বাবার সততা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো - দৈনিক বরিশাল ২৪ দৈনিক বরিশাল ২৪বাবার সততা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো - দৈনিক বরিশাল ২৪

প্রকাশিতঃ জুন ১৯, ২০২২ ৮:৫০ অপরাহ্ণ
A- A A+ Print

বাবার সততা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো

সোলাইমান শেখঃ আমার বাবা আব্দুল কদ্দুছ মাষ্টার (মাষ্টার সাহেব) শিমলা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন।দীর্ঘ ৪৩ বছর পাঠদান করেছেন, উনার চাকরির শুরুতে বেতন ছিল ৬৫ টাকা আব্বার কাছে শুনছি এবং উনি ১৩বছর পায়ে হেটে পাঠদান করছেন।

বাড়ি থেকে স্কুলের দূরুত্ব ৬কিঃ যাওয়া আসা ১২ কিঃ রাস্তা! বাবা বিয়ে করেন বয়স্ক অবস্থায় সবার বড় সন্তান ছিলেন তিনি, ভাই বোনদের দায়িত্ব ছিল তার উপর ১০ জন ভাই বোন ছিল তারা, উনি ৭জনের বিবাহর কাজ শেষ করে বিয়ে করেন,তখন আম্মার বয়স ছিল ১৩ বছর, তার পর আমার নানা একটা সাইকেল কিনে দেন তাকে! সেই সাইকেলে করে আমার বড় ভাই বাবার স্কুলের সহযাত্রী হন, আমাদের চরম অভাবের সংসার ছিল, সেটা আমরা কাছে থেকে দেখছি কিন্তু বাবা তা অনুভব করতে দেয় নাই, যখন বাবার ক্যান্সার হয় তখন একদিন রাতে বাবা, একটু করে বলছিল, সে কোন দিন স্কুলে টিফিন করে নাই, বাবার কোন বন্ধু ছিল না, কারন বন্ধুরা যদি একদিন খাওয়ায় ২য় দিন তাদের খাওয়াতে হবে! সেই ক্ষমতা তার ছিল না, তাই সবার থেকে দূরে দূরেই থাকতেন।

অথচ তার বড় সন্তান তার স্কুলে পড়তো, সে কোন দিন টিফিন না খেয়ে থাকতো না, তার পর আমার পালা, আমি ছিলাম একটা লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটেছি, জীবনে সব থেকে অপছন্দ বিষয় ছিল পড়া লেখা, আমার বাবা ম্যাথ আর বিজ্ঞান পড়াতো, আমাদের বাড়িতে ভোর বেলায় দূরে থেকে ছাত্র/ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে আসতো, আর বাবা আমাকে বলতো তুই আমার কাছে পড় মাস শেষ হলে সবাই ১৫০টাকা দেয় আমি তোকে ২০০টাকা করে দিবো! কিন্তু আমি ভুলেও বাবার কাছে বই নিয়ে বসতাম না।
আর আমি একটু ভেজাইলা চালাক ছিলাম বাবা অনুরোধ করলো তার স্কুলে আমাকে ভর্তি হতে! আমি চিন্তা করলাম যে পরিমান স্কুল ফাঁকি দেই! যদি বাবার স্কুলে যাই, আমি তো আর ফাঁকি দিতে পারবো না, শুধু তার স্কুল বাদে প্রায় সব স্কুল মাদ্রাসা আমার দেখা শেষ! যখন অষ্টম শ্রেণীতে উঠলাম তখন রোল ছিল ১৯ ছাত্র হিসাবে ছিলাম সব সময় পিছের ব্রেঞ্চে পড়া লেখা মোটেও করতাম না! মাদ্রাসার নাম বলে সারা দিন ঘুরে বেড়াইতাম ছুটি দিলে বাড়ি ফিরতাম! এর পর ধরা পড়ে গেলাম, যে আমি মাদ্রাসায় যাই না! বাবা তখন ঐ প্রতিষ্ঠানের মেনেজিং কমোটির মেম্বার, তারা বিচার দিলো আপনার ছেলে আসে না তো?

এটা শুনে আমি মাদ্রাসায় উপস্থিত হই! আর মনে হলো স্যাররা আমার জন্যই অপেক্ষা করছে! প্রচন্ড ভাবে তারা আমাকে সেদিন প্রহার করে অনুপস্থিত থাকার জন্য, আমি বাড়ি এসে বলে দেই আর পড়বো না আমি! তার পর আম্মা প্রচন্ড মার মারছিল সেদিন! তখন বাবা আমাকে একটা চিঠি লিখে দিছিল, যে যখন স্যার মারতে আসবে এটা তার হাতে দিবি! বাবা সেখানে লেখছিল, আমার সন্তান যদি কোন পড়া না পারে তাকে দয়া করে বেতের আঘাত করবেন না, আমি চাই ও নিয়মিত হোক, ভয়ে যেনো ও মাদ্রাসা বন্ধ না করে!

আপনাদের প্রতি অনুরোধ। তখন বাচ্চু হুজুর মারতো সব থেকে বেশি! নামাজের জন্য ৫টা করে বেতের আঘাত! পড়া তো আছেই, তার পর সেই চিঠি সব বন্ধুদের মাঝে হুজুর জোরে জোরে পড়ে আর, সব বন্ধুরা হাসে! বাট হুজুররা আর আমাকে মারে নাই!

তার পর সবাই বললো আপনার ছেলে তো এই ভাবে পড়লে পাশ করতে পারবে না! তার পর আমি বাগাছরা মাদ্রাসায় ভর্তি হই! সেখানে নজরুল মামা ইংরেজি পড়াতো সেখানে গিয়ে তার সাথে পরিচয়, সেও আমার বাবা কে খুব সম্মান করতো।

সেও মারমুখি টিচার ছিলেন, উনি আছেন আমার লিষ্টে, হয়তো দেখলে হাসবেন! আমি সেখানেও,বেশি দিন থাকতে পারি নাই! তার পর চলে আসি নানার বাড়ি সেখানে একটা মাদ্রাসায় ভর্তি হই, বাবা আমার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন, যদি আমি একবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারি সে তার পুর মাসের বেতন আমাকে দিয়ে দিবে! এই ভাবে স্কুল মাদ্রাসা পরিবর্তন করতে করতে ১বছর গ্যাপ। তার পর আমি বাবার সেই বেতনের আশায়! পড়ায় মন দেই, আর আমি ৪,১৯ GPA পেয়ে পাশ করি! সেদিন বাবাই হয়তো সব থেকে খুশি হয়ে ছিলেন,তখন মিষ্টি বিতরন হতো গ্রামে।

তবে আমি এতটা ভালো রেজাল্ট করবো ধারনা করি নাই তার পর বাবা তার কথা রাখেন আমাকে ৫৩০০/- টাকা দেন তার পুর বেতন আমি দৌরে গিয়ে ফোন কিনে আনলাম , এই দিকে আমাদের সংসার চলে টেনে টুনে সেই মাসটা বাবা কে কি কষ্ট করতে হইছে এখন নিজে বাবা হয়ে বুঝি! , যদি একমাস বেতন বন্ধ থাকে বাবার মুখে অন্ধকার নেমে আসতো! মাঝে মাঝে আম্মাকে বলতো, রাবেয়া যা বেতন পাই পানাধার দোকানদার এদের বিল দিয়ে বাড়ি আসতে আসতে শেষ হয়ে যায়! আমি চট্টগ্রামে ঘুরতে গিয়ে আবার ভর্তি হয়ে যাই ডিপ্লোমা করার জন্য, কিন্তু আমার মত এমন ক্যান্সার মার্কা ছাত্রের জন্য ডিপ্লোমা না! তার পর ও খালাতো ভাই ভর্তি করায় দিলো, বাবার দিন তখন আরো কষ্টে যায় বড় ভাই বি,কম শেষ করলো কোন চাকরি নাই, আমার মাস গেলে ৩হাজার লাগে, বাবা আর টিফিন করতে পারে না।

এক সময় রেলওয়ে একটা সার্কুলার হয় আবেদন করি অষ্ঠম শ্রেণী পাশের সার্টিফিকেট তুলে! তখন সার্টিফিকেট উঠানো যেতো পরীক্ষা দিতে হতো না, কারন আমার এস এস সিতে চাকরির বয়স হয় নাই, সেই চাকরির জন্য আমাদের জমি বন্ধক রাখতে হয়! বাট চাকরি হয় না সুরঞ্জিত ধরা খায়, আমাদের টাকাও মাইর যায়! বাবা নিজের জমি কে সন্তানের মত দেখতো, তখন বাবা ভেঙ্গে পড়েন, তার শেষ স্বপ্ন ছিল নিজের অবসরের টাকা দিয়ে পবিত্র হজ্জ করবেন, পাসপোর্ট সব কিছুই রেডি!

মেডিক্যালে বাবার রিপোর্ট আসে তার ক্যান্সার বেশি দিন বাঁচবে না! আমার বাবা খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন, কোন দিন বাবা কে নামাজ কাজা করতে দেখি নাই! হাটুর উপর কাপর দেখি নাই, ছোট বড় সবাই কে আপনি বলে ডাকতেন! বাবা কে বলতে পারি না বাবার যে আর হজ্জে যাওয়া হবে না! আমি ডিপ্লোমা শেষ করে তখন মাত্র জব করি ৭মাস, বাবা কে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করলাম কাজ হলো না, বাবা বুঝে ফেলছেন উনার বড় সমস্যা!

আমরা চিন্তা করলাম যে বাবা সারা জীবন এত কিছু করে গেছেন আমাদের জন্য, বাড়ি ঘর জমি বিক্রি করে বাবা কে ইন্ডিয়া নিয়ে যাবো! বাবা কে বললাম উনি আমাদের কথা চিন্তা করেই আর রাজি হলো না! যে টাকা যাবে সংসার জমি সব কিছু হারতে হবে সন্তান কেমনে চলবে! বাঁচলে দেশেই বাঁচবো। আর সব থেকে বড় টেনশনের নাম ছিলাম আমি, সবাই বাবা কে বলতো! আপনার এই ছেলে ভাত পাবে না, না খেয়ে মরবে! আমি তখন ৮০০০/- টাকা বেতনে জব করি, যা আমার বাবার সর্বশেষ স্কেল থেকে বেশি! বাবা ছিলেন ইন্টার পাশ শিক্ষক, তাই সে বেতন বেশি পেতো না।

তখন আমার জব পার্মানেন্ট হয় , আর আমি জব ও স্থায়িকরন পরীক্ষায় ফেল করেও, আমার কাজ হয়ে যায়, আমার প্রতিষ্ঠানের কাছে আমি ঋনী কিছু স্যার আমার সরলতা কে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসতো।

তার জন্যই হয়তো সেদিন আমি বাবা কে বলতে পারছিলাম আমার জবটা স্থায়িকরন হইছে! এক সাথে প্রতিষ্ঠান আমাকে ৩০হাজার বকেয়া টাকা দেয়! যা আমার কাছে এখন ৩০কোটির সমান, আমি তখন বাড়িতে একটা ফ্রিজ কিনে দেই, গ্যাসের চুলা! যা দেখে বাবা অবাক হয়ে যায়, আমাদের ঘরে ফ্রিজ! আবার গ্যাসের চুলা!

সেদিন বাবা আমাকে জড়িয়ে কান্না করছিল খুব, তর জন্য কত কথা শুনছি মানুষের আজ তুই কত বড় চাকরি করস, আমার চাইতে বেতন বেশি পাশ! আমি তোদের জন্য কিছু করতে পারি নাই,

কত কষ্ট করছি। প্রাণ উজাড় করে দোয়া করছেন,
তার পর বাবা তেমন কিছুই খেতে পারতেন না! জবে যখন আসতাম তখন বলছিল, যদি আমি মারা যাই, ছুটি না দিলে জব ছেড়ে দিয়ে আসবি না। জবটা খুব দরকারি! কত দূরে থাকস আমি কি শেষ সময় তোকে পাবো?

এই ভাবে বাবার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে উনি শুধু একটা নাম্বারেই ফোন করতেন সেটা ছিলাম আমি! আর মাঝে মাঝে বিশ টাকা চাইতেন, ফোনে, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাই আর বাবা ঈদের দিন আমার হাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন! তার শেষ স্বপ্ন আমার হাতেই হয় তার চির বিদায়!

এখন আমি যা করি যা পাই মানুষের এত ভালোবাসা সেটা বাবা দেখলেই সব থেকে খুশি হোতেন, আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছুই নাই। আমার সব কিছুই ছিল বাবা কে কেন্দ্র করে! তাকে নিয়ে বলতে গেলে শেষ হবে না।

বানান ভুলের জন্য লেখিনা, সুন্দর করে গুছিয়ে লেখতে পারি না,

বিশ্বাস করেন আমি আর লেখতে পাচ্ছি না, চোখ ভিজে যাচ্ছে।

নোট: ছবি নিয়ে কেউ কিছু বলতে আসবেন না,
ছবিটা কে তুলছে আমি জানি না, তখন বাবা অসুস্থ ছিলেন, এই ছবি আমার সন্তান বড় হলে দেখবে। তার দাদা ।লেখাঃ ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

দৈনিক বরিশাল ২৪

বাবার সততা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো

রবিবার, জুন ১৯, ২০২২ ৮:৫০ অপরাহ্ণ

সোলাইমান শেখঃ আমার বাবা আব্দুল কদ্দুছ মাষ্টার (মাষ্টার সাহেব) শিমলা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন।দীর্ঘ ৪৩ বছর পাঠদান করেছেন, উনার চাকরির শুরুতে বেতন ছিল ৬৫ টাকা আব্বার কাছে শুনছি এবং উনি ১৩বছর পায়ে হেটে পাঠদান করছেন।

বাড়ি থেকে স্কুলের দূরুত্ব ৬কিঃ যাওয়া আসা ১২ কিঃ রাস্তা! বাবা বিয়ে করেন বয়স্ক অবস্থায় সবার বড় সন্তান ছিলেন তিনি, ভাই বোনদের দায়িত্ব ছিল তার উপর ১০ জন ভাই বোন ছিল তারা, উনি ৭জনের বিবাহর কাজ শেষ করে বিয়ে করেন,তখন আম্মার বয়স ছিল ১৩ বছর, তার পর আমার নানা একটা সাইকেল কিনে দেন তাকে! সেই সাইকেলে করে আমার বড় ভাই বাবার স্কুলের সহযাত্রী হন, আমাদের চরম অভাবের সংসার ছিল, সেটা আমরা কাছে থেকে দেখছি কিন্তু বাবা তা অনুভব করতে দেয় নাই, যখন বাবার ক্যান্সার হয় তখন একদিন রাতে বাবা, একটু করে বলছিল, সে কোন দিন স্কুলে টিফিন করে নাই, বাবার কোন বন্ধু ছিল না, কারন বন্ধুরা যদি একদিন খাওয়ায় ২য় দিন তাদের খাওয়াতে হবে! সেই ক্ষমতা তার ছিল না, তাই সবার থেকে দূরে দূরেই থাকতেন।

অথচ তার বড় সন্তান তার স্কুলে পড়তো, সে কোন দিন টিফিন না খেয়ে থাকতো না, তার পর আমার পালা, আমি ছিলাম একটা লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটেছি, জীবনে সব থেকে অপছন্দ বিষয় ছিল পড়া লেখা, আমার বাবা ম্যাথ আর বিজ্ঞান পড়াতো, আমাদের বাড়িতে ভোর বেলায় দূরে থেকে ছাত্র/ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে আসতো, আর বাবা আমাকে বলতো তুই আমার কাছে পড় মাস শেষ হলে সবাই ১৫০টাকা দেয় আমি তোকে ২০০টাকা করে দিবো! কিন্তু আমি ভুলেও বাবার কাছে বই নিয়ে বসতাম না।
আর আমি একটু ভেজাইলা চালাক ছিলাম বাবা অনুরোধ করলো তার স্কুলে আমাকে ভর্তি হতে! আমি চিন্তা করলাম যে পরিমান স্কুল ফাঁকি দেই! যদি বাবার স্কুলে যাই, আমি তো আর ফাঁকি দিতে পারবো না, শুধু তার স্কুল বাদে প্রায় সব স্কুল মাদ্রাসা আমার দেখা শেষ! যখন অষ্টম শ্রেণীতে উঠলাম তখন রোল ছিল ১৯ ছাত্র হিসাবে ছিলাম সব সময় পিছের ব্রেঞ্চে পড়া লেখা মোটেও করতাম না! মাদ্রাসার নাম বলে সারা দিন ঘুরে বেড়াইতাম ছুটি দিলে বাড়ি ফিরতাম! এর পর ধরা পড়ে গেলাম, যে আমি মাদ্রাসায় যাই না! বাবা তখন ঐ প্রতিষ্ঠানের মেনেজিং কমোটির মেম্বার, তারা বিচার দিলো আপনার ছেলে আসে না তো?

এটা শুনে আমি মাদ্রাসায় উপস্থিত হই! আর মনে হলো স্যাররা আমার জন্যই অপেক্ষা করছে! প্রচন্ড ভাবে তারা আমাকে সেদিন প্রহার করে অনুপস্থিত থাকার জন্য, আমি বাড়ি এসে বলে দেই আর পড়বো না আমি! তার পর আম্মা প্রচন্ড মার মারছিল সেদিন! তখন বাবা আমাকে একটা চিঠি লিখে দিছিল, যে যখন স্যার মারতে আসবে এটা তার হাতে দিবি! বাবা সেখানে লেখছিল, আমার সন্তান যদি কোন পড়া না পারে তাকে দয়া করে বেতের আঘাত করবেন না, আমি চাই ও নিয়মিত হোক, ভয়ে যেনো ও মাদ্রাসা বন্ধ না করে!

আপনাদের প্রতি অনুরোধ। তখন বাচ্চু হুজুর মারতো সব থেকে বেশি! নামাজের জন্য ৫টা করে বেতের আঘাত! পড়া তো আছেই, তার পর সেই চিঠি সব বন্ধুদের মাঝে হুজুর জোরে জোরে পড়ে আর, সব বন্ধুরা হাসে! বাট হুজুররা আর আমাকে মারে নাই!

তার পর সবাই বললো আপনার ছেলে তো এই ভাবে পড়লে পাশ করতে পারবে না! তার পর আমি বাগাছরা মাদ্রাসায় ভর্তি হই! সেখানে নজরুল মামা ইংরেজি পড়াতো সেখানে গিয়ে তার সাথে পরিচয়, সেও আমার বাবা কে খুব সম্মান করতো।

সেও মারমুখি টিচার ছিলেন, উনি আছেন আমার লিষ্টে, হয়তো দেখলে হাসবেন! আমি সেখানেও,বেশি দিন থাকতে পারি নাই! তার পর চলে আসি নানার বাড়ি সেখানে একটা মাদ্রাসায় ভর্তি হই, বাবা আমার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন, যদি আমি একবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারি সে তার পুর মাসের বেতন আমাকে দিয়ে দিবে! এই ভাবে স্কুল মাদ্রাসা পরিবর্তন করতে করতে ১বছর গ্যাপ। তার পর আমি বাবার সেই বেতনের আশায়! পড়ায় মন দেই, আর আমি ৪,১৯ GPA পেয়ে পাশ করি! সেদিন বাবাই হয়তো সব থেকে খুশি হয়ে ছিলেন,তখন মিষ্টি বিতরন হতো গ্রামে।

তবে আমি এতটা ভালো রেজাল্ট করবো ধারনা করি নাই তার পর বাবা তার কথা রাখেন আমাকে ৫৩০০/- টাকা দেন তার পুর বেতন আমি দৌরে গিয়ে ফোন কিনে আনলাম , এই দিকে আমাদের সংসার চলে টেনে টুনে সেই মাসটা বাবা কে কি কষ্ট করতে হইছে এখন নিজে বাবা হয়ে বুঝি! , যদি একমাস বেতন বন্ধ থাকে বাবার মুখে অন্ধকার নেমে আসতো! মাঝে মাঝে আম্মাকে বলতো, রাবেয়া যা বেতন পাই পানাধার দোকানদার এদের বিল দিয়ে বাড়ি আসতে আসতে শেষ হয়ে যায়! আমি চট্টগ্রামে ঘুরতে গিয়ে আবার ভর্তি হয়ে যাই ডিপ্লোমা করার জন্য, কিন্তু আমার মত এমন ক্যান্সার মার্কা ছাত্রের জন্য ডিপ্লোমা না! তার পর ও খালাতো ভাই ভর্তি করায় দিলো, বাবার দিন তখন আরো কষ্টে যায় বড় ভাই বি,কম শেষ করলো কোন চাকরি নাই, আমার মাস গেলে ৩হাজার লাগে, বাবা আর টিফিন করতে পারে না।

এক সময় রেলওয়ে একটা সার্কুলার হয় আবেদন করি অষ্ঠম শ্রেণী পাশের সার্টিফিকেট তুলে! তখন সার্টিফিকেট উঠানো যেতো পরীক্ষা দিতে হতো না, কারন আমার এস এস সিতে চাকরির বয়স হয় নাই, সেই চাকরির জন্য আমাদের জমি বন্ধক রাখতে হয়! বাট চাকরি হয় না সুরঞ্জিত ধরা খায়, আমাদের টাকাও মাইর যায়! বাবা নিজের জমি কে সন্তানের মত দেখতো, তখন বাবা ভেঙ্গে পড়েন, তার শেষ স্বপ্ন ছিল নিজের অবসরের টাকা দিয়ে পবিত্র হজ্জ করবেন, পাসপোর্ট সব কিছুই রেডি!

মেডিক্যালে বাবার রিপোর্ট আসে তার ক্যান্সার বেশি দিন বাঁচবে না! আমার বাবা খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন, কোন দিন বাবা কে নামাজ কাজা করতে দেখি নাই! হাটুর উপর কাপর দেখি নাই, ছোট বড় সবাই কে আপনি বলে ডাকতেন! বাবা কে বলতে পারি না বাবার যে আর হজ্জে যাওয়া হবে না! আমি ডিপ্লোমা শেষ করে তখন মাত্র জব করি ৭মাস, বাবা কে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করলাম কাজ হলো না, বাবা বুঝে ফেলছেন উনার বড় সমস্যা!

আমরা চিন্তা করলাম যে বাবা সারা জীবন এত কিছু করে গেছেন আমাদের জন্য, বাড়ি ঘর জমি বিক্রি করে বাবা কে ইন্ডিয়া নিয়ে যাবো! বাবা কে বললাম উনি আমাদের কথা চিন্তা করেই আর রাজি হলো না! যে টাকা যাবে সংসার জমি সব কিছু হারতে হবে সন্তান কেমনে চলবে! বাঁচলে দেশেই বাঁচবো। আর সব থেকে বড় টেনশনের নাম ছিলাম আমি, সবাই বাবা কে বলতো! আপনার এই ছেলে ভাত পাবে না, না খেয়ে মরবে! আমি তখন ৮০০০/- টাকা বেতনে জব করি, যা আমার বাবার সর্বশেষ স্কেল থেকে বেশি! বাবা ছিলেন ইন্টার পাশ শিক্ষক, তাই সে বেতন বেশি পেতো না।

তখন আমার জব পার্মানেন্ট হয় , আর আমি জব ও স্থায়িকরন পরীক্ষায় ফেল করেও, আমার কাজ হয়ে যায়, আমার প্রতিষ্ঠানের কাছে আমি ঋনী কিছু স্যার আমার সরলতা কে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসতো।

তার জন্যই হয়তো সেদিন আমি বাবা কে বলতে পারছিলাম আমার জবটা স্থায়িকরন হইছে! এক সাথে প্রতিষ্ঠান আমাকে ৩০হাজার বকেয়া টাকা দেয়! যা আমার কাছে এখন ৩০কোটির সমান, আমি তখন বাড়িতে একটা ফ্রিজ কিনে দেই, গ্যাসের চুলা! যা দেখে বাবা অবাক হয়ে যায়, আমাদের ঘরে ফ্রিজ! আবার গ্যাসের চুলা!

সেদিন বাবা আমাকে জড়িয়ে কান্না করছিল খুব, তর জন্য কত কথা শুনছি মানুষের আজ তুই কত বড় চাকরি করস, আমার চাইতে বেতন বেশি পাশ! আমি তোদের জন্য কিছু করতে পারি নাই,

কত কষ্ট করছি। প্রাণ উজাড় করে দোয়া করছেন,
তার পর বাবা তেমন কিছুই খেতে পারতেন না! জবে যখন আসতাম তখন বলছিল, যদি আমি মারা যাই, ছুটি না দিলে জব ছেড়ে দিয়ে আসবি না। জবটা খুব দরকারি! কত দূরে থাকস আমি কি শেষ সময় তোকে পাবো?

এই ভাবে বাবার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে উনি শুধু একটা নাম্বারেই ফোন করতেন সেটা ছিলাম আমি! আর মাঝে মাঝে বিশ টাকা চাইতেন, ফোনে, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাই আর বাবা ঈদের দিন আমার হাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন! তার শেষ স্বপ্ন আমার হাতেই হয় তার চির বিদায়!

এখন আমি যা করি যা পাই মানুষের এত ভালোবাসা সেটা বাবা দেখলেই সব থেকে খুশি হোতেন, আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছুই নাই। আমার সব কিছুই ছিল বাবা কে কেন্দ্র করে! তাকে নিয়ে বলতে গেলে শেষ হবে না।

বানান ভুলের জন্য লেখিনা, সুন্দর করে গুছিয়ে লেখতে পারি না,

বিশ্বাস করেন আমি আর লেখতে পাচ্ছি না, চোখ ভিজে যাচ্ছে।

নোট: ছবি নিয়ে কেউ কিছু বলতে আসবেন না,
ছবিটা কে তুলছে আমি জানি না, তখন বাবা অসুস্থ ছিলেন, এই ছবি আমার সন্তান বড় হলে দেখবে। তার দাদা ।লেখাঃ ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

প্রকাশক: মোসাম্মাৎ মনোয়ারা বেগম। সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: ইঞ্জিনিয়ার জিহাদ রানা। সম্পাদক : শামিম আহমেদ যুগ্ন-সম্পাদক : মো:মনিরুজ্জামান। প্রধান উপদেষ্টা: মোসাম্মৎ তাহমিনা খান বার্তা সম্পাদক : মো: শহিদুল ইসলাম ।
প্রধান কার্যালয় : রশিদ প্লাজা,৪র্থ তলা,সদর রোড,বরিশাল।
সম্পাদক: 01711970223 বার্তা বিভাগ: 01764- 631157
ইমেল: sohelahamed2447@gmail.com
  কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে বরিশাল, ৭ জনের প্রাণহানি   ইপিজেড শিল্পাঞ্চলের আয়োজন, শতাধিক পরিবারে ঈদ সামগ্রী বিতরণ   কমতে পারে ছুটি, শনিবারও স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত   লাইমলাইট গ্রামার স্কুলে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন   ঈশ্বরদীতে ২ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ   আমেরিকায় জাহাজের ধাক্কায় ধসে পড়ল সেতু, বহু হতাহতের শঙ্কা   ইপিজেড স্মার্ট শিল্পাঞ্চল, চট্টগ্রাম এর স্বাধীনতা দিবসের আলোচানা সভা অনুষ্ঠিত   হালিশহর মডেল স্কুলে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, চোখের সামনে অঙ্গার হলো তরতাজা প্রাণ   বরিশাল বিভাগীয় সমিতি, চট্টগ্রাম-এর উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত   অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে বরিশাল বিভাগীয় সমিতিঃ জাকির হোসেন   হালিশহর মডেল স্কুলের নতুন সভাপতি মোহাম্মাদ হোসেন, আশরাফ আলী সম্পাদক নির্বাচিত   বরিশাল প্রেসক্লাব সভাপতির মৃত্যুতে বরিশাল বিভাগীয় সমিতি, চট্টগ্রাম এর শোক প্রকাশ   কাজী বাবুল আর নেই, শোকে স্তব্ধ বরিশালের মিডিয়া অঙ্গন   জীবনকে বদলে দেওয়া এক গুণী মানুষকে যেভাবে হাড়িয়ে ফেললাম   যুগান্তর পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো রিপোর্টার হলেন সাংবাদিক এস এন পলাশ   কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে বরিশাল বিভাগীয় সমিতি‘র (ইপিজেড শিল্পাঞ্চল) এর প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত   বরিশালের মামুনের সফলতা হতে পারে অনেকের অনুপ্রেরণাঃ তাপস   ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার বার্ষিক শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত   নিউমুরিং এর মরহুম আবদুস সবুর সওঃ এবাদত খানার সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত