‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিত প্রয়াস দরকার’
সফিক জামান: নাগরিক অংশগ্রহণ কিংবা সম্পৃক্ততা ছাড়া এডিস মশার বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। দেশের এখন সবচেয়ে আলোচিত এবং উদ্বেগ উৎকন্ঠা ডেঙ্গু নিয়ে। আর আমরা সবাই আতঙ্কিত এবং চরম বিপর্যস্থ।
আমার বন্ধুপত্নী গত সপ্তাহে ডেঙ্গুর কাছে হার মেনে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সেই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি শাহআলমের মাতৃহারা দুটো মেয়ের কাছে আমাদের কিইবা জবাব দেয়ার আছে।
এভাবে আমার পরিচিত ৫/৬ জন এবার ডেঙ্গু জ্বরে অকালে চলে গেছেন।
আমি আমার ছেলে পরিবার প্রতিবেশি আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব পরিচিত জন কেউই এখন নিরাপদ নই। সকালে ঘুম ভাঙ্গে আতংক নিয়ে আবার কি দু:সংবাদ শুনতে হয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রধান দায়িত্ব আমাদের স্বনামধন্য নগরপিতার।
নগরভবনে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ বিশাল পরিচ্ছন্নকর্মীগন কি সম্পূর্ন ব্যর্থ নাগরিক নূ্ন্যতম সেবা প্রদান করতে..!!?? ডুমুরের ফুল ওয়ার্ড কাউন্সিলর নামে কেউ আছে বলে আমি কোনদিন তাদের চেহারা কিংবা এলাকায় দেখিনি।
অথচ আমি যে বাসায় থাকি প্রতিবছর আগষ্ট/সেপ্টেম্বর মাসেই বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স দেই। আমাদের এখানে ৭৬ এপ্যার্টমেন্টের একটি বিল্ডিং থেকে এক লক্ষ টাকার বেশি সিটি ট্যাক্স আদায় হয়। এবছর কি ট্যাক্স দেয়া উচিত এ প্রশ্ন এখন নাগরিকদের কাছে..!!
আমি কারো ব্যর্থতার কথা বলবো না। যে প্রানগুলো অকালেই হারিয়ে গেল তাদের কাছে আমরা সবাই অপরাধী। আমি বলতে চাই আমরা নাগরিক হিসেবে কতটা সচেতন। আসলেই কি আমরা নাগরিক মূল্যবোধ ধারন করি..!!??
আমি ১২ বছর ধরে ঢাকার সিটি সেন্টার সেগুনবাগিচায় বাস করি। আমাদের এপ্যার্টমেন্ট কমিটি থেকে আমরা ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগেই চারিদিক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখছি। এজন্য প্রয়োজনীয় ফিনাইল বিল্চিং পাউডার সহ সব কিছু দিয়ে প্রতিদিন ক্লিন করা হচ্ছে।
অথচ আমাদের রাস্তার অপসিটে কয়েকটা টিনশেডের উপর সারা ঢাকার ময়লার স্তুপ জমানো। আমাদের দারোয়ানকে দিয়ে ৩ দিন আগে তাদের এময়লা পরিস্কার করার জন্য অনুরোধ করি। কাজ না হলে গতকাল আমাদের ম্যানেজারকে দিয়ে আবারও পরিস্কার করার জন্য বলি। অথচ দেখুন কি অবস্থা। একদিকে ঢাকার সুউচ্চ বিল্ডিং এর শোভা অন্য দিকে ময়লার ডিপো।
আমরা যতই নিজের বাড়ি পরিস্কার রাখি তাতে কি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে..??? বাধ্য হয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিলাম। আমাকে শাহবাগ থানার কন্ট্রোল রুমে কানেক্ট করে দেয়া হোল। ৫ মিনিটের মধ্যে থানা থেকে মোবাইল ফোর্স এসে হাজির। দায়িত্বরত এসআই আমাকে কলব্যাক করে জানালো স্যার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এরমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এসে হাজির। দেখলাম বাড়ির মালিককে ডেকে সব পরিস্কার করাচ্ছে।
আমার প্রশ্ন আমার প্রতিবেশি তিনি কি ডেঙ্গু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। আর তার জমানো মশার প্রজনন ক্ষেত্র পরিস্কার না করলে এডিস মশা কিংবা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
তাই আমরা যতদিন নাগরিক না হবো ততদিন আমাদের এভাবেই অকালেই চলে যেতে হবে।আমরা কিংবা নগরপিতা কেউ আজ নিরাপদ না। আমি নগরবাসীকে আহবান করবো আমরা আমাদের বাড়িঘর পরিস্কার রাখি আর চারিপাশ পরিস্কার আছে কিনা সেটাও একটু খেয়াল করি।আর তা না হলে কাল আমি কিংবা আপনি মৃত্যুর মিছিলের সহযাত্রী হতে পারি।
আমার বিশ্বাস নাগরিক অংশগ্রহণ এবং সমন্বিত প্রয়াস ও সম্পৃক্তাতাই পারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে। আসুন আমরা সবাই এগিয়ে আসি। আল্লাহ সোবহান ওতায়ালাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমিন
(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
লেখক: সফিক জামান,যুগ্ন-সচিব,বানিজ্য মন্ত্রনালয়