ঢাকাই কি আপনাদের বাংলাদেশ মফস্বলের দিকে দৃষ্টি ফিরবে না!
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাসদের কেন্দ্রীয় নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় গত কয়েক দিনে নিজ উদ্যোগে বরিশাল নগরবাসীর জন্য নানা সচেতনামুলক প্রচারনার সাথে সাথে শ্রমজিবী মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন। নগরের খেটে খাওয়া গরীব মানুষকে প্রতিদিন সাধ্য মত তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কাজের জন্য ইতিমধ্য তিনি সাধারন মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসায় ভাসছেন। কিন্তু কোলাহল পূর্ণ এই শহরে গরীব মানুষের মুখে আহার তুলে দেয়া আরো একার পক্ষেই সম্ভব নয় ,যা ডা:মনিষা চক্রবর্তি তার ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন। তুলে ধরেছেন নানা তথ্য উপাত্ত । চেয়েছেন সচেতন মহলের সহযোগীতা ও পরামর্শ। নিচে পাঠকদের সার্থে তার লেখাটি হুবহুব তুলে ধরা হলো:
প্রিয় সুহৃদ এবং বন্ধুগণ,
সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় আপনাদের কোন খবর জানাতে পারিনি বলে আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছি। কারণ ‘এক মুঠো চাল’ কর্মসূচিটি আমাদের শ্রম এবং আপনাদের সার্বিক সহযোগিতার উপর নির্ভর করেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে আমাদের প্রতিদিনের সফলতা, ব্যর্থতা, কষ্ট বা আনন্দ বেদনার সাথে আপনারা ওতোপ্রোতো ভাবেই যুক্ত। সারাদিন কি কাজ হলো, আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা, বিভিন্ন বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আপনারাই বরিশালের এই ‘এক মুঠো চাল’কর্মসূচিকে এতদূর অগ্রসর করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ২০০ পরিবারকে সহযোগিতা করতে প্রায় ১ লক্ষ টাকা করে প্রয়োজন হচ্ছে যার বড় অংশটা আপনাদের ২০/৩০/৫০/১০০বা ১০০০/৫০০০/১০০০০ টাকা সহযোগিতার মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে।
আমরা আজ প্রতি ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে গরীব এলাকাগুলোতে গরীবদের মধ্যেও যারা খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় আছে অর্থা’ হতদরিদ্র তাদের নামের তালিকা তৈরি করেছি। যেমন, রসুলপুর চরের বস্তি যারা চেনেন তারা এক কথায় স্বীকার করবেন এখানে প্রায় ১৫০০ পরিবারের সবাই দরিদ্র। তারপরও এখানকার স্বেচ্ছাসেবকেরা আমাদের কথা অনুযায়ি ঘুরে ঘরে ৪০ পরিবারের তালিকা তৈরি করেছিল। এমনকি এরা নিজেদের নামও সেই তালিকায় লেখেনি। কিন্তু আমরা জানি দিন শেষে রসুলপুরের স্বেচ্ছাসেবকদেরও হয়তো একবেলা আহার জুটবে। কয়েকদিন পরের অনিশ্চয়তা তো আছেই।
আজ সন্ধ্যায় রসুলপুর চরের উনারা জানালো আরও ৩০ পরিবারকে দিতে পারলে খুব ভালো হয়। এই ৩০ জনের মধ্যেও কিন্তু তাদের নাম নেই।
বরিশালে মোট বস্তির সংখ্যা ৩৫। এই ৩৫ বস্তিতে গড়ে ৬০ পরিবারকে খাদ্য সহযোগিতা দিতে গেলেও মোট প্রায় ২১০০ পরিবার। কত মানুষ যে প্রতিদিন ফোন করছে..! হ্যাঁ, ফোন করছে এক মুঠো চালের জন্য। জানি বেশিরভাগ মফস্বল শহরের চিত্র কমবেশি একই ধরনের।
আবার ঢাকার চিত্র কিন্তু আলাদা। স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন এমনকি বিভিন্ন ব্যক্তিরা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তা অভূতপূর্ব। এমন অনেক ব্যক্তি একাই কয়েক ট্রাক খাদ্য দিচ্ছেন। কোন কোন সংগঠনের পরিস্থিতি এমনই যে পরিমাণ খাদ্য মজুদ হয়েছে তা দেয়ার মতো স্বেচ্ছাসেবকও নেই। আবার আজ শুনলাম আমাদের পরিচিত একজন আদাবর বস্তিতে খাদ্য নিয়ে যাওয়ার গিয়ে দেখে আরও একটা সংগঠন সেখানে খাবার দিচ্ছে। আগের দিনও কেউ দিয়েছে। পরের দিনও দিবে। আবার ঢাকার বস্তির ৭৫ শতাংশ মানুষ যে গ্রামে চলে এসেছে এটাও কি আপনারা খেয়াল করছেন না। এটা তো আমরা সবাই জানি ঢাকায় মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তদের বড় অংশের বসবাস। আবার এটাও তো ঠিক নিজের হাতে কিছু দেয়াও একটা ভাল লাগার ভালো দিক আছে।
কিন্তু আপনারা এখন একটু ভেবে দেখুন। ভাবনার সময় এসেছে। কারণ এই সময়টা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। শুধু আপনার ঢাকাই কি এই বাংলাদেশ! আপনাদের দৃষ্টি একটু মফস্বলের দিকে ফিরবে না! ঢাকায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে একজন শিল্পপতি যে সহযোগিতা করেছে তা দিয়ে তো আমাদের মতো একটা মফসস্বল জেলায় পুরো খাদ্য কার্মসূচি পরিচালিত হতে পারে। ঢাকায় খাবার স্টোর করার জন্য নতুন নতুন কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয় আর মফস্বলে প্রতিদিনের ২০০/৩০০ পরিবারের খাবার জোগাড় করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। আপনারা খাবার নিয়ে দু:চিন্তা করছেন কাকে দেয়া যায় আর আমাদের চিন্তা করতে হয় কোন এলাকায় কাকে কাকে বাদ দেয়া যায়।
হ্যাঁ, আমাদের প্রতিদিনই দরিদ্র মানুষগুলোর মাঝে হতদরিদ্র খুঁজতে হয়। এখন আপনারা আরেকটু গভীরভাবে ভাবেন। আবার এটাও খেয়াল রাখেন ঢাকার গরীব মানুষের ৭৫% এখন কিন্তু আমাদের মফস্বলে।
আমরা আমাদের সামর্থ্য বাড়াতে চাই, আপনাদের সুচিন্তিত পরামর্শ চাই…।
ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী।
‘এক মুঠো চাল’
বাসদ, বরিশাল।
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া হয়েছে)