চট্টগ্রাম রেলওয়ে জাদুঘরে ঝুলছে তালা
আব্দুল করিম, চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃগত চার বছর ধরে বন্ধ থাকা রেলওয়ে জাদুঘরের আশপাশের এলাকা এখন মাদকসেবীদের আখড়া ও বখাটেদের দখলে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয় এবং শহীদ শাহজাহান মাঠের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে কাঠের তৈরি একটি দোতলা ভবন। গত চার বছর আগেও এই ভবনে প্রবেশের জন্য ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা আসতো শিক্ষা সফরে। কারণ দেশের একমাত্র রেলওয়ে জাদুঘর এটি। গত চার বছর ধরে বন্ধ থাকা রেলওয়ে জাদুঘরের আশপাশের এলাকা এখন বখাটেদের দখলে। ছিনতাই, মাদক সেবন এবং নানা অনৈতিক কাজের আখড়ায় পরিণত হওয়া জাদুঘরটি দেখতে এসে প্রতিদিনই নিরাশ হয়ে ফিরছেন দর্শনার্থীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, জাদুঘরের সামনের খোলা জায়গায় বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা দল বেধে আড্ডা দিচ্ছে। এ সময় ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে চট্টগ্রামের একটি কলেজের ছাত্র আরেকজন ছাত্রীকে প্রকাশ্যে মারধর করছে। স্থানীয় কয়েকজন যুবক এসে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছে না ১২ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত জাদুঘরটি। গত চার বছর ধরে রেলওয়ে জাদুঘরটি বন্ধ হয়ে আছে এই তথ্য সম্পর্কে অবগত নন বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) বোরহান উদ্দিন।জাদুঘরটি বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘জাদুঘরটি এখনও খোলা আছে। পরবর্তী সময়ে তিনি বিভাগীয় প্রকৌশলীকে ফোন করে এ বিষয়ে পরে তথ্য জানাবেন বলে জানান। চট্টগ্রাম রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলের প্রাচীন ঐতিহ্য, পুরোনো যন্ত্রপাতি, রেলের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে মূলত রেলওয়ে জাদুঘরের উৎপত্তি।জাদুঘরে ব্র্রিটিশ আমলের রেলের কিছু দুর্লভ সংগ্রহ, সেই সময়ের ছবি, পুরোনো মনোগ্রাম, সিগন্যাল বাতি, ফ্যান, হর্ন, পতাকা, টেলিফোন, ঘণ্টা, চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন সময় ব্যবহার করা রেল লাইনসহ অসংখ্য জিনিসপত্র রয়েছে। ৪২০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত কাঠের তৈরি দোতলা ভবনটি এক সময় রেলওয়ের বাংলো হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ৫ নভেম্বর থেকে এটি দেশের একমাত্র রেলওয়ে জাদুঘর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ২০১৬ সালে রেল কর্তৃপক্ষ জাদুঘরটি সংষ্কার কাজ শুরু করে। তখন থেকেই এটি বন্ধ আছে বলে জানায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, রেলওয়ে জাদুঘর এলাকায় প্রতিদিনই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলে স্থানীয় বখাটেরা মোবাইল ফোন, টাকা ছিনিয়ে নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাদুঘরের একজন কেয়ারটেকার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জাদুঘর বন্ধ থাকার কারণে ভেতরের মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া জাদুঘরে রংয়ের কাজ করার কারণে ভেতরের জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে আছে। এভাবে বন্ধ থাকলে জাদুঘরের ভেতেরর জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, জাদুঘর দেখতে প্রতিদিনই এখানে দর্শনার্থীরা আসেন। তালাবদ্ধ থাকার কারণও জানতে চান অনেকে। কিন্তু আমার কাছে তো কোনো উত্তর নেই। জাদুঘরের আশাপাশের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখেও কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে আমরা কি করতে পারি। পরিবার নিয়ে জাদুঘরে বেড়াতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে জাদুঘর এবং এর আশপাশের জায়গা ভালো লাগে বলে প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জাদুঘরের মূল ভবন তালাবদ্ধ। এটি চালু থাকলে আমরা রেলের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সম্পর্কে জানতে পারতাম। অচিরেই জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘দেশের একমাত্র রেলওয়ে জাদুঘরটি লোকবল সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছে না। তারপরও পুনরায় চালু করা যায় কিনা দেখব।’’