মায়ের জন্য নতুন কাপড় নিয়ে ফিরছিল নজরুল!
ইকবাল হোসেন তালুকদার, নবীগঞ্জ থেকেঃ মাদ্রাসাছাত্র নজরুল ইসলাম (২০) ছিল ভবঘুরে প্রকৃতির। হুটহাট বাড়ি ছেড়ে পালাতেন। দেখা মিলত না কয়েক মাস। বাবা-মা তার এমন আচরণ মেনেই নিয়েছেন। কিন্তু ছেলে যে লাশ হয়ে ফিরবে, সেটা কেউ মানতে পারছেন না। মা বিলাপ করছেন আর বলছেন, তার জন্য যে নয়া কাপড় নিয়ে আসছিল নজরুল। লখিন্দরটা (নজরুল) না এলেই ভালো হতো। দুই ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত ১৬ জনের মধ্যে নজরুল ও রয়েছেন।
গত মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তার মা-বাবাকে মোবাইলে নজরুলের নিহত হবার কথা জানান। নজরুল ইসলাম হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে। পরিবারের লোকজন জানান, নজরুল ছিলেন ভবঘুরে প্রকৃতির লোক।
তিনি শ্রীমঙ্গলের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই টমটম চালাতেন। দুই মাস, তিন মাস পর বাড়ি আসতেন। কোথায় থাকেন, সঠিক ঠিকানা কাউকে বলতেন না। নজরুলের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘আমার লখিন্দর (ছেলে) দুই মাস আগে আইলো, আবার আইলো আমার লাগি নয়া কাপড় আনবো, আজকা আমার লখিন্দর নয়া কাপড় পইরা বাড়ি আইবো।’
এই বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। জোসনা বেগম আরও বলেন, সে টমটম চালালেও কখনও নিজের পরিচয় লুকাতো না। সে বলত আমি গরিবের পুয়া (ছেলে)। রিকশা চালালে শরম নাই। নজরুলের বাবা হারুন মিয়া বলেন, ‘চার ভাই এক বোনের মধ্যে নজরুল ছিল সবার বড়।
দুই মাস ধরে তার কোনো খবর ছিল না। সে কোনো ফোনও ব্যবহার করত না। আজকে যে আমার জাদু লাশ হয়ে আসবে সেটা কে জানত। ইসলামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ জানান, নজরুল মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলেও কখনও গ্রামে আসত না। মাঝেমধ্যে এলে দেখা হতো।
রিকশা, টমটম চালিয়ে নিজে চলত, পড়ালেখার খরচও চালাত। সে আরো জানাই নজরুলের মৃত দেহটি আনতে তার বাবা মা বুধবার সকালে হবিগঞ্জ মর্গে যান। এখন নজরুলের লাশ বাড়ীতে আসেনি লাশ নিয়ে আসার পর দাফন করা হবে।