থানার ওসি হবেন নাম্বার ওয়ান সামাজিক নেতা: আইজিপি
মো: জিহাদ রানা: দেশের প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) হবেন তার এলাকার হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, তোমরা হবে তোমাদের কর্মরত এলাকার হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা এবং নাম্বার ওয়ান সামাজিক নেতা; ভালবেসে মানুষ যাকে অনুসরণ করবে। ভালো কাজ করলে ইতিহাসে স্থান করে নেওয়া যায়, এক্ষেত্রে পদ-পদবী গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষকে ভালোবাসলে মানুষ ভালোবাসা দিয়েই তার প্রতিদান দেয়। করোনা মহামারী চলাকালীন আমরা দেখেছি তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে বরিশাল মেট্রো ও রেঞ্জসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সকল স্তরের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম-বার মহোদয় একথা বলেন।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে মতবিনিময় সভার শুরুতেই করোনা মহামারীতে যে সকল পুলিশ সদস্যগণ আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের এবং সাম্প্রতিক সময়ে অকালপ্রয়াত এআইজি(অপারেশন্স) সাঈদ তারিকুল হাসান(পুলিশ হেডকোয়াটার্স) ও সহকারী পুলিশ কমিশনার(ট্রাফিক), বিএমপি আনিসুর রহমান এর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
আইজিপি মহোদয় বলেন, আমাদেরকে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন হয়ে জনগণের পুলিশ তথা মানবিক পুলিশে রুপান্তরিত হয়ে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদারের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধসহ দেশের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে আমরাই নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। করোনা মহামারীতে আমাদের মানবিক ভূমিকা ছিল সর্বত্র প্রশংসনীয়। আমরা হতে চাই দক্ষিণ এশিয়ার বেস্ট পুলিশ এবং আমাদের সেই সামর্থ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশের চাকরি করতে হলে এই পেশাকে ভালবাসতে হবে, এটাকে Passion হিসেবে নিতে হবে, এটাকে Pride হিসেবে নিতে হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের কোন সদস্যের যেকোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতিকে কঠিন হাতে দমন করা হবে। মাদকের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না, বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের কে । তিনি বলেন পুলিশকে এখন অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের কল্যাণের জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বর্তমানে দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতাল রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল।
পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় শহরে এ ধরনের হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। বরিশাল সহ ০৮টি ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টারে ক্যাডেট কলেজের ন্যায় স্কুল স্থাপন করা হবে। বেঁচে থাকতেই পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ সাধন করা হবে; মৃত্যুর পর নয়।
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে নিয়মিত পুলিশিং এর পাশাপাশি স্কুল ভিজিট, কমিউনিটি পুলিশিং, ওপেন হাউজ ডে, বিট পুলিশিং কে জোরদার করতে হবে। বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে পুরো দেশকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে হবে।
এ সময়ে পুলিশ কমিশনার বিএমপি জনাব মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার, আইজিপি মহোদয়কে উদ্দেশ্য করে তার বক্তব্যে বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে সেবাধর্মী, জনমুখী, গণমুখী ও মানবিক পুলিশিং প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ কে জনগণের প্রথম ভরসাস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য আপনি যে স্বপ্ন হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে চলছেন; তাতে আমরা আপনার সারথি। আপনার স্বপ্ন পূরণে আমরাই এই অঞ্চলের পুলিশ একধাপ এগিয়ে থাকবো বলে আপনাকে কথা দিলাম।
এ সময়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি জনাব মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম-বার, আইজিপি মহোদয়ের নিকট বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।
এর আগে বিভিন্ন পদ-পদবির বেশ কয়েকজন সদস্য আইজিপি মহোদয় এর নিকট বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাদের মতামত ও সমস্যা তুলে ধরেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিএমপি জনাব প্রলয় চিসিম সহ মেট্রো ও রেঞ্জ এর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে তার আগে মাননীয় আইজিপি মহোদয় বরিশাল অবতরণের পর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মহোদয় মাননীয় আইজিপি মহোদয় কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং পুলিশ অফিসার্স মেসে মাননীয় আইজিপি মহোদয় কে হাউজ গার্ড সালামী প্রদান করা হয়।
কল্যাণ সভা শুরুর পূর্বে মাননীয় আইজিপি মহোদয় পুলিশ সুপারের কার্যালয় বরিশাল, পুলিশ অফিসার্স মেস ঝালকাঠি ও বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সের প্রধান ফটক প্রত্যয় এর শুভ উদ্বোধন করেন।
অতঃপর মাননীয় আইজিপি মহোদয় মেট্রো ও রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বরিশাল অফিসার্স মেসে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভাশেষে বরিশাল মেট্রো ও রেঞ্জ এর পক্ষ থেকে মাননীয় আইজিপি মহোদয়কে সম্মাননা সূচক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।