ঠকাবেন তো ঠকবেন!
অনলাইন নিউজ: মনে করুন আপনি একজন ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা বড় ব্যবসায়ী। আপনার একটি ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে আছে, যাকে আপনি প্রতিদিন সকালে স্কুলে দিয়ে আসেন, আবার ক্লাস শেষে বাসায় নিয়ে আসেন। কিন্তু স্কুল চলাকালীন তার প্রতি খেয়াল রাখার উপায় নেই। আপনার শিশুসন্তানটি স্কুল সময়ের ফাঁকে দোকান থেকে প্রায়ই এটা-ওটা কিনে খায়। হঠাৎ একদিন সে তীব্র পেটব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। দৌড়ে তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন।
ডাক্তার বললেন, গ্যাস্ট্রিক থেকে ব্যথার উৎপত্তি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলেন। এদিকে আপনার ব্যবসার পরিধি দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে মুনাফাও; কিন্তু সেটা বৈধ উপায়ে নয়। খাদ্যে ভেজাল দেয়া আর ভোক্তাদের ঠকানোর যত কৌশল আছে, তার সবই আপনি প্রয়োগ করেন। আপনি নিজেও জানেন এটা অন্যায় এবং দেশ ও জাতিকে জেনেশুনে বিষ খাওয়াচ্ছেন। আপনার লাভ একটাই- আপনি খুব দ্রুত নিজের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি করছেন।
আবার কোনো এক সন্ধ্যায় আপনার মেয়েটা অজ্ঞাত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে জানতে পারলেন সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। আপনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আপনার জীবনের সব অর্জন দিয়ে হলেও আপনার ছোট্ট সোনামণির প্রাণ রক্ষা করা চাই। কিন্তু তার বেশিদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, যা ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছেন। কেন এ অবস্থা সৃষ্টি হল? খবর নিয়ে জানতে পারলেন, আপনার মেয়ে স্কুলের দোকান থেকে এটা-ওটা কিনে খেত এবং সেই দোকানের জিনিসপত্রের সিংহভাগই আপনি সরবরাহ করতেন।
নিমিষেই আপনার নীল আকাশটা বিকট বজ্রধ্বনিতে কালো বর্ণ ধারণ করল। আপনি আপনার আদরের সোনামণির পরোক্ষ হত্যাকারী হতে চলছেন! তাই ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলব, সবাইকে মেরে নিজে একা বেঁচে থাকার নাম বেঁচে থাকা নয়, বরং সবাইকে নিয়ে বাঁচার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ আর প্রশান্তি রয়েছে। খাদ্যে ভেজাল না দিয়ে, ভোক্তাদের ক্ষতি না করে বৈধ উপায়ে আপনি যখন আপনার ব্যবসা পরিচালনা করবেন, তখন আপনার ব্যবসায় লাভ কিছু কম হতে পারে; কিন্তু এর মতো সুখের আর তৃপ্তির উপার্জন আর কিছু হতে পারে না।
সরকার দেশে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। ভোক্তাদের অধিকার যেন সঠিকভাবে রক্ষা হয়, তা মাথায় রেখে ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে আপনাকে সরকার সবরকম সহযোগিতা দেবে। খাদ্যে ভেজালের মাধ্যমে অধিক মুনাফা করা মানে আপনি শুধু ধনী হচ্ছেন তা নয়, পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন। পুরো জাতিকে ধংস করে দেয়ার জন্য খাদ্যে ভেজাল মেশানোই যথেষ্ট।
দেশে ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ খাদ্যে ভেজাল। সরকারের একার পক্ষে পুরো দেশে খাদ্যে ভেজাল রোধ করা সম্ভব নয়। সচেতন হতে হবে যারা ব্যবসায়ী কিংবা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদেরও। নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে নয়, দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত একজন কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুন। ভেজালের বিরুদ্ধে আপনিও সোচ্চার হোন এবং আপনার অধিকার বুঝে নিন। মনে রাখবেন, দিন শেষে আমরা সবাই ভোক্তা।
মো. ওবায়দুল হক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়