বরিশালে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন, বিনা প্রয়োজনে বের হলেই গ্রেপ্তার
মোঃ জিহাদ রানা, বরিশাল অফিসঃ করোনা ভাইরাস, গোটা বিশ্বে এক আতঙ্কের নাম। এই ভাইরাসটিকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলে।
এতে প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। আইইসিডিআর এর তথ্য মতে বাংলাদেশে আক্রান্ত ১২৩, মারা গেছেন ১২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গত কয়েকদিন ধরে ছুটি ঘোষণা করে সব কিছু বন্ধ করে সকলকে নিজ নিজ ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এছাড়া ঘরে থাকা মানুষের খাবার সংকট থাকলে তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বরিশালে করোনা ভাইরাস মোকাবেলেলায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গনজমায়েত বন্ধ, নিয়ম না মেনে দোকান খোলা রাখা, বিনা কারনে বাসা থেকে বের হওয়া সহ বাজার মনিটরিংএর জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে, সরকারী নির্দেশনা না মানায় জেল-জরিমানাও করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসনের নিরাপত্তার মধ্য দিয়েও সাধারন মানুষকে বের হতে দেখা গেছে রাস্তায়।
প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম থাকলেও বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা গেছে মানুষের ভীড়। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলোও খোলা রাখতে দেখা গেছে।
নগরীর কাটপট্টি রোডে ঘুরে দেখা যায়, ঐ এলাকার কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক দোকান বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ দোকানই খোলা রয়েছে। নগরীর পলাশপুর এলাকার একাধিক সচেতন বাসিন্দারা জানায়, ‘পলাশপুর বড় ব্রিজ এলাকা, বউ বাজার সহ বিভিন্ন অলি-গলিতে চায়ের দোকানগুলো খোলা রয়েছে, এসব দোকানে বসে মানুষ আড্ডা দিচ্ছেন, মাঝে মাঝে পুলিশ আসলে দোকান বন্ধ করা হয় আবার পুলিশ চলে গেলে দোকানে পুনরায় আড্ডা শুরু হয়, কবে এদের হুশ হবে বুঝতেছি না।’ বেলতলা এলাকার আবু মিয়া বলেন, ‘এই ভাইরাসের মধ্যেও কারও একটু ডর-ভয় নাই, সবাই বাইরে বাইর হইয়া ঘোরাফেরা করে, চায়ের দোহান-হোটেলে আড্ডা দেয়।’ ভাটিখানা এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ আসলেই দোকান বন্ধ আর পুলিশ চলে গেলেই আবার দোকান খোলা, কেন এই লুকোচুরি? এটাতো পুলিশের সাথে লুকোচুরি না, আমরা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করছি।
এদিকে আজ সোমবার থেকে বরিশালে করোনা প্রতিরোধে কঠোরভাবে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমান জানায়, বরিশালবাসীকে নিরাপদে রাখতে কঠোর হতে বাধ্য হলাম, সরকারী নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহীনি ও র্যাব সদস্যদের। অন্যদিকে বিকেল থেকেই ভিন্নভাবে মাঠে কাজ করছেন পুলিশ।
বিভিন্ন সড়কে চেকপোষ্ট বসিয়ে যারা বিনা কারনে বাসা থেকে বের হয়েছেন আটকে দেয়া হচ্ছে তাদের যানবাহন। বাসা থেকে বের না হওয়ার জন্য করা হচ্ছে মাইকিং। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, করোনা প্রতিরোধে ইতিমধ্যে বিএমপি কর্তৃক সচেতনতা মূলক বহু প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, অপ্রয়োজনে ঘরের বাহির যেতে নিষেধ সহ সরকারী সকল নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক যে দোকান সমূহ খোলা রাখার কথা রয়েছে শুধুমাত্র ঔষধ তথা মেডিকেল সার্ভিস সমূহ ব্যতিত সকল দোকান এমনকি খাবারের দোকান, কাঁচা বাজারের দোকান, মুদি দোকান সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া পাড়া-মহল্লার দোকানগুলো সকাল থেকে দুপুর দুটো’র মধ্যে বন্ধ করতে হবে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার বলেছেন. ‘অপ্রয়োজনে কাউকে ঘরের বাহির পাওয়া চলবে না। এ নির্দেশ অমান্য করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার সহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে দু:স্থ ও অসচ্ছল পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্র্রী বিতরন এবং বরিশালের সড়ক সহ বিভিন্ন স্থানে জীবানুনাশক স্প্রে প্রয়োগ করে আসছেন জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ।