সংস্কারের সিদ্ধান্তে কেটে গেলো এক বছর, বাস্তবায়নের নাম নেই
সিলেট প্রতিনিধিঃ ঝুকি পূর্ণ ও সংস্কারের কথা বলে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্বীন ব্রিজ। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এতে ভোগান্তির সৃষ্টি হলেও সংস্কারের আশায় সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু সিদ্ধান্তের এক বছর অতিবাহিত হলেও ঘুম ভাঙ্গেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের ঐতিহ্যের ধারক কিন ব্রিজের দুই পাশের প্রবেশ পথে লোহার বেষ্টনী দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং পুলিশ (ট্রাফিক বিভাগ)।
কিন্তু ১ মাস ২২ দিন পর দক্ষিণ সুরমার মানুষের তোপের মুখে পিএসসি-ইবতেদায়ী পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে রিকশা চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া হয় ব্রিজটির দু-পাশের লোহার বেষ্টনী। তবে সিসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো ঐতিহ্য রক্ষার জন্যে কিন ব্রিজ দিয়ে যানচলাচল বন্ধ থাকবে।
ব্রিজটি দেখভালের মূল দায়িত্ব সড়ক ও জনপদ বিভাগের। কিন্তু সংস্কারের দোহাই দিয়ে এক বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্টদের দায়সার কাজে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
এদিকে শুরু থেকে কিন ব্রিজের দু’পাশ ভাসমান হকাররা দখল করে ব্যবসা করছেন। সেই সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরেই ঝুঁকি পূর্ণ এই সেতু দিয়ে চলাচল করছে অটোরিকশা(সিএনজি)সহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।
ব্রিজ বন্ধের ওই সময়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সেতুটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সে কারণে সংস্কারের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রায় শতবর্ষী এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন সুরমা নদী পার হয় অসংখ্য যানবাহন। ফলে সেতুর বিভিন্ন স্থানে গর্ত হওয়ায় যান চলাচল অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ঐতিহাসিক এই স্থপনাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কিন্তু তার এই আশ্বাসের মাসের পর মাস পেড়িয়ে গেলেও পুরনো চিত্রটি রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ব্রিজটি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কিন ব্রীজ সিলেটের ঐতিহ্য। এটিকে রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। কিন ব্রীজে হেটে যাওয়ার মধ্যে আলাদা একটি আনন্দ রয়েছে। এছাড়া সংস্কারের কারনে এটি বন্ধ ছিল। কিন্তু একটি মহলের ইন্ধনে আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। যা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, খুব শীগ্রই সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হোক। কিন ব্রীজের সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলে সিলেটে গৌরব ও ঐহিত্য হিসেবে এটি মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে। সিলেট সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান,ব্রিজটি মূলত সড়ক ও জনপদ বিভাগের।
তিনি আরও জানান,ব্রিজটিতে যান চলাচল বন্ধ করার পর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে একটি মিটিং হয়। সে মিটিংয়ে সিসিক, সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ওই মিটিংয়ে এ বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে ব্রিজে সংস্কার কাজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিলো।
তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া জানান, কিন ব্রিজের সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ পেতে আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেছি। এখনও বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ আসলে কাজ শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর কিনব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। নির্মাণ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নাম রাখা হয় ‘কিন ব্রিজ’।