গ্রাম নয় যেন স্বর্গের টুকরা!
অনলাইন নিউজঃ দেশে ছেড়ে এখন মানুষ বিদেশে ঘুরতে যেতে বেশি পছন্দ করেন। বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে সুপরিচিত জায়গার বদলে ঘুরে আসতে পারেন ভিয়েতনামের মাই ছাউ থেকে। সবুজে ঘেরা পাহাড়, ধাপ কাটা সুদৃশ্য চা-বাগান, সোনালি ধানের খেত একবার দেখলে চোখের পাশাপাশি মনও জুড়িয়ে যাবে, নিশ্চিত।
কখন যাবেন
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় থেকে মাই ছাউ যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। মে-জুন মাস এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস হল মাই ছাউ ঘোরার আদর্শ সময়। এই সময়ই ধান পাকে, আর তাই যেদিকেই চোখ যাবে, সোনালি-হলুদ রং চোখ ধাঁধিয়ে দেবে।
কী দেখবেন
মাই ছাউয়ের প্রধান পর্যটনস্থল হলো লাক গ্রাম। সেখান থেকে চলে যেতে পারেন থুঙ খে পাসে। এই জায়গাটিকে দা ট্রাং মাউন্টেন পাসও বলা হয়। দা ট্রাং শব্দের অর্থ সাদা পাথর। সাদা চুনাপাথর দিয়ে তৈরি পাহাড়ে ঘেরা বলেই এমন নামকরণ। দূর থেকে থুঙ খে পাসের রূপ দেখলে হাঁ হয়ে যেতে হয়। মনে হয়, পুরো এলাকাটি অবিকল যেন তুষারে ঢাকা।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ মিটার উচ্চতায় থুঙ খে পাসের উপর থেকে পুরো উপত্যকাটি দেখা যায়। সবুজ পাহাড়, ধান খেতে ঢাকা ছোট ছোট বাড়ি, সবটাই দেখা যায় পাখির চোখে। ছোট্ট একটি বাজারও রয়েছে এই এলাকায়, যেখানে বিভিন্ন রকম স্থানীয় খাবার চেখে দেখার সুযোগ মিলবে।
স্থানীয়দের জীবনযাপন আরও কাছ থেকে দেখতে চাইলে চলে যেতে হবে হাং কিয়া এবং পা কো-তে। হোয়া বিন প্রদেশে এই দুটি মাত্র গ্রামেই হমং প্রজাতির মানুষের বাস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় এই গ্রামগুলো সারা বছরই পেঁজা তুলোর মতো মেঘে ঢাকা থাকে। দেখলে মনে হবে, যেন মেঘেদেরই স্বর্গরাজ্য সেগুলো। বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে তৈরি বেশ কিছু ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে সেখানে, যেগুলোতে উঠলে মেঘের সমুদ্রে ভেসে বেড়ানোর অনুভূতি মিলবে।
পা কো-তে রয়েছে একটি বাজার, যেখানে স্থানীয়দের তৈরি পোশাকের সম্ভার চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। ব্রোকেডের পোশাক ছাড়াও পাওয়া যাবে হমং, থাই এবং মুয়ং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জামাকাপড়। উল্লেখ্য, এই বাজারটি বসে শুধুমাত্র রবিবার, তাও ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত।
লাক গ্রামে এমন অজস্র দোকান রয়েছে যেখানে সংখ্যালঘু থাই সম্প্রদায়ের মানুষজনকে পোশাক তৈরি করতে দেখারও সুযোগ মিলবে। হোয়া বান নামে একটি দোকান রয়েছে যেখানে থাই মহিলারা পোশাক বোনার প্রশিক্ষণও দেন।
জঙ্গল এবং পাহাড়ে ঘেরা হোয়া বিন লেকে কায়াকিংয়েরও সুযোগ রয়েছে। একটা গোটা দিন প্রকৃতির কোলে শুধু এভাবেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। এছাড়া ঘুরে আসতে পারেন পু লুয়ং নেচার রিজার্ভ থেকে। সেখানে শীতল জলের ঝর্নায় গোসল করলে শরীর, মন দুইই মুহূর্তে চনমনে হয়ে উঠবে।
কোথায় থাকবেন
মাই ছাউতে থাকার জায়গার অভাব নেই। লাক এবং পম কুং গ্রামে একাধিক হোমস্টে রয়েছে, যেখানে স্থানীয় থাই, হমং এবং ডাও পরিবারগুলোর আতিথেয়তায় মন ভরে যাবে। এছাড়া একাধিক বিলাসবহুল রিসর্টও রয়েছে। রয়েছে বাজেট ফ্রেন্ডলি থেকে শুরু করে একাধিক হাই-এন্ড বাংলোও, যেগুলো থেকে ধানক্ষেত, চুনাপাথরের পাহাড় এবং ঘন সবুজ জঙ্গলের ভিউ পাওয়া যাবে। এছাড়া বাজেট কম থাকলে শেয়ার-হোস্টেলও রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এসে থাকেন।
কীভাবে ঘুরবেন
মাই ছাউতে ঘোরার সেরা বাহন হল সাইকেল। জমির আলপথ বেয়ে প্যাডেলে চাপ দিয়ে চলতে শুরু করলে বাংলার গ্রামে থাকার অনুভূতি পাওয়া যাবে। সাইকেল ভাড়া পাবেন হোমস্টে কিংবা হোটেল থেকেই। একা ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যাওয়ার উপায় নেই, ঠিকই পথ বলে দেবে কেউ না কেউ। তাছাড়া চাইলে গাইডও পাওয়া যাবে, যিনি সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতেই পরিচয় করিয়ে দেবেন স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে। এছাড়া স্থানীয় ই-রিকশাও রয়েছে যেগুলোতে চড়ে অল্প সময়ে এবং অল্প খরচে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়া যায়।
কী খাবেন
মাই ছাউতে গেলে স্থানীয় খাবার কম লাম চেখে দেখতে ভুলবেন না। এটি আর কিছুই নয়, ফাঁপা বাঁশে সিদ্ধ করা চটচটে ভাত, সঙ্গে থাকে অন্য উপকরণও। এছাড়া গ্রিল্ড চিকেন, স্টার ফ্রায়েড সবজি, পর্ক স্কিউয়ার্সও খেয়ে দেখা যেতেই পারে। স্থানীয় খাবার আরও বেশি চেখে দেখতে চাইলে অবশ্যই খাবেন স্টাফড এবং ফ্রায়েড সিকাডা। এছাড়া বন্য মৌমাছি এবং গ্যাঁজানো নরম বাঁশও স্বাদে অতুলনীয়। তবে এই দৃষ্টি চেখে দেখতে গেলে গ্রীষ্মকালে যেতে হবে মাই ছাউতে। জুলাই মাসের শেষে ভাঙা হয় মৌচাক। তারপর বুড়ো মৌমাছিদের বের করে এনে ভিজিয়ে রাখা হয় ওয়াইনে। আর তরুণ মৌমাছিদের নরম বাঁশের সঙ্গে ভাজা হয় ছাঁকা তেলে।
কীভাবে যাবেন
রাজধানী হ্যানয় থেকে মাই ছাউয়ের দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। হ্যানয় থেকে একাধিক বাস রয়েছে সেখানে যাওয়ার জন্য। সন লা কিংবা দিয়েন বিয়েন প্রদেশ থেকে এলে মাই ছাউ মোড়ে নেমে যেতে হবে।
সূত্র: দ্য ওয়াল