‘সেদিনের আকাশ আজকের মত পরিষ্কার ছিলো না’
ড. গাজী মোহাম্মদ সাইফুজ্জামানঃ
তিনি যখন বাসে উঠে বসলেন ঘড়ির কাটায় তখন বেলা তিনটে। পরিষ্কার আকাশ, বাতাস নেই, চারপাশে তীব্র রোদের ঝলকানি। ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে যখন যাত্রা শুরু হলো বাসটির আশেপাশে তখন ছোটবড় অনেক ধরনের যানবাহনের ছড়াছড়ি। যানজট না হলেও যাত্রাটিকে আরামদায়ক বলা যায় না।
যাত্রাপথের ধীরগতির মাঝেও তিনি বাসের জানালা দিয়ে আশেপাশে দেখার চেষ্টা করেন। ঢাকার বুকে কত ধরনের ভবন! নির্মিত আর নির্মাণাধীন চার তলা, পাঁচ তলা, দশ তলা দালানের পাশেই আধাপাকা টিনের ঘর। শহর ছেড়ে যেতে যেতেই তার মন ভালো হয়ে যায় রাস্তার নতুন রূপ দেখে। পাকা, মসৃন আর নতুন রাস্তার মান দেখে ভদ্রলোকের মনে অনেক আনন্দ জাগে। রাস্তার দুধারে উঁচুনিচু ভূমিতে যতদূর চোখ যায় বিভিন্ন হাউজিং এর কত শত সাইনবোর্ড! একদিন হয়তো এসব এলাকাতেও গড়ে উঠবে বিশাল বিশাল অট্টালিকা, তৈরি হবে নতুন শহর।
চলতে চলতে তিনি আধো ঘুমের মাঝে কখন যে মাওয়া হয়ে পদ্মাসেতুতে উঠে পড়েছেন তা বুঝতে পারেননি। বাসের জানালায় বাতাসের শনশন শব্দে হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে যায়। কি সুন্দর ভাবে পাড়ি দিচ্ছে পদ্মা নদী। মনে পড়ে তার এই নদীর ঘাটে যাওয়া সেই বিষাদময় ঘটনা।
সেদিনের আকাশ আজকের মত পরিষ্কার ছিলো না, প্রবল বাতাস ছিলো, দিনের আলোয় ছিলো ঘন মেঘের ছায়া। অসুস্থ মাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যখন তিনি ঘাটে উপস্থিত হয়েছিলেন তখন প্রকৃতিতে শুরু হয় চরম তাণ্ডব। চিকিৎসার জন্য পদ্মা পাড়ি দিয়ে মাকে ঢাকায় নিতেই হবে। কিন্তু, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ফেরি পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। অনেক আশা নিয়ে মায়ের হাত শক্ত করে ধরে ছিলেন তিনি। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা আসে, রাত নামে। অবশেষে ঝড় বন্ধ হয়ে যখন ফেরি চলার খবর আসে তখন তার মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সেদিন থেকে, বিনা চিকিৎসায় চলে যাওয়া মায়ের মলিন মুখের বেদনাময় স্মৃতি নিয়েই কাটছে তার জীবন।
আজ এতদিন পর বাড়ি যাওয়া। ফেরিতে নয় বাসে, পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে। আফসোস, আজ যদি মা বেঁচে থাকতেন!
(মানুষের ব্যস্ত জীবনের কথা ভেবে উপন্যাসের স্থানে ছোটগল্পের আবির্ভাব। মানুষের জীবনে ব্যস্ততা আরো বেড়েছে। তাই এই এক পাতার গল্প রচনার পরীক্ষামূলক প্রয়াস। গল্পের না-বলা কথাগুলো ভেবে নিতে পারেন পাঠক নিজেই।)
লেখকঃ ড. গাজী মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।