বরিশালে মাত্র সাত দিনেই করোনাকে জয় করলেন ডা: শিহাব উদ্দিন
সোহেল আহমেদ, দৈনিক বরিশাল২৪.কমঃ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে কাপছে বাংলাদেশ। বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এই ভয়াবহ মহামারী ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের নামিদামি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকপে বন্দীদশায় সর্বসাধারন। স্বাস্থ সুরক্ষায় নানা প্রতিকুলতা থাকা সত্তেও আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে দেশের একদল সাহসী চিকিৎসক।
চলমান করোনা সংকটে বরিশালের চিকিৎসকরা এখন পর্যন্ত যে সাহসীকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন তা ইতিমধ্যে দেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বরিশাল জেলায় যে কয়জন চিকিৎসক তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছিলেন তার মধ্যে ডা. শিহাব উদ্দিন অন্যতম। সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় সেবায় পিছুপা হননি ৩৯তম বিসিএস ক্যাডারপ্রাপ্ত তরুণ এই চিকিৎসক। জীবন বাজি রেখে অত্যান্ত দক্ষতার সাথেই বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্স এ নাগরীকদের স্বাস্থসেবা দিয়ে আসছিলেন। ফলে হঠাৎ করেই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পরেন ডা. শিহাব। এ যেনো এক আলোর নিচে অন্ধকার নেমে আসা প্রদীপের মত!
জানাযায়, ২০ এপ্রিল ডা. শিহাব উদ্দিনের করোনা পজেটিভ ধরা পরে। সবার জীবনকে সুস্থ রাখতে গিয়ে নিজেই হবেন নিশ্চিত মৃত্যুর পথযাত্রী, এ বাস্তবতাকি কেউ মেনে নিতে পারে? করোনা পজেটিভের প্রথম রিপোটটি পেয়ে ডা. শিহাব কিছুটা ভেঁঙে পড়লেও দেশ এবং দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে মানুসিকভাবে চাঙা হয়ে উঠলেন। নিজেকে স্থির করলেন। মনোবল হাঁড়ালেন না একটুও। সোজা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি হন। ততক্ষণে বাবা মায়ের আদরের সন্তানটির জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়ার দরখাস্থ করেছেন ডা: শিহাবের গর্বিত পিতা মো: আবুল কালাম হাওলাদার।
কঠিন বিপদের মুহুর্তে ডা. শিহাবের পাশে স্বাস্থ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা.বাসুদেব, ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন, বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন এবং ডা. সুবাস সরকার। ডা. শিহাব করোনা পজেটিভ অর্থাৎ কোভিট-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পরে তার সহকর্মী সিনিয়র চিকিৎসকরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগীতা অব্যত রাখেন। ফলে বিশ্বের আক্রান্তদের মৃত্যুর মিছিলের প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে উঠলেও ডা. শিহাব মানুসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করেছিলেন ।
সঠিক স্বাস্থবিধি মেনে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি ও মনোবল চাঙা থাকায় করোনায় কিছুতেই কাবু হননি বরিশালের করোনা যোদ্ধা ডা. শিহাব। ফলে অনেকটা অলৌকিকভাবেই মাত্র সাত দিনের মাথায় তিনি সু্স্থ হয়ে ওঠেন। গত ২৭ এপ্রিল তার করোনার ১ম রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। একই দিন তার ফলোআপ রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক চিকিৎসকসহ স্বাস্থকর্মী যেখানে মৃত্যুর সাথে লড়ছে সেখানে সাত দিনের এতো অল্পসময়ে একজন করোনা যোদ্ধার জয়ে বিস্মিত সহকর্মীরা। অনুপ্রানিত পরিবার ও তার স্বজনরা।
ডা: শিহাব ২০১৯ সালে বিসিএস স্বাস্থ বিভাগে ক্যাডারপ্রাপ্ত হন। এরপরে তিনি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থমেপ্লেক্স এ যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই আন্তরিকতার সাথে সাধরণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে উপজেলাবাসীর কাছে একজন তরুণ মানবিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বকশিরচর গ্রামে। ছয় সদস্যর পরিবারে ডাক্তার শিহাব সবার ছোট।
করোনা জয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দৈনিক বরিশাল২৪.কম-কে ডা. শিহাব বলেন, করোনা পজেটিভ হওয়ার পরে মানুষকে প্রথমত মানুসিক শক্তিবৃদ্ধি করতে হবে, সঠিক নির্দেশনা মেনে চলতে পারলে অবশ্যই করোনা থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করে বরিশালসহ দেশবাসীকে করোনা বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করেন সদ্য করোনাজয়ী তরুণ ডা: শিহাব উদ্দিন।