ফুল ও মিষ্টি নিয়ে বিসিএস উত্তীর্ণদের ভেরিফিকেশনে এএসপি আনোয়ার শামীম
অনলাইন নিউজ: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানে ৩৮ তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চার জন প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য যাচাইয়ে গিয়ে তাদেরকে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে পুলিশ। গত রবিবার (৯ আগস্ট) তাদের বাসায় সরেজমিন ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে তাদেরকে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে শুভেচ্ছা জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো আনোয়ার হোসেন শামীম।
পুলিশের বিরুদ্ধে চাকুরী ও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অনেক পুরনো। চাহিদামতো টাকা দিতে ব্যর্থ হলে অনর্থক সময় ক্ষেপণসহ নানাভাবে হয়রানি করার কথাও শোনা যায় হরহামেশাই। এ ক্ষেত্রে কোন এসআই- এর পরিবর্তে সরাসরি সার্কেল এএসপির নিজেই ভেরিফিকেশনে যাওয়া, টাকা দাবির পরিবর্তে উল্টো মিষ্টি ও ফুল উপহার দেওয়া পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ওয়াকিবহাল মহল মত প্রকাশ করেছেন।
গতকাল ৩৮ তম বিসিএসে গণপূর্ত ক্যাডারে সুপারিশকৃত একজন প্রার্থী ওয়াহিদ মুরাদ আজম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং এএসপির মিষ্টি’ শিরোনামে একটি পোস্ট করলে তা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ওয়াহিদ রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন মরিয়ম নগর এলাকার বাসিন্দা এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( চুয়েট) এর সাবেক ছাত্র। কক্সবাজারের ঘটনায় দেশব্যাপী পুলিশের ভাবমূর্তি যখন তলানিতে, তখন পুলিশের এমন অভিনব উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন নেটিজেনরা। ওয়াহিদ লিখেন “আমার ৩৮ তম বিসিএসের পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হলো আজ। ভেরিফিকেশন করতে এসেছিলেন রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি আনোয়ার হোসেন(শামীম আনোয়ার), আমরা এতদিন ধরেই নিয়েছি ভেরিফিকেশন মানেই পুলিশকে ঘুষ দিতে হবে। কিন্তু আজ আমাদেরকে অবাক বানিয়ে উল্টো এএসপি শামীম আনোয়ার স্যারই আমার জন্য মিষ্টি ও ফুলের তোড়া উপহার হিসেবে নিয়ে এলেন। আমাদের অনেক অনুরোধের পরও এক কাপ চাও খেলেন না। এমনকি এক গ্লাস পানিও না ধন্যবাদ বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশে ইতিবাচক পরিবর্তন যে আসছে, তার প্রমাণ আজ হাতেনাতেই টের পেলাম। অনেকে বলবেন, আমার কাছ থেকে টাকা নেয়নি বলে এবং উপহার দিয়েছে বলেই আজ আমি পুলিশকে ভাল বলছি। কিন্তু না। আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেছি, যা ঘটেছে তার ১০% ও আশা করিনি। ঘুষের ব্যাপার না, পুলিশের আচরণ, অমায়িক ব্যবহার, সত্যি বলছি, সবকিছু মিলিয়ে আমাকে উন্নত বিশ্বের পুলিশের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।”
ওয়াহিদ ছাড়াও ৩৮ তম বিসিএসের মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া গ্রামের খায়রুন্নেসা স্বাস্থ্য ক্যাডারে, নটুয়ার টিলা গ্রামের আরাফাতু নূর বাঁধন পুলিশ ক্যাডারে, রাউজান উপজেলার সুলতান পুর গ্রামের জান্নাতুন নাইম শিক্ষা ক্যাডারের সুপারিশকৃত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া নিয়ে চাকুরীপ্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি ও নেতিবাচক মনোভাব কাজ করে থাকে। মূলত এই ধারণা দূর করতেই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হকের নির্দেশনা অনুযায়ী সুপারিশকৃত বিসিএস ক্যাডারদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। আর তাছাড়া অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এসব কর্মকর্তা সারাদেশে নিজনিজ অধিক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়তে চলেছেন। তাদেরকে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবায় আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা ও পুলিশের কাজ সম্পর্কে তাদের মনে ইতিবাচক ধারণা দেওয়াও ছিল এই কর্মকাণ্ডের অন্যতম উদ্দেশ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সুপারিশকৃত বিসিএস ক্যাডার জানান, আগে জানতাম ভেরিফিকেশনের সময় টাকা দেওয়া লাগেই। মিষ্টি খাওয়া, মোটর সাইকেলের তেলের পয়সা এমন বিভিন্ন অজুহাতে টাকা চাওয়া হয় বলে শুনেছি। সেই অনুযায়ী আমরা টাকাও রেডি করেছিলাম। কিন্তু টাকা নেওয়া দূরে থাকুক, উল্টো পুলিশ আমাদেরকে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে গেছে। স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এমন পুলিশই আমরা প্রত্যাশা করি।
উল্লেখ্য ৩৮ তম বিসিএসে রেকর্ডসংখ্যক মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী আবেদন করেন। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত ৩০ জুন প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলে মোট ২ হাজার ২০৪ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ করা হয়। বিভিন্ন সংস্থার ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সমাপনান্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অচিরেই তারা চূড়ান্ত নিয়োগ লাভ করবেন।সূত্র:পিনিউজ বিডি ডটকম