিমা ম্যাডাম অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। তিনি এক জন শিক্ষকই ছিলেন না, আদর্শ সন্তান গঠনে একজন মায়ের ভূমিকা পালনে নাছিমা ম্যাডাম অতুলনীয় ছিলেন। আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসতেন। মাঝেমধ্যে আমি তাঁর বাসায় বাজার করে দিতাম। তো সেদিন ইচ্ছে মতো পেটালেন। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পরামর্শ দিলেন।

ক্লাস ফাঁকি দেয়া, পড়া না পাড়ার জন্য মুছা স্যারের বেতের বাড়ি খাওয়া থেকেও বঞ্চিত হতামনা। কামিং এ্যন্ড গোয়িং বাট ডুইং ফর নাথিং মার দেয়ার সময়ে মুছা স্যারের এটি ছিলো কমন ডায়লগ। যেখানে বাড়ি দিতো পুড়ে পুড়ে যেতো। ডায়লগ বলতে বলতে কষিয়ে মারতেন। ইংরেজিতে দূর্বল থাকায় আমার জন্য অনেকটা নিয়মিত ছিলো সে মার খাওয়া। একদিন খেলে বাকি ৫দিন স্কুলের পড়া শিখা হয়ে যেতো।

মার খাওয়ার সময় শিক্ষকদের প্রতি মন খারাপ হতো। কিন্তু যেদিন পড়া শিখে দিতাম আর স্যার আমার সুনাম করতেন খুব ভালো লাগতো। পথে ঘাটে স্যারদের দেখলে আগে সালাম বিনিময় করতাম। স্যারের রেসপন্স দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই নরম মানুষটা ক্লাসে কতোটা কঠিন। সকালের শাসনের অভিমান টা বিকেলের ভালোবাসা পেয়ে সত্যি ভুলে যেতাম। ছাত্রজীবনে শিক্ষকদের মার খেতে খেতে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করলাম। আর সেই সাবিনা’র ৪বিষয় রেজাল্ট খারাপ।

এসএসসির পর আমরা বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়ে স্কুল জীবন এর জৌলুশ হারিয়ে ফেলেছি। সাবিনার সাথে আর দেখা সাক্ষাৎ নেই। শুনেছি তিনবার দিয়েও সে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুতে পারেনি। তারমধ্যে আবার কোন ছেলেকে নিয়ে বাবা মা এর অবাধ্য হয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। সে বিয়েও একবছর স্থায়ী হয়নি।

সম্প্রতি গাজীপুরের উৎফল নামের এক শিক্ষকের প্রাণ গেছে তাঁরই শাসন করা প্রিয় ছাত্রের স্টাম্পের আঘাতে। মিডিয়ার কল্যাণে ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। আতঙ্ক উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক সহ সর্বমহলে। প্রায় সবারই একই প্রশ্ন আমরা কোন সমাজে পাঁ রেখেছি? হঠাৎ ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে এতো দুরত্ব তৈরি হলো কেন? ছাত্ররা একজন শিক্ষা গুরুর প্রতি এতো নির্দয় হলো কেনো? ওই ছাত্রের প্রেমের সম্পর্কে বাঁধা সহ নানা অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করেছিলেন নিহত শিক্ষক। থানায় মামলা হয়েছে। পিতা সহ অভিযুক্ত ছাত্রকে আইনের আওতায় এনেছে পুলিশ। এখন বিচার হবে। জানিনা এর ভবিষ্যৎ কি হবে। ধারণা করছি অভিযুক্ত ছাত্রের শিক্ষা জীবনের আলো ফিরে পাওয়া সহজ হবেনা হয়তো।

আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রথম শিক্ষাটাই হলো পারিবারিক শিক্ষা। যেটি বাবা মা পরম আদর স্নেহ করে দিয়ে থাকেন।

সরকার স্কুলে বেত এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করেছে। ফলে শিক্ষকদের শাসন ক্ষমতা কমে গেছে বলে মনেকরি। অপর দিকে বাবা মাও আগের মতো সন্তানদের পারিবারিক শিক্ষা দিতে অনেকাংশে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ-সব মিলিয়ে একটা সামাজিক অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার চুড়ান্ত উদাহরণ গাজীপুরের ঘটনা।

কোনো ব্যক্তি, দলমত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কাউকে উদ্দেশ্য করে আমার লেখা নয়। শিক্ষা গুরুর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের আরো সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের সহযোগিতা করতে হবে অভিভাবকদের। সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষেরও এগিয়ে আসা খুবই জরুরী। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সহ চলমান আইন টিকে পূণর্বিবেচনা করা যেতে পারে।

সর্বোপুরি কোনো শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীর অমঙ্গল চায় না এটা আমাদের সকলের বুঝতে হবে। কেননা প্রকৃত শিক্ষা পেয়ে আলোকিত মানুষ হতে হলে শিক্ষা গুরুর বেতের আঘাত কতটা জরুরি ছিলো উপরে উল্লেখিত ছাত্র জীবনের ঘটনা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি মাত্র।

লেখকঃ মনিরুজ্জামান, সাংবাদিক ও কলাম লেখক, সহসম্পাদক, দৈনিক বরিশাল২৪.কম। 

দৈনিক বরিশাল ২৪

আমি আবারও শিক্ষকের হাতে বেত্রাঘাত খেতে চাই

শনিবার, জুলাই ২, ২০২২ ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেটঃ জুলাই ০২, ২০২২ ২:১৬ অপরাহ্ণ

মনিরুজ্জামানঃ

আমি আবারও শিক্ষকের হাতের বেতের বাড়ি খেতে চাই! চাই আবার সেই স্কুল জীবনে ফিরতে! সত্যি বলছি, যদি
সুযোগ থাকে তবে তাই করবো।

কেহ আমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবেন? ছাত্র -শিক্ষকের বন্ধুত্বের বিপরীতে সম্প্রতি গাজীপুরের অপ্রত্যাশিত ঘটনা আমাকে চরম মর্মাহত করেছে। প্রিয় ছাত্রের হাতে মার খেয়ে জীবন দিবেন শিক্ষক। এটা কি মানা যায়? এসব কল্পনা করার সাহসও পেয়েছি? আজ কেনো এমনটা দেখতে হচ্ছে? শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’র এ কেমন অবনতি! যার হাত ধরে অ, আ, ক, খ,,, শিখেছি সেই শিক্ষক কিনা প্রতিপক্ষের কাঠগড়ায়,,,,,,?

এবার মূল আলোচনায় আসি।
আমি তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে পানি পানের অযুহাত দিয়ে বার বার বাহিরে যেতাম। আর দরজায় দাড়িয়ে থাকা সাবিনা’র ( ছদ্মনাম) সাথে ঝগড়াঝাটিতে মেতে উঠতাম। রেজাল্ট শ্রেণি শিক্ষকের হাতে নিয়মিত বেতের বাড়ি। অথছ আমার বিরুদ্ধে সাবিনার দেয়া বেশির ভাগ নালিশই ছিলো উদ্দেশ্য মুলক।

একদিন বশির স্যার ক্লাসে এসেই আমাকে আর সাবিনা কে দাড় করালেন। সাবিনা আমার বিরুদ্ধে লাইব্রেরীতে হেড স্যারের নিকট নালিশ দিয়েছে। বশির স্যারের আক্ষেপ শ্রেণি শিক্ষক হয়েও তাঁর অজান্তে হেড স্যারের কাছে নালিশ মানে আমার বড় কোন অপরাধ। স্যার, দুজন কে জিজ্ঞেস করছেন আর শুধু আমাকেই পেটাচ্ছেন। আমার কোন কথা শুনছেন না। আমি যখন পেটুনি খাচ্ছি সাবিনা তখন মুচকি হাসছে। এরপর বশির স্যার রোল কল করছিলেন। বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম একজোড়া বেত নিয়ে মতিন স্যার (হেড স্যার) আমাদের ক্লাসের দিকে আসছেন। মতিন স্যারের হাঁটা ভঙ্গি আর বশির স্যারের আগের পেটুনি দেওয়ার বার্তা যা বোঝার বুঝে গেলাম। মতিন স্যার ক্লাসে প্রবেশ করতেই বশির স্যার সহ আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম।

মতিন স্যার (প্রধান শিক্ষক) , হাতে জোড়া বেত নিয়ে মার দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর রাগান্বিত চেহারা দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে বুক। ক্লাসে সাবিনা কেনো শুধু আমার বিরুদ্ধে নালিশ দেয়, মতিন স্যারের এমন প্রশ্ন? উত্তর দিতে গিয়ে মুখ থেকে টু টা শব্দ বের করতে পারছিলাম না। অতঃপর ভাগ্যে যা ছিলো। আমার দুই হাতে এক নিশ্বাসে যতোক্ষণ পেরেছেন শো শো করে পেটালেন। ব্যাথার যন্ত্রণায় সে-দিন মা বাবা করে চিৎকার করে কেঁদেও রক্ষা পাইনি। আমার কান্নার শব্দে পাশের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে এসে মতিন স্যারের মার দেয়ার দৃশ্য দেখে তারাও আতঙ্ক হয়ে পরেছিলো। ফের নালিশ শুনলে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দিবেন বলে শাসিয়ে গেলেন।

ক্লাসে চাউর হয়ে গেলো সাবিনা আমার সাথে প্রেম করতে চাইছে। আমি সারা দেইনা বলেই তাঁর মিথ্যা নালিশ এর শিকার আমি। বন্ধু সজিব আমাকে সেদিন ওর বাড়িতে নিয়ে গেলো। দুপুরের ওদের বাড়িতে খাবার খেলাম। খালাম্মা কে ( সজিবের মা) এসে আমাকে সাবিনা পছন্দ করে বলে হাসি ঠাট্টা করলেন। আসলেই কি তাই!

একদিন সাবিনাকে ডেকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলাম। আমার কথা শুনতেই সাবিনা হাশি দিয়ে বাড়ি চলে গেলো। পরদিন দেখি লম্বা একটা রচনা লিখে এনেছে। তাঁরপর আমাদের সম্পর্ক চলতে থাকলো। কদিন পর দেখি সাবিনা অন্য এক সিনিয়র ছাত্রের সাথে এখানে সেখানে বসে কথা বলছে। আমাকে আর তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। আর আমি তো সাবিনা’র চরিত্র বোঝার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম।

রোমান্টিক একাধিক চিঠি আমিও সাবিনা কে দিয়েছি। এখানেই আটকে গেলাম। সাবিনা একাধিক ছেলের সাথে প্রেম করছে। আমি বাঁধা দিয়ে আটকাতে পারিনি। সাবিনার সুন্দর চেহারার কাছে আমি কিছুই না। ছেলেরা অনেক টাকা ভাঙছে সাবিনা’র পেছনে।

সাবিনা এবার আমাকে সরাতে আবারও নালিশ এর আশ্রয় নিলো। এবার নাছিমা ম্যাডাম আমাকে বকা দিতে দিতেই ক্লাসে ঢুকলেন। নাছিমা ম্যাডাম অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। তিনি এক জন শিক্ষকই ছিলেন না, আদর্শ সন্তান গঠনে একজন মায়ের ভূমিকা পালনে নাছিমা ম্যাডাম অতুলনীয় ছিলেন। আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসতেন। মাঝেমধ্যে আমি তাঁর বাসায় বাজার করে দিতাম। তো সেদিন ইচ্ছে মতো পেটালেন। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পরামর্শ দিলেন।

ক্লাস ফাঁকি দেয়া, পড়া না পাড়ার জন্য মুছা স্যারের বেতের বাড়ি খাওয়া থেকেও বঞ্চিত হতামনা। কামিং এ্যন্ড গোয়িং বাট ডুইং ফর নাথিং মার দেয়ার সময়ে মুছা স্যারের এটি ছিলো কমন ডায়লগ। যেখানে বাড়ি দিতো পুড়ে পুড়ে যেতো। ডায়লগ বলতে বলতে কষিয়ে মারতেন। ইংরেজিতে দূর্বল থাকায় আমার জন্য অনেকটা নিয়মিত ছিলো সে মার খাওয়া। একদিন খেলে বাকি ৫দিন স্কুলের পড়া শিখা হয়ে যেতো।

মার খাওয়ার সময় শিক্ষকদের প্রতি মন খারাপ হতো। কিন্তু যেদিন পড়া শিখে দিতাম আর স্যার আমার সুনাম করতেন খুব ভালো লাগতো। পথে ঘাটে স্যারদের দেখলে আগে সালাম বিনিময় করতাম। স্যারের রেসপন্স দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই নরম মানুষটা ক্লাসে কতোটা কঠিন। সকালের শাসনের অভিমান টা বিকেলের ভালোবাসা পেয়ে সত্যি ভুলে যেতাম। ছাত্রজীবনে শিক্ষকদের মার খেতে খেতে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করলাম। আর সেই সাবিনা’র ৪বিষয় রেজাল্ট খারাপ।

এসএসসির পর আমরা বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়ে স্কুল জীবন এর জৌলুশ হারিয়ে ফেলেছি। সাবিনার সাথে আর দেখা সাক্ষাৎ নেই। শুনেছি তিনবার দিয়েও সে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুতে পারেনি। তারমধ্যে আবার কোন ছেলেকে নিয়ে বাবা মা এর অবাধ্য হয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। সে বিয়েও একবছর স্থায়ী হয়নি।

সম্প্রতি গাজীপুরের উৎফল নামের এক শিক্ষকের প্রাণ গেছে তাঁরই শাসন করা প্রিয় ছাত্রের স্টাম্পের আঘাতে। মিডিয়ার কল্যাণে ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। আতঙ্ক উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক সহ সর্বমহলে। প্রায় সবারই একই প্রশ্ন আমরা কোন সমাজে পাঁ রেখেছি? হঠাৎ ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে এতো দুরত্ব তৈরি হলো কেন? ছাত্ররা একজন শিক্ষা গুরুর প্রতি এতো নির্দয় হলো কেনো? ওই ছাত্রের প্রেমের সম্পর্কে বাঁধা সহ নানা অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করেছিলেন নিহত শিক্ষক। থানায় মামলা হয়েছে। পিতা সহ অভিযুক্ত ছাত্রকে আইনের আওতায় এনেছে পুলিশ। এখন বিচার হবে। জানিনা এর ভবিষ্যৎ কি হবে। ধারণা করছি অভিযুক্ত ছাত্রের শিক্ষা জীবনের আলো ফিরে পাওয়া সহজ হবেনা হয়তো।

আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রথম শিক্ষাটাই হলো পারিবারিক শিক্ষা। যেটি বাবা মা পরম আদর স্নেহ করে দিয়ে থাকেন।

সরকার স্কুলে বেত এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করেছে। ফলে শিক্ষকদের শাসন ক্ষমতা কমে গেছে বলে মনেকরি। অপর দিকে বাবা মাও আগের মতো সন্তানদের পারিবারিক শিক্ষা দিতে অনেকাংশে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ-সব মিলিয়ে একটা সামাজিক অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার চুড়ান্ত উদাহরণ গাজীপুরের ঘটনা।

কোনো ব্যক্তি, দলমত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কাউকে উদ্দেশ্য করে আমার লেখা নয়। শিক্ষা গুরুর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের আরো সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের সহযোগিতা করতে হবে অভিভাবকদের। সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষেরও এগিয়ে আসা খুবই জরুরী। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সহ চলমান আইন টিকে পূণর্বিবেচনা করা যেতে পারে।

সর্বোপুরি কোনো শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীর অমঙ্গল চায় না এটা আমাদের সকলের বুঝতে হবে। কেননা প্রকৃত শিক্ষা পেয়ে আলোকিত মানুষ হতে হলে শিক্ষা গুরুর বেতের আঘাত কতটা জরুরি ছিলো উপরে উল্লেখিত ছাত্র জীবনের ঘটনা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি মাত্র।

লেখকঃ মনিরুজ্জামান, সাংবাদিক ও কলাম লেখক, সহসম্পাদক, দৈনিক বরিশাল২৪.কম। 

প্রকাশক: মোসাম্মাৎ মনোয়ারা বেগম। সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: ইঞ্জিনিয়ার জিহাদ রানা। সম্পাদক : শামিম আহমেদ যুগ্ন-সম্পাদক : মো:মনিরুজ্জামান। প্রধান উপদেষ্টা: মোসাম্মৎ তাহমিনা খান বার্তা সম্পাদক : মো: শহিদুল ইসলাম ।
প্রধান কার্যালয় : রশিদ প্লাজা,৪র্থ তলা,সদর রোড,বরিশাল।
সম্পাদক: 01711970223 বার্তা বিভাগ: 01764- 631157
ইমেল: sohelahamed2447@gmail.com
  কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে বরিশাল, ৭ জনের প্রাণহানি   ইপিজেড শিল্পাঞ্চলের আয়োজন, শতাধিক পরিবারে ঈদ সামগ্রী বিতরণ   কমতে পারে ছুটি, শনিবারও স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত   লাইমলাইট গ্রামার স্কুলে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন   ঈশ্বরদীতে ২ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ   আমেরিকায় জাহাজের ধাক্কায় ধসে পড়ল সেতু, বহু হতাহতের শঙ্কা   ইপিজেড স্মার্ট শিল্পাঞ্চল, চট্টগ্রাম এর স্বাধীনতা দিবসের আলোচানা সভা অনুষ্ঠিত   হালিশহর মডেল স্কুলে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, চোখের সামনে অঙ্গার হলো তরতাজা প্রাণ   বরিশাল বিভাগীয় সমিতি, চট্টগ্রাম-এর উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত   অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে বরিশাল বিভাগীয় সমিতিঃ জাকির হোসেন   হালিশহর মডেল স্কুলের নতুন সভাপতি মোহাম্মাদ হোসেন, আশরাফ আলী সম্পাদক নির্বাচিত   বরিশাল প্রেসক্লাব সভাপতির মৃত্যুতে বরিশাল বিভাগীয় সমিতি, চট্টগ্রাম এর শোক প্রকাশ   কাজী বাবুল আর নেই, শোকে স্তব্ধ বরিশালের মিডিয়া অঙ্গন   জীবনকে বদলে দেওয়া এক গুণী মানুষকে যেভাবে হাড়িয়ে ফেললাম   যুগান্তর পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো রিপোর্টার হলেন সাংবাদিক এস এন পলাশ   কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে বরিশাল বিভাগীয় সমিতি‘র (ইপিজেড শিল্পাঞ্চল) এর প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত   বরিশালের মামুনের সফলতা হতে পারে অনেকের অনুপ্রেরণাঃ তাপস   ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার বার্ষিক শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত   নিউমুরিং এর মরহুম আবদুস সবুর সওঃ এবাদত খানার সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত