দুর্বিসহ ভয়ানক সেই দিনটির কথা ভোলেননি ভোলার মানুষ
অনলাইন নিউজ: ২৭ নভেম্বর, ভোলার ইতিহাসে শোকাবহ একটি দিন ‘কোকো ট্র্যাজেডি’। ২০০৯ সালের এই দিনে তেঁতুলিয়া নদীতে ডুবে যায় এমভি কোকো-৪ নামের লঞ্চটি। এ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ১১ বছর। কোকো লঞ্চ দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন মা-বাবা, কেউ সন্তান, কেউবা ভাই-বোন আর পরিবারের উপর্জনক্ষম ব্যক্তি। সেদিন স্বজনদের কান্নায় লালমোহন-চরফ্যাশনের আকাশ ভারী হয়ে উঠেছিল। আজও ভোলার মানুষ সেই দুর্বিসহ ভয়ানক দিনটির কথা ভোলেননি। সেই দিনটির কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন তারা। সেদিনের সেই ট্র্যাজেডির কথা মনে করে আজও শোকে কাতর পুরো দ্বীপজেলা, বিশেষ করে লালমোহন উপজেলা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেদিন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও আজও লালমোহন-ঢাকা রুটে চালু হয়নি নিরাপদ লঞ্চ। এখনো ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে চলছে অধিকাংশ লঞ্চ।
কোকো-৪ দুর্ঘটনায় লালমোহন উপজেলার চর ছকিনা গ্রামের স্বজনহারা আবদুর রশিদের ছেলে নূরে আলম সাগর। তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ইয়াসমিন ও শ্যালিকা হ্যাপি বেগমকে হারিয়েছেন। নূরে আলম ঈদুল আজহা উপলক্ষে নববধূ ও শ্যালিকাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। তাদের বরণ করতে সম্পন্ন ছিল সকল প্রস্তুতি; কিন্তু জীবিত নয়, মৃত নববধূকে বরণ করতে হয় বৃদ্ধ আবদুর রশিদকে। নববধূর ওই লাশের কথা মনে করতেই আজও বেদনায় কাতর হয়ে ওঠে ওই পরিবার। দুর্ঘটনার ৪ মাস পর আবদুর রশিদের ছেলে সাগর বিয়ে করেছিলেন। আবদুর রশিদের পরিবারের মতো কোকো-৪ দুর্ঘটনায় স্বজনহারা অন্যরাও তাদের বাঁধভাঙা কান্না চেপে রেখেছেন অতিকষ্টে। স্বজন হারানো ওইসব পরিবার আজও শোকে কাতর।
একই এলাকার বাকলাইবাড়ির শামসুন নাহার স্বামী, সন্তান, দেবরসহ একই বাড়ির ১৬ জন নিয়ে কোকো লঞ্চে রওনা হয়েছিলেন বাড়িতে ঈদ করতে। বাড়ির কাছের ঘাটে এসেই ওই লঞ্চডুবিতে নিহত হয় তার মেয়ে সুরাইয়া (৭), ভাসুরের মেয়ে কবিতা (৩) ও দেবর সোহাগ (১৩)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিছু যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও এর পর উঠে আসে একের পর এক লাশ। আস্তে আস্তে যেন লাশের মিছিলে পরিণত হয় পুরো জনপদ।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের এই দিন রাত ১১টায় ঢাকা থেকে লালমোহনগামী এমভি কোকো-৪ লঞ্চ নাজিপুর ঘাটের কাছাকাছি এসে ঈদে ঘরমুখো ২ হাজারের বেশি যাত্রী নিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে ডুবে যায়। এতে ভোলার বিভিন্ন উপজেলার ৮১ জন প্রাণ হারান। কোকো ট্র্যাজেডিতে লালমোহনের ৪৫, চলফ্যাশনের ৩১, তজুমদ্দিনের ২ ও দৌলতখানের ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। দুর্ঘটনার পর পরই উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা-রুস্তম শত চেষ্টা করেও ওই লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত উদ্ধারকাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। আড়াই বছর পর তেঁতুলিয়া নদীর দুর্ঘটনাকবলিত ওই লঞ্চটি উদ্ধার করে মালিকপক্ষ। তথ্যসূত্র: আমাদের সময়।