বিক্রি হতে হতে নিরুপায় ওমান প্রবাসী আরজু,মাকে ফিরে পেতে দুই শিশুর আকতি
সোহেল আহমেদ, চট্টগ্রাম: আরজু আক্তার। নোয়াখালী জেলার সুবর্নচর থানার সুলতান নগর এলাকার মৃতঃ আনোয়ার হোসেনের মেয়ে। তার মায়ের নাম রোকেয়া বেগম। সমাজের আর দশটি মেয়ের মত আরজুর বিয়ে হয়, স্বামীর সাথে বুনিবোনা না হওয়াতে ভেঙে যায় সংসার। ভেঙে যায় একটি মেয়ের বিবাহিত জীবনের সব স্বপ্ন। দাম্পত্ত জিবনে অসহায় এ নারীর রয়েছে দুইটি অবুজ ছোট্ট শিশু। যাদের একটির বয়স সাত বছর অপরটি তিন বছরের।
দরিদ্র পরিবারের আর্থিক উন্নতির জন্য কয়েকজন দালালের খপ্প
রে পড়ে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে গৃহ পরীচারীকার ভিসায় ওমানে আসে অসহায় নারী আরজু। এখানেও যে অশান্তি জুটবে তা কি হতভাগী জানতো! ভাগ্যের উন্নয়নের কথা বলে যারা তাকে ওমান নিয়ে আসে সেই দালাল গুলো হচ্ছে নোয়াখালী সুবর্নচরের পাংখার বাজারের সেলিম,সুমন,ও রবিন ৷
আরজু ওমানের মাস্কেট শহরে আসার পর এখানে সম্পূর্ন ভিন্ন চিত্র দেখতে পায়। তার কাগজপত্রের জটিলতা আছে বলে সেলিম ও সুমন তাকে কুমিল্লার হাসান নামক এক ওমান প্রবাসীর নিকট বিক্রি করে দেয়। হাসান আরজুকে আটকে রেখে তার সাথে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। এমনকি বিভিন্ন লোকজনের নিকট টাকার বিনিময়ে আরজুকে অনৈতিক কর্মে লিপ্ত করতে বাধ্য করে হাসান। এভাবে নরপশু দ্বারা নির্যাতিত হয়ে কয়েক মাস কেটে গেলো।
এখানেই শেষ নয়, কুমিল্লার হাসান আরজুকে বিক্রি করে দেয় ওমান প্রবাসী নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার মিজানের নিকট। এই মিজানও আরজুকে দিয়ে তিনমাস একই কাজ করে ফায়দা লোটে। পরে মিজান আবার আরজুকে বিক্রি করে দেয় বেগমগঞ্জের রবিনের নিকট। রবিন তাকে দিয়ে অনৈতিক ব্যাবসা করে।
অসহ্য এক জীবন যন্ত্রণায় আরজু এবার মিজান এর কাছ থেকে পালিয়ে ওমানের মাস্কেট শহরের আমরা ৬ নাম্বার নামক জায়গায় চট্রগ্রামের চকরীয়ার আবুকালাম নামক এক ওমান প্রবাসীর নিকট আশ্রয় নেয়।
চকরীয়ার আবুল কালাম ব্যাচেলর মানুষ তাই ভিবিন্ন সমস্যা হচ্ছে আরজুকে নিয়ে। তাই আবুল কালাম চলতি জুন মাসে ৩০ তারিখের মধ্যে বেরিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু ওমানের অচেনা শহরের কোথায় যাবে আরজু? এখন প্রয়োজন আরজুর পাশে মানবিক সহায়তা। কে করবে সেই সহায়তা? হাঁ আরজু নিজেই জোগার করল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মানবিক ইউনিটের টিমলীডার শওকত হোসেন এর মোবইল নম্বর।
একটানা ৫ দিন বারং বার কল করতে করতে অবশেষে মানবিক পুলিশ শওকত হোসেন এর সাথে কথা হয় আরজুর। কান্নাকাটি করছে আরজু। বলছে স্যার আমাকে বাঁচান। দেশে আমার দুটি অবুজ শিশু সন্তান রয়েছে। আমার আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ৷ ছোট দুটি মাসুম বাচ্ছার ছবি আর কান্নার শব্দ শুনলে নিস্তব্দ হয়ে যায় আরজু।
মানবিক পুলিশ শওকত হোসেন আরজুকে অভয় দিলেন। ওমান প্রবাসী সকল বাংলাদেশীদের প্রতি বিনীত অনুরোধও জানিয়েছেন সেখানে বিপদে পরা অসহায় নারী আরজুকে সহযোগীতা করার জন্য। শুধু তাই নয়, আরজুর দেশে আসার জন্য বিমান ভাড়ার সমস্যা হলেও মানবিক পুলিশ ইউনিট সিএমপির পক্ষ থেকে ভাড়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন শওকত হোসেন। সে জন্য তিনি ০১৮৫৬-০৯৪০৯২ এই নম্বরে প্রবাসীদের যোগাযোগ করতে বলেছেন।
এখানে একজন অসহায় নারী আরজুকেই শুধু সহযোগীতা নয়, এর সাথে জরিয়ে আছে আরজুর দুটি সন্তানের মা নামক এক ব্যাক্তি। আর মেয়েটি যাতে সহযোগিতার অভাবে মারা না যায়, দুটি নিশ্পাপ বাচ্ছা যাতে এই পৃথিবীতে তাদের একমাত্র অবলম্বন মা নামক শব্দটিকে চির দিনের জন্য হারিয়ে না ফেলে এজন্য কেউ না কেউ এগিয়ে আসুন মেয়েটিকে বাংলাদেশ পাঠানোর ব্যাবস্থা করার জন্য প্রবাসীদের প্রতি জোর অনুরোধ জানিয়ে আরজুকে সহযোগীতা করার বিশেষ অনুরোধ করেছেন সিএমপির জনপ্রিয় এই মানবিক পুলিশ অফিসার।