বেওয়ারিশ মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্নকে কেড়ে নিবেন না মানবিক পুলিশ-কে ফিরিয়ে দিন
সোহেল আহমেদঃ
পুলিশ জনগণের বন্ধু কথাটি চিরপরিচিত থাকলেও নানা কারণেই পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েও প্রত্যাশা অনুযায়ী সুনাম অর্জণ করতে পারছে না। মামলা মকর্দমাসহ সামাজিক নিরাপত্তা পেয়েও জনসাধারণ পুলিশের প্রতি সামান্য প্রশংসা করতে কার্পণ্য করে আসছে যুগ যুগ ধরে।
পুলিশের অগণিত ভালো কাজগুলো বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনায় বরাবরই আড়ালে পরতে দেখেছি। আর নগণ্য একজন সংবাদকর্মী হিসেবে যখনই সরকারি আমলাদের জনকল্যাণমুলক ভালো কাজগুলো তুলে ধরতে চেয়েছি বা তুলে ধরেছি তখনই এক শ্রেণির মানুষের নিকট দালাল হিসেবে কঠাক্যের শিকার হয়েছি।
যাহোক, শিরোনাম নিয়েই আলোকপাত করতে চাই। যে পুলিশকে সাধারণ জনতা বাঁকা চোখে দেখে, দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যাদেরকে নিরলসভাবে কাজ করে যখন মানবিকতার পরিচয়ে জনমনে আস্থা অর্জণ করতে থাকে তখনই ওই এক শ্রেণি বাঁঁধা হয়ে দাড়ায়। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সিংহভাগ কর্তা বর্তমান সমাজের আলোকিত মুখ। মানবিক এবং মানবতা কি, কাকে বলে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আমার প্রিয় পুলিশ ভাইয়েরা!
বিশেষ করে বাংলার সেই অকৃতজ্ঞ এক শ্রেণি এবার করোনা ভাইরাসের উছিলায় হলেও পুলিশের মানবিকতা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে উপলব্ধি করেছে। এরপরও এই সমাজে যত দোষ সব পুলিশের! জন্মদাতা পিতা মাতাকে মৃত্যু সয্যায় রেখে, আদরের সন্তান যখন পালিয়ে যায় তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার / কবরের পাশে পুলিশ ভাইদের এগিয়ে আসতে দেখেছি। ফুটপাত, রাস্তার পাশে ড্রেনে এখানে সেখানে পরিচয়বিহীন অসহায় দরিদ্র মানুষের উপকারে পুলিশ যখন মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে, দেশ বিদেশে পুলিশ ভাইদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু এখন এটা বাদ দিয়ে অধিকাংশ মানুষের মুখে চাউর হতে চলেছে পুলিশ মানবিক। পুলিশের মানবকর্মের প্রতিটি কাজগুলো দেখে দেখে যুবসমাজের বৃহৎ একটা অংশ সমাজের অসহায় হতদরিদ্র গরীব মানুষের উপকারে নিজেদের নিয়োজিত করছে।
প্রতিটি কাজের পেছনে যেমন একটা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে, তেমনই সে লক্ষ্য কে বাস্তবায়ন করতে কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা লাগে।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর যে-সব কর্মকর্তারা সমাজের মানবতার বীজ বোপণ করেছেন তাদেরই একজন সদ্য বদলি হওয়া সিএমপি’র জনপ্রিয় মানবিক পুলিশ সদস্য শওকত হোসেন। নিজের স্ত্রীর জন্য শাড়ি কেনার টাকা দিয়ে যে শওকত হোসেন বিপদগ্রস্ত মায়ের পাশে দাঁড়ায়, বছরের পর বছর নিজের বেতনের টাকা দিয়ে যে শওকত হোসেন রাস্তায় পঁচে গলে পরে থাকা অসহায় বেওয়ারিশ মানুষদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়, মানুষের জন্য মানুষ চেতণাকে মনেপ্রাণে লালন করে নিজের মানুবিক কাজের পাশাপাশি যুবসমাজকে মানবিক কাজে অনুপ্রেরণা যোগায়, সেই পুলিশ সদস্য শওকত হোসেন এর মানবতা, মানবসেবার কথা লিখে প্রকাশ করা যাবে না। কোটি মানুষের হ্রদয়ে পুলিশ বাহিনীর মাত্র কনস্টেবল পদে থেকেই মহান হ্রদয়ের অধিকারী মানবিক পুলিশ শওকত হোসেন নিজের সম্মান যেমন বৃদ্ধি করেছেন, তেমনই সম্মান বৃদ্ধি করেছেন গোটা পুলিশ বাহিনীর। আমার ধারণা নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। দেশের বহু সংস্থা মানবতার জন্য কাজ করছে। মানুষের পাশে কমবেশি অনেকেই এগিয়ে আসছেন। তবে
মানবিক পুলিশ শওকত হোসেন-এর মানবিক কাজগুলো একটু ব্যতিক্রম! অর্থাৎ আমি ও আমার স্বজনরা রাস্তার পঁচন ধরা বেওয়ারিশ,ভারসাম্যহীন মানুষ দেখে এড়িয়ে যাচ্ছি, যেসব মানুষ দেখে নাকে রুমাল চেপে ধরে ঘৃণায় থুথু ফেলছি, সেই ঘৃণিত গলিতো মানুষটার সেবায় পুলিশ কনস্টেবল শওকত হোসেন ছাড়া একালে কোন ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন আমার চোখে পড়েনি। আর এ অসম্ভব কাজের যোগ্য একমাত্র শওকত হোসেন! একবার চিন্তা করতে গেলে গাঁ শিহরিত হয়।
পুলিশ কনস্টেবল শওকত এর ব্যক্তিগত পরিশ্রম সফলতা অর্জন করে যেদিন সিএমপি কতৃপক্ষের নজড়ে আসে। আর তখনই প্রতিষ্টানিকভাবে আলোর মুখ দেখে শওকত হোসেন এর মানবিকতার। গঠিত হয় সিএমপি’র মানবিক পুলিশ ইউনিট। একঝঁাক তরুণ স্বপ্বাজ পুলিশ সদস্য নিয়ে গঠিত মানবিক কাজে নিয়োজিত মানবিক পুলিশ ইউনিট এর বদলি হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত শওকত হোসেন টিমলীডার ছিলেন। সততা ও মেধা বুদ্ধি দিয়ে সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে দারুণভাবে নেমেছিলেন। জনসাধারণের মুখে পুলিশ এর মানবিক ইউনিট বেশ সারা ফেলেছিল। অসহায় রাস্তার সে ভবঘুরে মানুষটার বেঁচে থাকার স্বপ্নটা জোরে শোরে আলোচিতো হচ্ছিল। দাবি উঠেছিলো সারা দেশে অন্তত একটি বেওয়ারিশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার।
অথচ কোন এক অদৃশ্য কারণে মানবিক পুলিশ শওকত হোসেনের মানবতার সেবা হোঁচট! সম্প্রতি তাঁকে বদলি করা হলো। মানবিক কাজের অগ্রগতি থেমে গেলো! গুণজন চলছে মানবিক ইউনিট এর কাজগুলো বন্ধ রয়েছে। মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয় এটা আমাদের দাবী শওকত হোসেন কে তাঁর আগের স্থানে ফিরিয়ে দিন। মানবিক কাজে অনুপ্রেরণার অন্যতম পুলিশ সদস্যকে আবারও অসহায়ের পাশে দেখতে চাই। মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয় আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। ফিরিয়ে দিন বেওয়ারিশ মানুষদের বেঁচে থাকার স্বপ্নের নায়ক পুলিশ কনস্টেবল শওকত হোসেন এর আগের কর্মস্থল৷ আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত মানবিক, আন্তরিক। চট্টগ্রাম পুলিশ বিভাগের মানবিকতার মহাপুরুষ শওকত হোসেন এর মানবিক নানা কাজের দরুন সারা দেশের পুলিশ বিভাগের যে একটা আলাদা ইমেজ তৈরি হয়েছে তা চলমান রেখে দেশের প্রতিটি জেলায় একএকজন মানবিক শওকত গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় মানবিক শওকত হোসেনরাই তাঁদের মানবকর্ম দিয়ে মানুষের হ্রদয়ে স্থান করে নিবে বলে প্রত্যাশা করি। জয় হোক মানবিকতার, জয় হোক মানবকল্যাণে নিয়োজিত মানুষের।
লেখকঃমনিরুজ্জামান (সোহেল আহমেদ), সংবাদকর্মী।