জনপ্রতিনিধিদের রোল মডেল মাশরাফি বিন মুর্তজা
অনলাইন নিউজঃ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। অসহায়দের সহায়তা থেকে শুরু করে চিকিৎসক-সাংবাদিকের পিপিই, জেলখানার কয়েদিদের জন্য বিভিন্ন সুরক্ষা উদ্যোগ, অর্থ সহায়তা যোগাতে নিজের ব্রেসলেট নিলাম করা, কৃষকদের জন্য ধান কাটার মেশিন কিনে আনার মতো জনহিতকর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই একাধিক প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন ম্যাশ
ক্যাপ্টেন ম্যাশের এসব কার্যক্রমে এলাকার মানুষ যেমন খুশি, তেমনি জনপ্রতিনিধিদের রোলমডেল হিসেবে সারাদেশের মানুষের কাছে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। ২২ গজের সীমা পেরিয়ে তিনি এখন লড়ছেন বৈশ্বিক মহামারি থেকে এলাকার জনগণকে পরিত্রাণ করতে।
শুরুটা গত মার্চ থেকেই। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার আগেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে জেলায় চায়ের দোকান বন্ধে নির্দেশ দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এতে বিপাকে পড়েন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আর জনমানবহীন রাস্তায় সারাদিন ঘুরেও রোজগার হচ্ছিল না ভ্যানচালক আর হকারদের। নিজ এলাকার এসব মানুষের জন্যই ব্যক্তিগত তহবিল ও এক প্রবাসী আত্মীয়ের সহায়তায় প্রথমবারের মতো ত্রাণের ব্যবস্থা করেন এমপি মাশরাফি।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে নড়াইল সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলো যখন রোগীশূন্য,সাধারণ রোগের চিকিৎসা নিতেও হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন সাধারণ রোগীরা। আউটডোর বন্ধ, ডাক্তারদের উপস্থিতিও কম। এমন পরিস্থিতিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে অসহায় রোগীদের সেবা দিচ্ছে মাশরাফির ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম। বাস্তবায়ন করেছে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন।
“রোগী নয় চিকিৎসক যাবে রোগীর কাছে” এই স্লোগান নিয়ে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নড়াইলেরই আরেক কৃতি সন্তান ডা. দ্বীপ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী ডা. স্বপ্না রাণী সরকার এই চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন। ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে দেওয়া দু’টি হটলাইনে ফোন করলেই বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে মেডিকেল টিম।
পাশাপাশি নড়াইল সদর হাসপাতাল ও সেখানে আসা রোগীদের জীবাণুমুক্ত রাখতে সদর হাসপাতাল গেটে ১০ এপ্রিল থেকে চালু করা হয়েছে একটি জীবানুনাশক চেম্বার। মাশরাফির উদ্যোগে একই ধরনের একটি চেম্বার চালু করা হয়েছে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও।
১২ এপ্রিল নড়াইল জেলা কারাগারের কয়েদীদের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন মাশরাফি। ১৪৪ জন কয়েদীর জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস এবং সাবান উপহার দেন তিনি।
তরুণ এই সংসদ সদস্যের ভাষায়, কৃতকর্মের জন্য সাজা ভোগ করলেও কয়েদীদের সুরক্ষা দেওয়াটা জরুরি। এখানে থাকা অবস্থায় এবং বের হয়ে তারা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
জীবানুনাশক চেম্বার স্থাপনের পর ২২ এপ্রিল নড়াইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্য মাশরাফি ব্যবস্থা করেন নিরাপদ সেবা কক্ষের। সেখানে বসে চিকিৎসকরা নিরাপদে থেকে চিকিৎসা দিতে পারছেন,অন্যদিকে রোগীদেরও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমছে।
মাশরাফির স্থাপন করা ডক্টরস সেফটি চেম্বারে ৬ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত আছেন চিকিৎসক আর রোগীদের সহায়তায়।
শুধু স্থাপন করেই দায়িত্ব শেষ করেননি ম্যাশ। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও নজরদারি করছেন তিনি।
সদর হাসপাতালে ঢুকলে প্রথমেই আপনাকে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এরপর সেফটি চেম্বারের সামনে বসিয়ে চিকিৎসা সহায়তা এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে হাসপাতালের ভেতর থেকে ওষুধ এনে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। সেফটি চেম্বারে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রচারণাও চালাচ্ছেন তারা।
মহামারির প্রভাবে চরম শ্রমিক সঙ্কটে বোরো ধান কাটা নিয়ে কৃষক যথকস দুশ্চিন্তায় ঠিক তখনই জেলার কৃষকদের জন্য ধান কাটার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের ব্যবস্থা করেন নড়াইল -২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার প্রচেষ্টায় নড়াইল জেলার জন্য ৪টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন বরাদ্দ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২৮ এপ্রিল দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকদের মাঝে মেশিনগুলো হস্তান্তর করেন তিনি।
এছাড়া, মাশরাফি পরিচালিত নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইমাম,পুরোহিত, কর্মহীন শ্রমজীবি ও পেশাজীবীদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড। ৬ মে থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে মাশরাফির ফাউন্ডেশন।
মাঠে মাশরাফির অসংখ্য অর্জনের স্বাক্ষী তার রূপোর ব্রেসলেটটি। করোনাভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়া অজস্র মানুষকে সহায়তা করতে সেটি নিলামে তোলেন তিনি। ১৭ মে মাশরাফির সেই শখের ব্রেসলেটটি কিনে নেন বাংলাদেশ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. মমিনুল ইসলাম।তবে দীর্ঘ ১৮ বছর সুখ-দুঃখের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে থাকা ব্রেসলেটটি মাশরাফিকেই উপহার দেন তিনি।
রোববার দিনগত রাত পৌনে একটায় শেষ হয় নিলামটি। ফেইসবুকে ‘Auction 4 Action’ পেইজ-এ নিলামে ব্রেসলেটটির ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ৫ লাখ টাকা। নিলামে তুমুল আগ্রহ ও লড়াই শেষে এটি কিনে নেয় বিএলএফসিএ। লাইভে মমিন উল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ব্রেসলেটটি তারা কি করবেন? জবাবে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটি উপহার হিসেবে মাশরাফিকেই দিতে চাই। তার হাতেই এটি সবচেয়ে বেশি শোভা পায়।
ব্রেসলেটটি মাশরাফির হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেয়ার জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা জানান তিনি। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য মাশরাফিকে অনুরোধ করেন।
সম্মতি জানিয়ে মাশরাফি বলেন, আপনারা যদি ব্রেসলেটটি নিজেদের কাছে রাখেন তাতেও আমি কষ্ট পেতাম না। এটা আপনাদের হাত থেকে পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এটা আর পরবো না।
ক্রিকেট যারা নিয়মিত দেখেন বিশেষ করে যারা মাশরাফি বিন মুর্তজার ভক্ত তারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন তার হাতের ব্রেসলেটটি। আগে এটা নিয়ে না ভাবলেও ব্রেসলেটটি নিলামে তোলার পর থেকেই ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।