মা’কে বাঁশঝাড়ে রেখে ছেলেরা পাকা দালানে, উদ্ধার করলেন ইউএনও কাফী
সোহেল আহমেদঃ ‘মা‘ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় নাম। তাঁর স্নেহের সন্তানের পৃথিবীর আলো দেখা, দশমাস দশদিন গর্ভেধারণ করে মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করে জন্মদিলেন আদরের সন্তান! অথছ নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয় আর বউপ্রিতি সহ নানা কারণে আজ মমতাময়ী মায়েরা সন্তানের চোখে বিরক্তিকর এক বস্তুতে পরিণত হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে আদর যত্নের বদলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পদে পদে লাঞ্চিত বঞ্চিত হচ্ছে সন্তানের কাছে।
সন্তান কতৃক মমতাময়ী মা’য়ের সেরকমই হ্রিদয়বিধারক ঘটনার শিকার যশোরের চৌগাছা উপজেলার ছায়ারন বিবি নামের এক ৭০ বছরের বৃদ্ধা। গত বৃহস্পতিবার বৃদ্ধার দুরবস্থার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী নিয়ে স্বশরীরে হাজির হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত কাফী বিন কবির।
সূত্র জানায়, স্বামীর মৃত্যুর পর এবাড়ি ওবাড়ি কাজ করে জমানো পয়সা দিয়ে মানুষ করেছেন ছেলেদের। আশা ছিলো ছেলে বড় হয়ে মা-কে সেবা করবে, ভরনপোষণ দিবে, কিন্তু ছেলেদের বিয়ের পর মা ছায়ারন বিবি করুন বাস্তবতার মুখোমুখি। কোলে পিঠে করে যে সন্তানদের বড় করলেন বিয়ে করে সেই সন্তানেরা এখন মাকে চেনেনা!
পৃথিবীর কি নির্মম পরিনতির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন ছায়ারন বিবি? বিয়ের পর ছেলেরা স্ত্রীদের তোপের মুখে মাকে আর বাড়িতে যায়গা দিল না। বৃদ্ধা মায়ের আশ্রয় বাঁশবাগানের ঝাড়ে! তাও গরুর গোবরের গর্তের কাছে? মায়ের জমানো কিছু টাকা দিয়ে ছোট্ট বেলার সেই আদরের সন্তানেররাই ঝুপড়ি ঘরটি বানিয়ে দিয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশলী কাফী বিন কবির এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ দুটি কম্বল, চাল, ডাল আলুসহ খাবার নিয়ে হাজির হন সেখানে। ব্যক্তিগতভাবে একহাজার টাকা নগদ দেন বৃদ্ধাকে। তিনি সেখানে একটি কাঠের পিড়িতে ইউএনও নিজে বসে বৃদ্ধাকে চেয়ারে বসিয়ে কথা বলেন তাঁর সাথে। শেষে বড় ছেলের পাকা ঘরের বারান্দায় তুলে দেন। নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য শাহিনুর রহমানকে এসময় নির্দেশ দেন তিন ছেলেকে আগামী দুই দিনের মধ্যে ইউএনও অফিসে যেতে। তিনি বৃদ্ধাকে প্রতিশ্রুতি দেন আপনাকে আর না খেয়ে এভাবে ঝুপড়িতে থাকতে হবে না।
তবে ইউএনও আসার খবর পেয়েই বাড়িতে তালা দিয়ে সড়ে পড়েন ছেলের বউরা। আগে থেকেই মাঠে কাজ করায় বাড়িতে ছিলেননা বৃদ্ধার ছেলেরা।
জানতে চাইলে, ইউএনও কাফী বিন কবির দৈনিক বরিশাল ২৪ ডটকম -কে বলেন, আমরা দিনে দিনে কতো নিচু স্থানে চলে যাচ্ছি ভাবতে অবাক লাগে, আমি একটি প্রগ্রামে ছিলাম, বৃদ্ধা মায়ের এই সংবাদটি পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে আমি ওই বাড়িতে গিয়ে মাকে উদ্ধার করি এবং খোঁজ খবর নিয়ে সাধ্যমতো ব্যক্তিগত ভাবে সহায়তা করি। ইউএনও বলেন, আমি যতোদিন চৌগাছা উপজেলায় কর্মরত আছি ততোদিনে ওই মায়ের কোনো সমস্যা নেই, তাঁর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন কাফী বিন কবির।
এদিকে প্রায় অর্ধযুগ ধরে বাঁশ ঝাড়ে ফেলে রাখা মায়ের খবরে ইউএনও আসার সংবাদ পেয়ে বৃদ্ধার ছেলে সন্তানরা গা ঢাকা দিলেও ব্যপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন ইউএনও কাফি বিন কবির। নিজের চেয়ারে ওই বৃদ্ধা মাকে বসিয়ে ইউএনও কাফী বিন কবির কাঠের একটি ছোট্ট প্রি তে বসে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছেন স্থানীয়দের। গর্ভের সন্তানের অবেলায় থাকা বৃদ্ধা মাকে উচ্চ পর্যায়ের একজন সরকারি কর্মকর্তার সম্মান দেখানোতে সাধারণ মানুষের কৌতূহল সৃষ্টি হয়।