ঘূর্ণিঝড় আম্পান: বরিশালে ৬ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, চলছে মাইকিং
শামীম আহমেদঃ ঘূর্ণিঝড় আম্পান থেকে জনসাধারণকে রক্ষার জন্য বরিশালসহ গোটা উপকূলীয় এলাকায়
মাইকিং করছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৯ মে) ভোর থেকে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং করা হয়।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইয়ামিন চৌধুরী জানান, বরিশাল বিভাগে ৬ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১১ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের সময় ২ হাজার ৪ শত আশ্রয় কেন্দ্রে ১১ লাখ মানুষকে জায়গা দেয়া হয়েছিলো কিন্তু এবার করোনার কারনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার আরো জানান, উপকূলীয় এলাকায় বেশ কিছু ঝুকিপূর্ণ বাধ রয়েছে, সেসব এলাকার মানুষকে ইতিমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা যেন আশ্রয়কেন্দ্রে পৌছে যায়, সে বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থাকার উপযোগী এবং পর্যাপ্ত খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার।
এদিক এ বিষয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, নদী ভাঙ্গনের ব্যপারে আমরা লক্ষ্য রাখছি এবং কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু বুঝতে হবে নদী ভাঙ্গন রোধে বেরিবাধ একটি বিশাল প্রককল্প, এটা আজ বলেই কাল শুরু করতে কিংবা শেষ করতে পারি না।
উপকূলীয় এলাকার জন্য সমীক্ষা করা হচ্ছে, প্রকল্প আমাদের আছে এবং আমরা করবো কিন্তু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা যেখানে ভাঙ্গণ হচ্ছে সেইসব এলাকা মোটামুটিভাবে সংরক্ষন করার চেষ্টা করি। কিন্তু বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, আর যেদিকে তাকাবেন নদীও তীর ভাঙ্গতে থাকে। এটা রোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে ছোট ছোট ভাঙ্গন হতেই থাকবে যা নিয়ে আমাদের বসবাস করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই দোআ করি যেন আম্পান আমাদের দিকে না আসে। তারপর যদি আসে আমরা প্রস্তুত আছি যেন বেশ আকারে ক্ষয়ক্ষতি না হয়ে সীমিত আকারে হয়। আমাদের প্রকৌশলীরা যে যার এলাকায় রয়েছেন। জেলা প্রশাসকরা কাজ করে যাচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় এলাকার যে সব জায়গাতে বেরিবাধগুলো নাজুক অবস্থায় রয়েছে, সেসব জায়গার তালিকা প্রকৌশলীর কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে। নাজুক অবস্থায় থাকা বেরিবাধগুলো নিয়ে অনেক স্থানে কাজও করছেন প্রকৌশলীরা। আশাকরি বন্যা আসার আগেই আমরা বেরিবাধগুলো সংস্কার করতে পারবো। এখন ঘূর্ণিঝড় আম্পান যে এলাকাতে আসবে, সেসব এলাকার লোকজনকে আমরা সাবধান করেছি এবং আমাদের
প্রকৌশলীরা সেখানে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি জনগনকে শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শ দেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান জানান,
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে এটি
যদি আঘাত হানে, তা অতি প্রবল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির
পরিমাণ যথেষ্ট হয়।
বরিশালে ঘুর্নিঝড় আম্ফানের অবস্থা:
ঘুর্নিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরিশালে আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন। সকাল দশটা পেড়িয়ে গুড়ি বৃষ্টি হলেও দুপুরের পর বরিশালে মুসলধারে প্রায় ৩০ মিনিট বৃষ্টি হয়েছে। তবে বাতাসের গতিবেগ স্বাভাবিক আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে এটি পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার রাত পেড়িয়ে বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আঘাত হানতে পারে।
এজন্য পায়রা সমুদ্র বন্দরে জন্য ৭ নম্বর বিপদ সংকেত থাকলেও বরিশাল নদীবন্দরের জন্য তা ২ নম্বর বলবৎ আছে। তাই বিআইডব্লিউর পক্ষ থেকে সকল নৌযানকে নিরাপদ স্থানে রাখার নির্দেশ রয়েছে এবং পন্টুনে থাকা কর্মীদের সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। একই সাথে উদ্ধারকারী নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানালেন নৌ সংরক্ষণ ও ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এস এম আজগর আলী।
এনিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ৩১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র এবং ৭৫৫টি স্কুল কলেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনার সময়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করতে পারে এমন ব্যবস্থা করেছেন। সুপেয় পানি, খাবার এবং মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।