মুক্তিযুদ্ধে স্বীকৃতিহীন নারীর সন্তানকে খুঁজে নিয়ে ঘর দিলেন ফারজানা ওহাব
মো: শহিদুল ইসলাম: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে ব্যাপক প্রশংসীত হলেও হতভাগা নারীর ভাগ্যে জোটেনি সেই মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি। স্বাধীন দেশে বাস করে নিভু নিভু করে চরম বঞ্চনা নিয়েই নিভে গেলো শেষ জীবনের আলোর প্রদীপ। কারো কাছ থেকেই পেলো না এতোটুকু সহযোগীতা। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সেই হতভাগ্য নারী আলেয়া বেগমকে খুঁজে বের করলেন জনপ্রিয় ভাইসচেয়ারম্যান ফারজানা বিনতে ওহাব।
৭১ এর সময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আলেয়া বেগমের মা বাবুগঞ্জ থানায় রান্নার কাজ করতেন। আলোর মা বলেই সকলের কাছে বেশ পরিচিতি ছিলো তার। থানায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার চেষ্টা ছিলো এই নারীর। ফলে থানা থেকে অস্ত্র সরবারহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন আলেয়া বেগমের মা।
কালের পরিবর্তনে সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে অনেকেই স্বিকৃতি লাভ করলেও লোকচক্ষুর আঁড়ালে রয়ে যান আলেয়া বেগমের মা। দারিদ্রতার অভিশাপ নিয়ে চির বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। রয়ে যায় তার সন্তান আলেয়া। বহু বছর পেড়িয়ে গেলেও কেউ খোঁজ নেয়নি আলেয়ার। ইতিহাস থেকে প্রথম জানায় বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য পারভেজ আলেয়ার মায়ের করুণ ইতিহাস জানান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ওহাবকে।
ফারজানা ওহাব আলেয়ার অসহায়ত্ব জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার অসহায় ও দুস্তদের জন্য বিনামূল্যের একটি বসত ঘর নির্মাণ করে দেন। ঘর পেয়ে আলেয়া মহাখুশি। শুধু আলেয়া বেগমকে নয়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়েছে অসহায় দুস্থ আইয়ুব আলী। দুজনেই উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ফারজানা ওহাব সব সময়ই নিজের পরিচ্ছন্ন কাজগুলোকে জনসাধারণের কাছে জানান দিতে আগ্রহী থাকেন। নিজের দ্বায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই এমন উদ্যোগ বলে জানা গেছে। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে পোষ্ট এ লিখেছেন………………
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। অনেক কাজের কথাই আপনাদের জানানো হয়না অলসতার কারনে। আপনারা অবশ্যই জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসহায় ও দুস্তদের জন্য বিনামূল্যে বসত ঘর দেন প্রতিটি উপজেলায়। আমি মাত্র দুই টি ঘরের বরাদ্দ পেয়েছি এক বছরে। একটি ঘর দেয়া হয়েছে আলেয়া বেগম কে যার ইতিহাস না বললেই নয়।
মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন এই আলেয়া আপার মা বাবুগঞ্জ থানায় রান্নার কাজ করতো তাকে আলোর মা বলে ডাকতো সবাই, আর তিনি তখন জীবনের ঝুকি নিয়ে বাবুগঞ্জ থানা থেকে অস্ত্র এনে আমার বাবার হাতে তুলে দেন।
এই ইতিহাস আমাকে প্রথম জানায় বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য পারভেজ ভাই। সবচেয়ে নির্মম কথা হলো এই বীর নারী শেষ বয়সে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায়, রাস্তায় ঘুরে রাস্তায়ই মৃত্যু বরন করেছেন যার খোজ আর এ জাতি রাখেনি। আর দ্বিতীয় জন আইয়ুব আলী তিনি খুব ছোট বয়সে বাবা কে হারিয়ে তার মা কে নিয়ে কঠিন সংগ্রাম করে টিকে আছে আর এখন তার তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে সংগ্রাম করে চলছে।
তিনি গ্রাম থেকে ডাব কিনে নিয়ে ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রি করে। তাও আবার নিয়মিত করতে পারে না। খুব কষ্টে তার সংসার চলে যা আমার নিজের চোখে দেখা। কথা হলো এই বিনামূল্যের ঘরের জন্য নাকি কেউ, কেউ টাকার লেনদেন করেছেন।
আমি কিন্তু বলেছি কেউ, কেউ টাকা নিয়েছেন সব জনপ্রতিনিধিরা কিন্তু তা করেনি। এক একটি ঘরের জন্য বরাদ্দের পরিমান ২,৯৯,০০০ টাকা। ঘরের কাজ সম্পন্ন করেছে পি আই ও অফিস। যাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের ঠিকানা দিয়ে দিলাম যাতে যে কেউ চাইলেই সব জানতে পারবে।
১|আলেয়া বেগম, স্বামীঃকালাম খান, গ্রামঃ চাঁদপাশা কিসমৎ ২| আইয়ুব আলী, পিতাঃ জাবেদআলী গ্রামঃ দরিয়াবাদ,চাঁদপাশা। সাবই ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন আমিন।