অসহায় মানুষের পাশে একদল তরুণ
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার নয়ামটি, রসুলপুর, বৌবাজার, শাহীবাজার এলাকার অনেক শ্রমজীবি মানুষ। সরকারিভাবে সাহায্য করছে জেলা প্রশাসন। তারপরও বাইরে থেকে যাচ্ছেন অনেকে। তাদের খুঁজে বের করে সাহয্যের হাত বাড়িয়েছে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১১ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
যাদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকুরিজীবী আবার কেউ বা সামাজিক সংগঠনের উদ্যোক্তা। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে নয়ামাটি এলাকার কর্মহীন শ্রমজীবী ও দিনমজুরদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন তারা।
গত কয়েকদিন ধরে ফতুল্লা থানার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিত্যদিন উপার্জন করে জীবন চালানো মানুষ, যাদের করোনার কারণে জীবন অচল হয়ে পড়েছে সেরকম পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে এ স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা। তারপর সকলের সহযোগীতায় অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ক্রয় এবং পরবর্তীতে তা প্যাকেটকরণ সম্পন্ন করে তারা।
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষে রোববার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।
জানা গেছে, ১১’ ব্যাচের শিক্ষার্থী স্থানীয় ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের উদ্যোগে দরিদ্র পরিবারের পাশে দাড়ানোর জন্য সকলের সহযোগীতায় অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার ক্রয় এবং পরবর্তীতে তা প্যাকেটকরণ সম্পন্ন করে তারা।
এ প্রতিবেদককে ওমর ফারুকে বলেন, যে সংকট এখন চলছে, এটি থাকবে না। কিন্তু যে ক্ষতির সম্মুখিন আমরা হচ্ছি তা মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। দেখুন আমরা দুইদিন আগেও কল্পনা করতে পারিনি এমনটি হবে। এমন মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে গরিব অসহায় মানুষরা। বিবেকের তাড়নায় তাদের পাশে দাড়াতে চেষ্টা করেছি।
কিভাবে শুরুটা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু একটা করব এমন ভাবনা থেকেই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা। তারপর এ পর্যন্ত চলে আসা। সবটাই হয়েছে সকল বন্ধুদের ইচ্ছা আর চেষ্টার উপর। তা না হলে এতো কিছু করা সম্ভব হতো না।
রাতে কেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তরুণ এ ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের প্রচারের কোনও ইচ্ছে নেই। তাছাড়া দিনের বেলায় দিলে অনেকে নিতে সংকোচবোধ করতে পারে তার জন্য রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছি।
সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন ১১’ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রী পংকজ। যিনি বর্তমানে ধানমন্ডির একটি কন্টিনেন্টাল ফাইন ডাইন রেস্টুরেন্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত আছেন। কথা হয় তার সাথে।
পংকজ জানান, এখন পর্যন্ত ৭০টি পরিবারের মাঝে আমরা খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে পেরেছি এবং আগামীকাল আরও কিছু পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে। প্রতিটি প্যাকেটে রয়েছে চাল ৫ কেজি, মসুর ডাল ১ কেজি, আলু ৩ কেজি, পেয়াজ ১.৫ কেজি, তেল ১ লিটার এবং সাবান ১টা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেষ্টা করেছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কতোটুকু পেরেছি তা সৃষ্টিকর্তাই ভালোই জানেন। তবে এমন সংকটময় মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি তাতেই আনন্দ পাচ্ছি।
দরিদ্রদের ছবি না তোলা ও নাম গোপন রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে পংকজ জানান, তাদের ছবি তুলে কি করব? ছবি তুললে বিষয়টা পাশে দাঁড়ানো হয় না। হয় প্রচার। যা সকল বন্ধুরাই শুরু থেকেই বলে আসছি। এ কারণে যতোটা পেরেছি তাদের নাম গোপন রাখার।
শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত সর্বাত্মক সহযোগীতায় ছিলেন সাজ্জাদ, ইকবাল, রবিন, রাসেল।
সূত্রঃ পূর্বপশ্চিমবিডি