আশা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে - দৈনিক বরিশাল ২৪ দৈনিক বরিশাল ২৪আশা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে - দৈনিক বরিশাল ২৪

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ১৯, ২০২০ ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ
A- A A+ Print

আশা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে

কাজী আবুল মনসুর:

সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ-পরিকল্পনা বাতিল হওয়ার পর মাতারবাড়ীতে তা নির্মাণ করার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে সরকার। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সোনাদিয়ায় ৪২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান এবং সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দরটি আদৌ কাজে লাগবে কি না সে নিয়ে টানাহেঁচড়া চলে দীর্ঘদিন। শেষ পর্যন্ত সরকার সোনাদিয়ার অদূরে মাতারবাড়ী এলাকায় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। জাপান এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। জাপানের কাশিমা সমুদ্রবন্দরের আদলে এটি নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ জানান, এ প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ এখানে জাহাজ ভেড়ার আশা রয়েছে। ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। বাকি অর্থের মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জোগান দেবে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে জাপানি কনসালট্যান্ট ‘নিপ্পন কোয়ে’।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে জাপানের অনারারি কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান ‘নিপ্পন কোয়ে’ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পুরোনো কোম্পানি। আর জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে অনেক বড় বড় প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে ‘গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেল’ করার পরিকল্পনা ছিল জাপানের। জাপান অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে যেকোনো সহযোগিতা দিতে সব সময় রাজি আছে।

যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দর সুবিধাজনক স্থানে এবং আবহাওয়াও অনুকূলে। তাই জাপান চেয়েছিল এখানে এমন কিছু করার, যাতে ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্য, নেপাল এমনকি শ্রীলঙ্কাও সুবিধা পায়। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জাপান অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টিও দেখবে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট তরফদার রুহুল আমিন এ ব্যাপারে জানান, ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী করার জন্য চট্টগ্রাম চেম্বার বহু আগে থেকে চেষ্টা করে আসছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর চেম্বারের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। তারাও চায় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসার উন্নতি করতে। এসব অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর সবচেয়ে বেশি কাছে। তারা ইউরোপ ও আমেরিকাকেন্দ্রিক ব্যবসার জন্য এ বন্দর ব্যবহারের জন্য অনেক আগে থেকে আগ্রহী। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে এ সমস্যার সমাধান বহুলাংশে হয়ে যাবে। এতে তাদের ব্যবসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর ধরে চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। বিএনপি সরকারের আমলে নেওয়া প্রকল্পের শুরুতেই বিতর্ক উঠে কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান নিয়ে। প্রকল্পটির ভেতরে স্বচ্ছতা ও বিপুল অর্থ ব্যয়ে এটি আদৌ বাস্তবায়ন করা যাবে কি না নানা মহলে প্রশ্ন উঠে। তৎকালীন সরকারের চাপে প্রকল্পের জন্য বন্দর থেকেও ১২ কোটি টাকা গচ্চা যায়। চীনের সাহায্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পে অর্থ প্রদানের বিষয়ে পিছুহটে। কারণ উচ্চাভিলাষী এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট ছিল অনেকটা নেতিবাচক। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমদিকে আগ্রহ দেখালেও পরে বুঝতে পারে এ প্রকল্পের পেছনে অর্থ ব্যয় ঝুঁকির মুখে পড়বে। সরকার ২০১২ সালের ২ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন’-এর খসড়ারও নীতিগত অনুমোদন দেয়। পরে দেখা যায়, প্রকল্পটি দেশের জন্য বোঝা হয়ে যাবে। এ অবস্থায় গত বছর মন্ত্রিসভার বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি বাতিল করা হয়। ওই বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, সোনাদিয়ার কাছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ চলছে। পাশাপাশি দুটি বন্দর হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাছাড়া সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দর হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সামুদ্রিক মৎস্য ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য ক্ষুণ হবে। এটা যখন স্টাডিতে ধরা পড়ল, তখন সরকার সিদ্ধান্ত নিল সোনাদিয়ায় প্রকৃতির ক্ষতি করে সমুদ্রবন্দর করার দরকার নেই। মাতারবাড়ী আরো বেশি উপযুক্ত।

পরে সরকার বিকল্প হিসেবে জাপানের কাছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দিলে জাপান এগিয়ে আসে। তারা এ প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলের গভীরতা ১৮ মিটার দেখে তারা আগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ ১৮ মিটার গভীরতায় সহজে বড় জাহাজ নোঙর করতে পারে; যা শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং সিঙ্গাপুর বন্দরের সমকক্ষ। বার্থ-টার্মিনালে ১৬ মিটার ড্রাফটেরও বেশি এবং ৮ থেকে ১০ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফিডার ও লাইটার জাহাজযোগে দেশের অন্যান্য বন্দরে কনটেইনার ও খোলা পণ্য পরিবহন করা যাবে। জাপানের ‘কাশিমা’ এ ধরনের একটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে; যার গভীরতাও ১৭ থেকে ১৮ মিটার।

২০১৪ সালে সরকার মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজও হাতে নিয়েছিল। যার জন্য ব্যয় ধরা হয় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। জাপানের অর্থায়নে এ প্রকল্পে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দিচ্ছে। মূলত এ প্রকল্পের পর জাপানি প্রতিষ্ঠান জাইকার বিশেষজ্ঞরা দেখেন, মাতারবাড়ী এলাকাটি বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উপযোগী। বিষয়টি নিয়ে দুই সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনার পর গত বছরের ১০ মার্চ মাতারবাড়ীতে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। এ প্রকল্পে সংযোগ সড়কসহ গভীর সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।

বন্দরের সদস্য মো. জাফর আলম প্রকল্পটির ব্যাপারে বলেন, ‘আনুমানিক ৮-১০ হাজার কনটেইনার-সমৃদ্ধ জাহাজ এখানে আসতে পারবে। আমাদের প্রচুর কনটেইনার পরিবহনের চাহিদা বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার লক্ষ্যে ডিজাইন করা হচ্ছে। পরে জেটি বাড়লে সক্ষমতা আরো বাড়বে। ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। প্রায় ৪৬০ মিটার লম্বা জেটি করা হচ্ছে। নদী, সড়ক ও রেলপথ যুক্ত করা হবে। বড় জাহাজে কনটেইনার এলে খরচ কমে যাবে, ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হবেন।’

২০২৬ সালের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ শুরু হয়ে যাবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, একটি বন্দরের অধীনে অনেক টার্মিনাল বন্দর থাকতে পারে। মাতারবাড়ী পোর্ট চট্টগ্রাম বন্দরের সীমার মধ্যে রয়েছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘিরে যে মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেদিকে লক্ষ রেখেই বন্দরের জলসীমা বাড়ানো হয়েছে। ফলে বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে বন্দরের সেবার পরিধি। কৌশলগত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩৬ সালে ৫.৬ মিলিয়ন টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের চাপ সামাল দিতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার পণ্য নিয়ে জাহাজ সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরে যায়। এখান থেকে পণ্যভর্তি কনটেইনারগুলো মাদার ভেসেলে (বড় আকৃতির জাহাজ) বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে পাঠানো হয়। এতে সময়ও ব্যয় অনেকাংশে বেড়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ৮০০ থেকে ১০০০ কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে। বন্দরের জেটিতে গভীরতা ৭ থেকে ৮ মিটার হওয়ায় এর চেয়ে বড় জাহাজ এখানে ঢোকানো সম্ভব নয়। তাই চট্টগ্রাম বন্দরকে নির্ভর করতে হয় কনটেইনার জাহাজের ওপর। এ অবস্থায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে যে পণ্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কা হয়ে ইউরোপ, আমেরিকায় যাচ্ছে; সেগুলো সরাসরি যেতে পারবে।

লেখক: কাজী আবুল মনসুর, সিনিয়র সাংবাদিক, চট্টগ্রাম।

দৈনিক বরিশাল ২৪

আশা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৯, ২০২০ ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

কাজী আবুল মনসুর:

সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ-পরিকল্পনা বাতিল হওয়ার পর মাতারবাড়ীতে তা নির্মাণ করার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে সরকার। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সোনাদিয়ায় ৪২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান এবং সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দরটি আদৌ কাজে লাগবে কি না সে নিয়ে টানাহেঁচড়া চলে দীর্ঘদিন। শেষ পর্যন্ত সরকার সোনাদিয়ার অদূরে মাতারবাড়ী এলাকায় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। জাপান এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। জাপানের কাশিমা সমুদ্রবন্দরের আদলে এটি নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ জানান, এ প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ এখানে জাহাজ ভেড়ার আশা রয়েছে। ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। বাকি অর্থের মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জোগান দেবে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে জাপানি কনসালট্যান্ট ‘নিপ্পন কোয়ে’।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে জাপানের অনারারি কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান ‘নিপ্পন কোয়ে’ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পুরোনো কোম্পানি। আর জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে অনেক বড় বড় প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে ‘গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেল’ করার পরিকল্পনা ছিল জাপানের। জাপান অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে যেকোনো সহযোগিতা দিতে সব সময় রাজি আছে।

যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দর সুবিধাজনক স্থানে এবং আবহাওয়াও অনুকূলে। তাই জাপান চেয়েছিল এখানে এমন কিছু করার, যাতে ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্য, নেপাল এমনকি শ্রীলঙ্কাও সুবিধা পায়। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জাপান অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টিও দেখবে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট তরফদার রুহুল আমিন এ ব্যাপারে জানান, ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী করার জন্য চট্টগ্রাম চেম্বার বহু আগে থেকে চেষ্টা করে আসছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর চেম্বারের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। তারাও চায় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসার উন্নতি করতে। এসব অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর সবচেয়ে বেশি কাছে। তারা ইউরোপ ও আমেরিকাকেন্দ্রিক ব্যবসার জন্য এ বন্দর ব্যবহারের জন্য অনেক আগে থেকে আগ্রহী। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে এ সমস্যার সমাধান বহুলাংশে হয়ে যাবে। এতে তাদের ব্যবসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর ধরে চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। বিএনপি সরকারের আমলে নেওয়া প্রকল্পের শুরুতেই বিতর্ক উঠে কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান নিয়ে। প্রকল্পটির ভেতরে স্বচ্ছতা ও বিপুল অর্থ ব্যয়ে এটি আদৌ বাস্তবায়ন করা যাবে কি না নানা মহলে প্রশ্ন উঠে। তৎকালীন সরকারের চাপে প্রকল্পের জন্য বন্দর থেকেও ১২ কোটি টাকা গচ্চা যায়। চীনের সাহায্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পে অর্থ প্রদানের বিষয়ে পিছুহটে। কারণ উচ্চাভিলাষী এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট ছিল অনেকটা নেতিবাচক। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমদিকে আগ্রহ দেখালেও পরে বুঝতে পারে এ প্রকল্পের পেছনে অর্থ ব্যয় ঝুঁকির মুখে পড়বে। সরকার ২০১২ সালের ২ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন’-এর খসড়ারও নীতিগত অনুমোদন দেয়। পরে দেখা যায়, প্রকল্পটি দেশের জন্য বোঝা হয়ে যাবে। এ অবস্থায় গত বছর মন্ত্রিসভার বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি বাতিল করা হয়। ওই বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, সোনাদিয়ার কাছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ চলছে। পাশাপাশি দুটি বন্দর হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাছাড়া সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দর হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সামুদ্রিক মৎস্য ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য ক্ষুণ হবে। এটা যখন স্টাডিতে ধরা পড়ল, তখন সরকার সিদ্ধান্ত নিল সোনাদিয়ায় প্রকৃতির ক্ষতি করে সমুদ্রবন্দর করার দরকার নেই। মাতারবাড়ী আরো বেশি উপযুক্ত।

পরে সরকার বিকল্প হিসেবে জাপানের কাছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দিলে জাপান এগিয়ে আসে। তারা এ প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলের গভীরতা ১৮ মিটার দেখে তারা আগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ ১৮ মিটার গভীরতায় সহজে বড় জাহাজ নোঙর করতে পারে; যা শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং সিঙ্গাপুর বন্দরের সমকক্ষ। বার্থ-টার্মিনালে ১৬ মিটার ড্রাফটেরও বেশি এবং ৮ থেকে ১০ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফিডার ও লাইটার জাহাজযোগে দেশের অন্যান্য বন্দরে কনটেইনার ও খোলা পণ্য পরিবহন করা যাবে। জাপানের ‘কাশিমা’ এ ধরনের একটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে; যার গভীরতাও ১৭ থেকে ১৮ মিটার।

২০১৪ সালে সরকার মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজও হাতে নিয়েছিল। যার জন্য ব্যয় ধরা হয় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। জাপানের অর্থায়নে এ প্রকল্পে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দিচ্ছে। মূলত এ প্রকল্পের পর জাপানি প্রতিষ্ঠান জাইকার বিশেষজ্ঞরা দেখেন, মাতারবাড়ী এলাকাটি বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উপযোগী। বিষয়টি নিয়ে দুই সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনার পর গত বছরের ১০ মার্চ মাতারবাড়ীতে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। এ প্রকল্পে সংযোগ সড়কসহ গভীর সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।

বন্দরের সদস্য মো. জাফর আলম প্রকল্পটির ব্যাপারে বলেন, ‘আনুমানিক ৮-১০ হাজার কনটেইনার-সমৃদ্ধ জাহাজ এখানে আসতে পারবে। আমাদের প্রচুর কনটেইনার পরিবহনের চাহিদা বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার লক্ষ্যে ডিজাইন করা হচ্ছে। পরে জেটি বাড়লে সক্ষমতা আরো বাড়বে। ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। প্রায় ৪৬০ মিটার লম্বা জেটি করা হচ্ছে। নদী, সড়ক ও রেলপথ যুক্ত করা হবে। বড় জাহাজে কনটেইনার এলে খরচ কমে যাবে, ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হবেন।’

২০২৬ সালের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ শুরু হয়ে যাবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, একটি বন্দরের অধীনে অনেক টার্মিনাল বন্দর থাকতে পারে। মাতারবাড়ী পোর্ট চট্টগ্রাম বন্দরের সীমার মধ্যে রয়েছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘিরে যে মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেদিকে লক্ষ রেখেই বন্দরের জলসীমা বাড়ানো হয়েছে। ফলে বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে বন্দরের সেবার পরিধি। কৌশলগত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩৬ সালে ৫.৬ মিলিয়ন টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের চাপ সামাল দিতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার পণ্য নিয়ে জাহাজ সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরে যায়। এখান থেকে পণ্যভর্তি কনটেইনারগুলো মাদার ভেসেলে (বড় আকৃতির জাহাজ) বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে পাঠানো হয়। এতে সময়ও ব্যয় অনেকাংশে বেড়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ৮০০ থেকে ১০০০ কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে। বন্দরের জেটিতে গভীরতা ৭ থেকে ৮ মিটার হওয়ায় এর চেয়ে বড় জাহাজ এখানে ঢোকানো সম্ভব নয়। তাই চট্টগ্রাম বন্দরকে নির্ভর করতে হয় কনটেইনার জাহাজের ওপর। এ অবস্থায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে যে পণ্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কা হয়ে ইউরোপ, আমেরিকায় যাচ্ছে; সেগুলো সরাসরি যেতে পারবে।

লেখক: কাজী আবুল মনসুর, সিনিয়র সাংবাদিক, চট্টগ্রাম।

প্রকাশক: মোসাম্মাৎ মনোয়ারা বেগম। সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: ইঞ্জিনিয়ার জিহাদ রানা। সম্পাদক : শামিম আহমেদ যুগ্ন-সম্পাদক : মো:মনিরুজ্জামান। প্রধান উপদেষ্টা: মোসাম্মৎ তাহমিনা খান বার্তা সম্পাদক : মো: শহিদুল ইসলাম ।
প্রধান কার্যালয় : রশিদ প্লাজা,৪র্থ তলা,সদর রোড,বরিশাল।
সম্পাদক: 01711970223 বার্তা বিভাগ: 01764- 631157
ইমেল: sohelahamed2447@gmail.com
  কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে বরিশাল, ৭ জনের প্রাণহানি   ইপিজেড শিল্পাঞ্চলের আয়োজন, শতাধিক পরিবারে ঈদ সামগ্রী বিতরণ   কমতে পারে ছুটি, শনিবারও স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত   লাইমলাইট গ্রামার স্কুলে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন   ঈশ্বরদীতে ২ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ   আমেরিকায় জাহাজের ধাক্কায় ধসে পড়ল সেতু, বহু হতাহতের শঙ্কা   ইপিজেড স্মার্ট শিল্পাঞ্চল, চট্টগ্রাম এর স্বাধীনতা দিবসের আলোচানা সভা অনুষ্ঠিত   হালিশহর মডেল স্কুলে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, চোখের সামনে অঙ্গার হলো তরতাজা প্রাণ   বরিশাল বিভাগীয় সমিতি, চট্টগ্রাম-এর উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত   অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে বরিশাল বিভাগীয় সমিতিঃ জাকির হোসেন   হালিশহর মডেল স্কুলের নতুন সভাপতি মোহাম্মাদ হোসেন, আশরাফ আলী সম্পাদক নির্বাচিত   বরিশাল প্রেসক্লাব সভাপতির মৃত্যুতে বরিশাল বিভাগীয় সমিতি, চট্টগ্রাম এর শোক প্রকাশ   কাজী বাবুল আর নেই, শোকে স্তব্ধ বরিশালের মিডিয়া অঙ্গন   জীবনকে বদলে দেওয়া এক গুণী মানুষকে যেভাবে হাড়িয়ে ফেললাম   যুগান্তর পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো রিপোর্টার হলেন সাংবাদিক এস এন পলাশ   কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে বরিশাল বিভাগীয় সমিতি‘র (ইপিজেড শিল্পাঞ্চল) এর প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত   বরিশালের মামুনের সফলতা হতে পারে অনেকের অনুপ্রেরণাঃ তাপস   ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার বার্ষিক শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত   নিউমুরিং এর মরহুম আবদুস সবুর সওঃ এবাদত খানার সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত