বায়ুদূষণ নিয়ে শঙ্কিত মানুষ, প্রতিরোধে বরিশালে অভিযান নেই!
শামীম আহমেদ,বরিশালঃ সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, বিশ্বে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। তবে রাজধানী হিসেব করলে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়তে। এখানকা বায়ূদুষণ নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। বায়ুদূষণে রাজধানী শীর্ষ শহরে পৌঁছায় বরিশালেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বরিশাল নগরীর বায়ু নিয়ে শঙ্কিত নগরবাসী।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অধীন বরিশালের সার্বক্ষণিক বায়ুরমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, নগরীর বায়ু এখন পর্যন্ত দূষণকারী উপাদান থেকে সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। তবে যেসব কারণে বায়ু দূষণ ঘটছে সেসবের উৎস নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। বিশেষ করে নগরীর অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি ওষুধ উৎপাদনকারী কারখানা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং স্বর্ণ কারখানা বায়ু দূষণ ঘটালেও গত নয় বছর ধরে কোন অভিযান পরিচালনা করেনি পরিবেশ অধিদপ্তর।
বরিশালের সার্বক্ষণিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র টেকনিশিয়ান আব্দুর জব্বার বলেন, নগরীর বায়ু দূষণে নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড ও ডাস্ট দায়ী। তবে বরিশালের বায়ুতে এসব উপাদান এখন পর্যন্ত সহনীয় মাত্রায় রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গত ২৭ নভেম্বর নগরীতে নাইট্রিক অক্সাইড ছিল ১.৪৯, যার সহনীয় মাত্রা ১০। একইভাবে নাইট্রাস অক্সাইড ছিল ১৫.৮২, যার সহনীয় মাত্রা ১০ থেকে ২০। কার্বন মনোঅক্সাইড ছিল দুই, যার সহনীয় মাত্রা পাঁচ। সালফারডাই অক্সাইড ছিল ২১১, যার সহনীয় মাত্রা ৩০০। ডাস্ট বা ধুলিকনা ছিল ৭৭.০২, যার সহনীয় মাত্রা ৭০। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর নগরীতে নাইট্রিক অক্সাইড ছিল ২.৯১, নাইট্রাস অক্সাইড ছিল ১২.৭৮, কার্বন মনো অক্সাইড ছিল ১.৫, সালফারডাই অক্সাইড ছিল ৬৬৮, ডাস্ট বা ধুলিকনা ছিল ১১৯.৩।
সিনিয়র টেকনিশিয়ান আরও বলেন, বরিশাল নগরীর বায়ুতে প্রতি সপ্তাহেই ধুলিকনা এবং সালফারডাই অক্সাইড সহনীয় মাত্রার উপরে ওঠানামা করছে। দূষণরোধে শিল্পকারখানার বর্জ্য, যানবাহনের কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার।
এ বিষয়ে পরিবেশ আইনবিদ সংস্থার (বেলা) বরিশালের সমন্বয়ক লিংকন বায়েন বলেন, বরিশাল নগরীর অভ্যন্তরের বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা বিশেষ করে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে নেই। এসব কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও বর্জ্য নির্গত হচ্ছে। বিভিন্নস্থানে গড়ে ওঠা স্বর্ণ কারখানা থেকে বায়ু দূষিত হচ্ছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে বহু বছর যাবত অভিযান করছে না পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআরটিএ।
তিনি আরও বলেন, নগরীর বায়ু যে অবস্থায় আছে সে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি জটিল হবে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর কাটপট্টি এলাকায় সন্ধ্যার পরে ঢুকলে স্বর্ণ কারখানার কালো ধোঁয়ায় পথ চলা যায় না। এসিড দিয়ে স্বর্ণ পুড়িয়ে এখানে নীরব ঘাতক ক্যান্সারের ঝুঁকি ঘটানো হচ্ছে। বায়ু দূষণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিন, কেমিস্ট ও রেফকোর কারখানা এখনও নগরীর মধ্যে থেকে অপসারণ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল নগরীর কাশিপুর রেইনট্রিতলা নামক এলাকায় ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। ওই অভিযানকে কেন্দ্র করে সেদিন পরিবহন শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই ঘটনার পর বরিশালে বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নগরীর সাপানিয়ায় সিটি কর্পোরেশনের ময়লাখোলার ভাগারের কারণে আশপাশের বৃহৎ এলাকার মানুষ নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। তিনি বলেন, বায়ু দূষণরোধে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে বরিশালবাসী আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পাওয়ায় খুব শিগগিরই তারা বায়ুদূষণ রোধে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছেন। নগরীর যেসব শিল্পকারখানা ক্ষতিকর, তাদের ছাড়পত্র নবায়ন করা হচ্ছেনা। বিশেষ করে ওষুধ কারখানার কেমিস্ট ল্যাবরেটরিজের ছাড়পত্র নবায়ন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অপসোনিন কর্তৃপক্ষ কারখানা নগরী থেকে স্থানান্তরের অঙ্গীকার করেছেন। স্বর্ণ কারখানাগুলোকেও নোটিশ দেওয়া হবে।
২০১১ সালের পর থেকে বায়ু দূষণ রোধে অভিযান পরিচালনা না করা প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, এখন থেকে নগরীতে কালো ধোঁয়া রোধে অভিযান চালানো হবে।